অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে একশর আগেই ৬ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানরা এখনও ২২ রানে পিছিয়ে।
Published : 18 Jan 2024, 03:11 PM
ইতিহাস গড়া বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরলেন শামার জোসেফ। অভিষিক্ত এই পেসারের ছোবল সামলে একাই লড়াই করলেন ট্রাভিস হেড। তারপরও লড়াইটা একপেশে হয়ে পড়ল। হেডের চমৎকার সেঞ্চুরিতে স্বাগতিকরা লিড নেওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে ফের ধস নামালেন জশ হেইজেলউড। একশর আগে ৬ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে সফরকারীরা।
অ্যাডিলেইডে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থামে ২৮৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ৭৩ রান নিয়ে। এখনও ২২ রানে পিছিয়ে আছে তারা।
অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে ম্যাচটি যে জিততে যাচ্ছে প্যাট কামিন্সরা, বলে দেওয়াই যায়। সম্ভাবনা আছে তাদের ইনিংস ব্যবধানে জয়েরও।
সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝে বলা যায় একক নৈপুণ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ৯৫ রানের লিড এনে দেন হেড। ৩ ছক্কা ও ১২ চারে ১৩৪ বলে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান উসমান খাওয়াজার ৪৫।
অস্ট্রেলিয়াকে তিনশর আগে গুটিয়ে দেওয়ায় মূল ভূমিকা জোসেফের। ৯৪ রানে ধরেন ৫ শিকার। প্রথম ক্যারিবিয়ান বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন গায়ানার নিভৃত গ্রাম থেকে উঠে আসা ২৪ বছর বয়সী পেসার।
প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের জন্য ত্রাস হয়ে ওঠেন হেইজেলউড। প্রথম চার উইকেটই তার শিকার। অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ এই পেসারের প্রথম স্পেলটি ছিল এমন, ৬-৪-১১-৪। প্রথম ইনিংসেও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় দিনের শুরুটা অবশ্য ভালোই ছিল ক্যারিবিয়ানদের। ২ উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়া শিবিরে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানে তারা, তুলে নেয় ক্যামেরন গ্রিনের উইকেট।
খাওয়াজা ও হেড মিলে সেই ধাক্কা সামাল দেন ৪৬ রানের জুটি গড়ে। ৩০ রান নিয়ে দিন শুরু করা খাওয়াজাকে ফিরিয়ে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রিভস। ভালো কিছু করতে পারেননি মিচেল মার্শ।
১২৯ রানে ৫ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে বেশিক্ষণ টানতে পারেননি অ্যালেক্স কেয়ারি। এরপর মিচেল স্টার্ককে নিয়ে ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন হেড। তাদের ৫৪ রানের ওই যুগলে লিড নেয় স্বাগতিকরা।
স্টার্ককে ফিরিয়ে জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন শামার জোসেফ। পরে কামিন্সের সঙ্গেও জমে ওঠতে শুরু করে হেডের জুটি।
১২২ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি করা হেডের লড়াই থামান আলজারি জোসেফ। ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।
ন্যাথান লায়নকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন শামার জোসেফ। কামিন্সকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামিয়ে দেন কেমার রোচ।
হেইজেলউডের তোপে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। ১৯ রানেই হারিয়ে ফেলে তারা ৪ উইকেট। ইনিংসে নিজের প্রথম বলেই তেজনারাইন চন্দরপলকে কট বিহাইন্ড করে দেন হেইজেলউড। এই পেসারের পরের ওভারে শর্ট লেগে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ফেরান হেড।
আলিক আথানেজের পর কাভেম হজও হেইজেলউডের শিকার। এই চার ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানের কেউ করতে পারেননি ৫ রানও। শূন্যতে ফিরেছেন দুইজন।
বিপাকে পড়া সফরকারীদের হাল ধরার চেষ্টা করেন কার্ক ম্যাকেঞ্জি, ব্যক্তিগত ২৬ রান করে তিনি ফেরেন গ্রিনের বলে। আর শেষ বেলায় লায়নের বলে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে গ্রিভসকে (২৪) ফেরায় অস্ট্রেলিয়া।
ইনিংস হার এড়াতে এখন মূল দায়িত্ব জশুয়া ডা সিলভার, লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করতে হবে তাকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৮৮
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮১.১ ওভারে ২৮৩ (আগের দিন ৫৯/২) (খাওয়াজা ৪৫, গ্রিন ১৪, হেড ১১৯, মার্শ ৫, কেয়ারি ১৫, স্টার্ক ১০, কামিন্স ১২, লায়ন ২৪, হেইজেলউড ০*; রোচ ১৬.১-৫-৪৮-২, আলজারি ১৮-২-৫৫-১, শামার ২০-২-৯৪-৫, মোটি ১২-১-৪২-০, গ্রিভস ১৫-৩-৩৬-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ২২.৫ ওভারে ৭৩/৬ (ব্র্যাথওয়েট ১, চন্দরপল ০, ম্যাকেঞ্জি ২৬, আথানেজ ০, হজ ৩, গ্রিভস ২৪, ডা সিলভা ১৭*; স্টার্ক ৪-১-১৬-০, হেইজেলউড ৮-৪-১৮-৪, কামিন্স ৫-১-২৫-০, গ্রিন ৩-০-৯-১, লায়ন ২.৫-০-৪-১)