খরা কাটিয়ে ওয়ার্নারের একশতে দুইশ

টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2022, 07:58 AM
Updated : 27 Dec 2022, 07:58 AM

কত বিপরীতমুখী সব অনুভূতির খেলা মুহূর্তের মধ্যেই! ডাবল সেঞ্চুরির উদযাপনে চেনা সেই লাফ দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। মাটিতে পা রাখার সময় বিপত্তি। টান লেগে গেল পায়ে। প্রচণ্ড গরমে তার পায়ে ক্র্যাম্প করছিল আগে থেকেই। একটু আগেও যে মুখে ছিল হাসি, সেই চেহারাই কুঁকড়ে গেল যন্ত্রণায়। শেষ পর্যন্ত দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তার চোখ দিয়ে তখন ঝরছে পানি। ধারাভাষ্যে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তা ফুটিয়ে তুললেন চমৎকারভাবে, “আনন্দের কান্না, বেদনার কান্না...” 

আবেগ প্রকাশে কখনোই খুব লুকোছাপা করেন না ওয়ার্নার। আর এমন একটি দিনে তো আবেগের উথাল-পাথাল স্রোত বইবেই মনে! এই টেস্টের আগে তার ফর্ম নিয়ে কত আলোচনা-সমালোচনা! টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন পর্যন্ত উঠতে শুরু করেছিল। সবকিছুর জবাব দিলেন তিনি স্বরূপে ফিরে। মাইলফলক টেস্ট রাঙিয়ে তুললেন স্মরণীয় ব্যাটিং কীর্তিতে। শততম টেস্টে দ্বিশতক! 

ওয়ার্নারের ডাবল সেঞ্চুরি আর স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরি জুটিতে দিনটা নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিংকে পাত্তা না দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ৩ উইকেটে ৩৮৬। লিড এখনই হয়ে গেছে ১৯৭ রানের। 

এ দিন খেলা হয়েছে ৭৯ ওভার, অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ৩৪১ রান। 

২০২০ সালের জানুয়ারির পর টেস্টে আবার তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন ওয়ার্নার। ২৭ ইনিংসের খরা কাটিয়ে খেললেন ২০০ রানের ইনিংস। 

শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি টেস্ট ইতিহাসে ছিল আর কেবল জো রুটের। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ইংলিশ ব্যাটসম্যান করেছিলেন ২১৮। 

শততম ম্যাচের উপলক্ষ রঙিন করে তোলা অবশ্য ওয়ার্নারের জন্য নতুন কিছু নয়। শততম ওয়ানডেতেও তিনি করেছিলেন সেঞ্চুরি! টেস্ট-ওয়ানডে দুই সংস্করণেই ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরিতে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি আগে করতে পেরেছিলেন শুধু ক্যারিবিয়ান গ্রেট গর্ডন গ্রিনিজ।

তৃতীয় উইকেটে ওয়ার্নার ও স্মিথের জুটি ২৩৯ রানের। দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বহু লড়াইয়ের দুই সঙ্গীর দুইশ রানের জুটি এটিই প্রথম। 

প্রায় তিন বছরের সেঞ্চুরি খরাই শুধু নয়, আগের টানা ১০ ইনিংসে ফিফটি ছিল না ওয়ার্নারের। ব্যাট হাতে তাকে মনে হচ্ছিল অচেনা আর নড়বড়ে। কিন্তু এই ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি সেরা সময়ের রূপেই। দুর্দান্ত সব পুল, কাট আর ড্রাইভে ছাপ রাখেন দাপট আর কর্তৃত্বের। 

কয়েকবার অবশ্য ভাগ্যের সহায়তাও পান। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল বাউন্ডারিতে যায় তিন দফায়। আনরিক নরকিয়ার একটি গতিময় বাউন্সার তার হেলমেটে ছোবল দিয়ে চলে যায় সীমানার বাইরে। তবে সব বাধা উতরেই তিনি নাম লেখান রেকর্ড বইয়ে।

