টানা দুই ম্যাচে একশ ছুঁতে ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটাররা, টানা দুই জয়ে সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার।
Published : 24 Mar 2024, 01:57 PM
টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা বললেন, ব্যাটারদের চাপমুক্ত থেকে খেলার সুযোগ দিতে আগে ব্যাট করবেন তারা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নামার পর দেখা গেল, তাদর ওপর বিষম ভার যে চেপে আছে আগে থেকেই! অধিনায়কের লক্ষ্য ছিল ২২০ রানের আশেপাশে স্কোর। কিন্তু আরও একবার তারা ব্যর্থ একশ ছুঁতেই। এমন ব্যাটিং করে তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের চাপে ফেলা যায় না। আরেকটি অনায়াস জয়ে সিরিজও নিশ্চিত করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া।
আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে রোববার বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারাল অস্ট্রেলিয়া। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতেই তারা জিতে নিল সিরিজ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট যথারীতি ছিল মন্থর ও অসম বাউন্সের। বল টার্নও করেছে অনেকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার যদিও বললেন, উইকেট বেশ ভালো। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিও বললেন, আগের ম্যাচের চেয়ে উইকেট ভালো। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সেটির প্রমাণ নেই।
আগের ম্যাচের চেয়ে অবশ্য কিছুটা উন্নতি করল বাংলাদেশ। তবে সেই উন্নতি কেবল দুই রানের! সেদিন ৯৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল এবার ৪৪.১ ওভার খেলে করতে পারল ৯৭।
নয়ে নামা নাহিদা আক্তারের ২২ রান দলের সর্বোচ্চ। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন আর কেবল দুজন ব্যাটার। কোনো জুটিতে রান আসেনি ২৫ রানের বেশি। টপ অর্ডারের মূল ভরসা যিনি, সেই ফারজানা হক ৫২ বল খেলে করেন কেবল ৭ রান!
অতি সাবধানী ব্যাটিংয়ের পর ডানা মেলতে পারেননি কোনো ব্যাটারই।
অস্ট্রেলিয়ান স্পিনাররা যথারীতি ছিলেন দুর্দান্ত। উইকেট বুঝে পেসার এতজন কমিয়ে এ দিন আরও একজন স্পিনার যোগ করা হয় একাদশে। দলে ফেরা সেই বাঁহাতি স্পিনার সোফি মলিনিউ ১০ ওভারে স্রেফ ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা। অফ স্পিনার অ্যাশলি গার্ডনার ও দুই লেগ স্পিনার অ্যালানা কিং ও জর্জিয়া ওয়্যারহ্যামের শিবার দুটি করে উইকেট।
দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার মেগান শুট তার কাজ করেন ঠিকভাবেই (৬-২-৭-১)।
অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়া খুব মসৃণ ছিল না। তবে খুব চাপে তাদের পড়তে হয়নি। জিতে যায় তারা ২৩.৫ ওভারেই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতে শুধু মনোযোগ দেয় উইকেট আঁকড়ে রাখায়। সেই চেষ্টায় শুরুতে সফল হন ফারজানা হক ও সোবহানা মোস্তারি। কিন্তু কিছু হলেও তো রান করতে হবে! সেখানে একদমই নিষ্ক্রিয় থাকেন দুজনই। প্রথম আট ওভারে উইকেট না পড়লেও রান আসে কেবল ১৭।
পরেও পুষিয়ে দিতে পারেননি দুজনের কেউ। নবম ওভারে সোবহানা আউট হন ২০ বলে ৩ রান করে।
অভিজ্ঞ ফারজানার অবস্থা ছিল আরও নাজুক। বল খেলার যখন ফিফটি হলো তার, রান কেবল ৭!
