মুরাদের ৫ উইকেট, ফজলে মাহমুদের ৫ রানের আক্ষেপ

বিসিএলে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ইনিংস পরাজয়ের দুয়ারে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল, রোমাঞ্চকর সমাপ্তির অপেক্ষায় দক্ষিণাঞ্চল-উত্তরাঞ্চলের ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2022, 04:47 PM
Updated : 21 Dec 2022, 04:47 PM

গত বছরের মার্চে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হাসান মুরাদের। শুরু থেকেই সম্ভাবনার ছাপ রেখে চলা তরুণ এবার দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য এক মাইলফলকের। ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার ২০ ম্যাচেই পূর্ণ করলেন প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে একশ উইকেট। মাইলফলকের পথে পাঁচ উইকেট নিয়ে মধ্যাঞ্চলকেও এগিয়ে নিলেন জয়ের কাছে।

প্রথম ইনিংসেই মূল কাজটা সেরে ফেলেছিল বিসিবি মধ্যাঞ্চল। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে চার ফিফটিতে বড় সংগ্রহ পাওয়ার পর বোলাররাও করে চলেছেন নিজেদের কাজ। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলকে ফলো-অন করিয়ে এখন ইনিংস তারা অপেক্ষায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের।  

রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে পূর্বাঞ্চলের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৯৫ রান। ইনিংস পরাজয় এড়াতে শেষ ৪ উইকেটে তাদের করতে হবে আরও ১৬৭ রান।

মধ্যাঞ্চলের ৪৫৩ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে পূর্বাঞ্চলের ইনিংস থেমেছে স্রেফ ১৯১ রানে। ২৬২ রানের লিড পাওয়ায় প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করায় মধ্যাঞ্চল।

পূর্বাঞ্চলকে প্রথম ইনিংসে অলআউট করার মূল কারিগর বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। ১৮ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি।

৯৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ শুরু করা স্পিনার পূর্ণ করেছেন উইকেটের সেঞ্চুরি। ম্যাচ ২০টি হলেও তিনি বল করতে পেরেছেন ৩৩ ইনিংস। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বাস্তবতায় এই এগিয়ে চলা দুর্দান্তই বটে। ২০ ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট হয়ে গেল তার ১০ বার।

আগের দিন ৬ উইকেটে ১২৫ রান নিয়ে বুধবারের খেলা শুরু করে পূর্বাঞ্চল। তৃতীয় দিন শেষ ৪ উইকেটে আর ৬৬ রান যোগ করে তারা। নাঈম হাসান একপ্রান্ত আগলে রেখে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তার ৩৫ রানের ইনিংসে দুইশ ছুঁইছুঁই স্কোর পায় পূর্বাঞ্চল।

মুরাদের ৫ উইকেট ছাড়া তরুণ পেসার মুশফিক হাসান ও অফ স্পিনার শরিফউল্লাহর শিকার ২টি করে উইকেট।

ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও বদলায়নি পূর্বাঞ্চলের ব্যাটসম্যানদের হতাশার চিত্র। দলীয় চল্লিশের আগেই ড্রেসিংরুমে ফেরেন নাঈম শেখ, পারভেজ হোসেন ইমন, জহুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আশরাফুল।

পঞ্চম উইকেটে ধাক্কা সামাল দেওয়ার আভাস দেন প্রীতম কুমার ও শাহাদাত হোসেন দীপু। তবে এ জুটিকে বড় হতে দেননি রবিউল হক। দুজনকেই ফেরান ২৩ বছর বয়সী পেসার। দিনের শেষ ভাগে আর বিপদ ঘটতে দেননি জিয়াউর রহমান ও নাঈম হাসান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট পেয়েছেন রবিউল। প্রথম ইনিংসের ৫টির সঙ্গে মুরাদের ঝুলিতে জমা পড়েছে আরও ২ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)

বিসিবি মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৪৫৩

ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৮৮.৩ ওভারে ১৯১ (আগের দিন ১২৫/৬) (প্রীতম ১২, নাঈম ৩৫, তানভির ১৪, এনামুল ২, রিপন ০*; রবিউল ১৭-৬-৪৪-০, মুশফিক ২০-৪-৫২-২, আরিফুল ৩-২-১২-০, শুভাগত ১২.৩-৬-১২-১, সৌম্য ৯-৪-২৫-০, শরিফউল্লাহ ৯-৪-২২-২, মুরাদ ১৮-১১-১৯-৫)

ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ২য় ইনিংস: (ফলো-অন) ৪১ ওভারে ৯৫/৬ (জহুরুল ১৩, নাঈম শেখ ৯, পারভেজ ৯, শাহাদাত ১৬, আশরাফুল ১, প্রীতম ২৬, জিয়াউর ১০*, নাঈম হাসান ৬*; মুশফিক ৪-৩-৭-০, মুরাদ ১৯-৮-৪০-২, রবিউল ১০-৩-৩৩-৪, সৌম্য ৫-৩-৮-০, শরিফউল্লাহ ২-১-২-০, শুভাগত ১-১-০-০)

বগুড়ায় শেষ দিনের রোমাঞ্চের আভাস

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে জমে উঠেছে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল ও বিসিবি উত্তরাঞ্চলের মধ্যকার লড়াই। প্রায় তৃতীয় তিন শেষে প্রায় সমতায় দুই দল। শেষ দিনে জয়ের জন্য উত্তরাঞ্চলের প্রয়োজন ২৬১ রান। দক্ষিণাঞ্চলকে নিতে হবে ৮ উইকেট।

তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরাঞ্চলের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১২০ রান। প্রথম ইনিংসে তারা গুটিয়ে যায় স্রেফ ১১১ রান। ১১১ রানের লিড পায় প্রথম ইনিংসে ২২২ রান করা দক্ষিণাঞ্চল।

দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণাঞ্চল অলআউট হয় ২৬৯ রানে। প্রথমবারের লিডসহ উত্তরাঞ্চলের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৮১ রানের।

২ উইকেটে ৯০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে দক্ষিণাঞ্চল। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিকে ১০৯ রানে নিয়ে যান পিনাক ঘোষ ও ফজলে মাহমুদ। দুজনই করেন ফিফটি। কিন্তু সেঞ্চুরিতে যেতে পারেননি কেউই।

সালাউদ্দিন শাকিলের বলে বোল্ড হন ৬৬ রান করা পিনাক। চতুর্থ উইকেটে মার্শাল আইয়ুবকে নিয়ে ফের দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক ফজলে মাহমুদ।

কিন্তু সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে নাহিদ রানার আচমকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে সময়মতো সরতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা আকবর আলির হাতে। সমাপ্তি ঘটে ১১ চারে খেলা ৯৫ রানের ইনিংসের।

তরুণ নাহিদের ঠিক পরের বলে প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে পরাস্ত হন প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করা ইরফান শুক্কুর।

এরপর মার্শাল ও নাহিদুল ইসলামের দুটি মাঝারি ইনিংসে আড়াইশ পেরোয় দক্ষিণাঞ্চলের সংগ্রহ।

বাঁহাতি স্পিনে ৪ উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট পাওয়া নাহিদের শিকার ৩ উইকেট।

রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ঝেরে ফেলেন উত্তরাঞ্চলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা। উদ্বোধনী জুটিতে ৭২ রান যোগ করেন অমিত মজুমদার ও তৌফিক খান তুষার। ১৮তম ওভারে ব্রেক থ্রু দেন হাসান মাহমুদ। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরা তৌফিক খেলেন ৯ চারে ৫০ রানের ইনিংস।

অল্পের জন্য ফিফটি করতে পারেননি অমিত। দিনের প্রায় শেষ দিকে আব্দুল হালিমের বলে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ৪৫ রান করে আউট হন বাঁহাতি ওপেনার।

দিনের বাকি অংশ নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন তানজিদ হাসান তামিম ও সানজামুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২২২

বিসিবি উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১১১

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল ২য় ইনিংস: ৭৩.২ ওভারে ২৬৯ (আগের দিন ৯০/২) (পিনাক ৬৬, ফজলে রাব্বি ৯৫, মার্শাল ৩০, ইরফান ০, নাহিদুল ৩৯, সুমন ১, নাজমুল ৬, হালিম ০, হাসান ০*; সালাউদ্দিন ১২-১-৫০-১, নাহিদ ১৮-১-৮১-৩, সানজামুল ১৯.২-৫-৫৩-৪, সাইফ উদ্দিন ৯-২-২১-১, নাসির ১২-২-৪২-১, আমিনুল ৩-০-১২-০)

বিসিবি উত্তরাঞ্চল দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৮১ রান) ৩৩.৩ ওভারে ১২০/২ (অমিত ৪৫, তৌফিক ৫০, তানজিদ ২১*, সানজামুল ০*; সুমন ৬-২-১৪-০, হালিম ৭.৩-০-১৬-১, নাজমুল ৭-০-৩৮-০, হাসান ৮-১-১৪-১, নাহিদুল ৫-২-১৪-০)।