শুধু ব্যাটিং স্কিল আর দুঃসময়ের সঙ্গে লড়াইয়ের মানসিক চাপই নয়, ফিটনেসের পরীক্ষাও দিতে হয় ওয়ার্নারকে এ দিন। ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই তাপমাত্রায় দিনজুড়ে ব্যাটিং করা, তিন দফায় দৌড়েই চার রান নিয়ে সেই পরীক্ষায়ও তিনি উতরে যান। তবে প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতায় পায়ে ক্র্যাম্প করে তার কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সে কারণেই। 

১ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া ধাক্কা খায় শুরুর দিকে। মিসফিল্ডিংয়ে রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেন। 

তবে ওয়ার্নারের ব্যাটের দাপটে চাপ আড়াল হয়ে যায় দ্রুতই। স্মিথও উইকেটে নিয়ে থিতু হয়ে যান অনায়াসেই। দুজনের জুটির সামনে ব্যর্থ হয় প্রোটিয়া বোলারদের সব প্রচেষ্টা। 

লাঞ্চের একটু আগে অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮ হাজার রান পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। 

লাঞ্চের পর আরেকটি আগুনে স্পেলে ওয়ার্নার-স্মিথের পরীক্ষা নেন নরকিয়া। তার বলির গতি পেরিয়ে যায় ১৫২ কিলোমিটার। কিন্তু লাভ তাতেও হয়নি। ১৪৪ বলে ওয়ার্নার স্পর্শ করেন তার ২৫তম টেস্ট সেঞ্চুরি। স্মিথের ফিফটি আসে ১০৮ বলে। 

চা-বিরতির পর দুজনেরই ব্যাটের ধার যেন বেড়ে যায় আরও। এক পর্যায়ে ১০ ওভারে দুজন মিলে রান তোলেন ৮০! দেড়শ থেকে দুইশ পর্যন্ত যেতে ওয়ার্নারের লাগে স্রেফ ৩২ বল। 

তার ডাবল সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য ভাঙে জুটি। নরকিয়ার বেশ বাইরের বল র‌্যাম্প শটে থার্ডম্যান দিয়ে খেলতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন স্মিথ। ৮৫ রানে আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি প্রচণ্ড হতাশ হয়ে। 

ওয়ার্নার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ২৫৪ বলে। এরপরই মাঠ ছাড়েন তিনি ক্র্যাম্প নিয়ে। 

তার জায়গায় ক্রিজে গিয়ে ক্যামেরন গ্রিনও থাকতে পারেনি বেশিক্ষণ। নরকিয়ার একটি ডেলিভারি তার আঙুলে ছোবল দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। আগের দিন বল হাতে ৫ উইকেট শিকার করা অলরাউন্ডার মাঠ ছাড়েন ৬ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে। 

দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেটের দেখা পায়নি দ্বিতীয় নতুন বলেও। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ট্রাভিস হেড উইকেটে গিয়েই দারুণ সব শটে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ বলে ৪৮ রান নিয়ে। 

তৃতীয় দিনে তিনি মাঠে নামবেন ইনিংস আরও বড় করতে। হয়তো আবার ব্যাট হাতে দেখা যাবে ওয়ার্নারকেও।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৮৯ । 

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৪৫/১) ৯১ ওভারে ৩৮৬/৩ (ওয়ার্নার ২০০ আহত অবসর, খাওয়াজা ১, লাবুশেন ১৪, স্মিথ ৮৫, হেড ৪৮*, গ্রিন ৬ আহত অবসর, কেয়ারি ৯*; রাবাদা ১৮-১-৯৪-১, এনগিডি ১৫.১-২-৬২-২, ইয়ানসেন ১৬-১-৫৬-০, নরকিয়া ১৬-১-৫০-১, মহারাজ ২৫.৫-০-১০৭-০)।