বাংলাদেশের হয়ে দুটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা ব্যাটার শেষ পর্যন্ত থমকে যান ওখানেই। সোফি মলিনিউকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৫২ বলে ৭ করে।
এরপর একই ধারা চলতে থাকে। মুর্শিদা খাতুন ফেরেন ২৪ বলে ৫ করে। দলকে আরও বিপদে ঠেলে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফেরেন কেবল ১ রান করেই।
২৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কিছুটা ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন রিতু মনি ও ফাহিমা খাতুন। ১৯তম ওভারে প্রথমবার বল সীমানা স্পর্শ করে। তবে তা অ্যাশলি গার্ডনারের ওয়াইড থেকে ওই বাউন্ডারি আসে ‘বাই’ থেকে।
ব্যাট থেকে প্রথম বাউন্ডারি আসে ২০তম ওভারে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মলিনিউকে উড়িয়ে মারেন ফাহিমা। পরে অ্যালানা কিংকে সুইপ করে চার মারেন রিতু মনি।
তবে এই জুটিও লম্বা হয়নি। মলিনিউকে সুইপ খেলেই ক্যাচ দেন রিতু (১০)। কিংয়ের বলে স্লগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন ফাহিমা (১১)। এই জুটির ২৫ রানই তবু দলের সেরা।
স্বর্ণা আক্তার ১৬ বল খেলে প্রথম রানের দেখা পেয়ে বিদায় নেন ২ রান করে।
প্রতিরোধ যা একটু গড়তে পারেন নাহিদা। ৭৭ রানে ৯ উইকেট হারানো দলকে একশর কাছে নিয়ে যান তিনি। শেষ ব্যাটার মারুফা আক্তারের ব্যাট থেকে আসে দুটি বাউন্ডারি। শেষ জুটিতে আসে ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান।
নাহিদার বিদায়েই শেষ হয় ইনিংস। টানা দুই ম্যাচে একশ ছুঁতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়ার শুরুটা ছিল বাংলাদেশের উল্টো। তারা চেষ্টা করেছে ইতিবাচক থেকে রান তুলতে। ওপেনার ফিবি লিচফিল্ড যদিও রান আউট হয়ে যান ৫ রান করে। তবে অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি কিছু শট খেলে রান বাড়ান। নাহিদা আক্তারকে রিভার্স সুইপে চার মারেন তিনি।
৩৪তম জন্মদিনে নিজের ইনিংস অবশ্য বড় করতে পারেননি হিলি। রাবেয়া খানের লেগ স্পিন উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি আউট হন ১৫ রানে।
মারুফা আক্তারকে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া বেথ মুনি ফেরেন মাত্র ৮ রানেই। তবে লক্ষ্য ছোট ছিল বলেই চাপে পড়তে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। অ্যালিস পেরি একপ্রান্ত থেকে ভরসা জুগিয়ে এগিয়ে নেন দলকে।
নিগারের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে তাহলিয়া ম্যাকগ্রা থামেন ১০ রানে। তবে অ্যাশলি গার্ডনার নেমে দ্রুত রান তুলে ম্যাচ শেষ করে দেন পেরির সঙ্গে।
৫০ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ পেরি, ২৩ বলে ২০ রানে গার্ডনার।
সিরিজের শেষ ম্যাচ বুধবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৪.১ ওভারে ৯৭ (ফারজানা ৭, সোবহানা ৩, মুর্শিদা ৫, নিগার ১, ফাহিমা ১১, রিতু ১০, স্বর্ণা ২, রাবেয়া ৩, নাহিদা ২২, সুলতানা ৫, মারুফ ৮*; শুট ৬-২-৭-১, পেরি ৩-০-১১-০, মলিনিউ ১০-৫-১০-৩, গার্ডনার ১০-০-২২-২, কিং ৬.১-২-১৫-২, ওয়্যারহ্যাম ৯-২-৩০-২)।
অস্ট্রেলিয়া: ২৩.৫ ওভারে ৯৮/৪ (হিলি ১৫, লিচফিল্ড ৫, পেরি ৩৫*, মুনি ৮, ম্যাকগ্রা ১০, গার্ডনার ২০*; নাহিদা ৮-২-১৯-০, সুলতানা ৫-০-২৩-১, রাবেয়া ৭-০-২৫-১, স্বর্ণা ২.৫-০-১৯-০, ফাহিমা ১-০-৯-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: সোফি মলিনিউ।