খেলা না দেখে থাকলে, সাড়ে তিনশ ছাড়ানো স্কোর দেখে বোঝা কঠিন, এক সময় ভারতের রান ছিল ২২ ওভারে ৪ উইকেটে ১০২। ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডার এভাবেই ভেঙে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রথম চার জন - মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও রুবেল হোসেন।
পেসারদের সেই ধার ছিল না স্পিনারদের বোলিংয়ে। পরে তাই রান এসেছে বানের জলের মতো। প্রস্তুতি ম্যাচ বলে স্পিনারদেরই চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ দিকে ওই চার পেসারের দুজনকে ফেরানো হয়েছিল। তবে ১০ ওভার বোলিং করেননি কেউ। প্রথম স্পেলের পর আর বোলিংয়ে আসেননি দুই জন। হয়তো যা হয়েছে তাতেই পেসারদের প্রস্তুতি যথেষ্ট মনে করেছেন অধিনায়ক।
যথেষ্ট মনে করার কারণও আছে যথেষ্টই। প্রস্তুতি ম্যাচেও ভারতের টপ অর্ডারে ছিলেন সম্ভাব্য সেরা ব্যাটসম্যানরাই। তাদের বিপক্ষে মুস্তাফিজ ও মাশরাফির প্রথম স্পেল ছিল দুর্দান্ত। কন্ডিশন অবশ্য তখন ছিল খানিকটা পেস সহায়ক। মুস্তাফিজ ও মাশরাফি কাজে লাগিয়েছেন দারুণ লাইন-লেংথে বোলিং করে।
মুস্তাফিজের বোলিংয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল গতি। একসময় নিয়মিতই ১৪০ কিলোমিটার স্পর্শ করতেন, তাতে তার কার্যকারিতা ছিল বেশি। কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর সেই গতি দেখা গেছে কদাচিৎ। এ দিন শুরু থেকেই ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন।
উইকেট পাওয়া ছাড়াও তার লাইন-লেংথ ছিল বেশ ভালো। বাঁহাতির অ্যাঙ্গেল কাজে লাগিয়েছেন বেশ। পেয়েছেন খানিকটা সুইংও।
হ্যামিস্ট্রংয়ের চোটে খেলা নিয়ে সংশয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাশরাফি শুধু খেলেননি, ৬ ওভারের স্পেল করেছেন। শুরু করেছিলেন প্রথম দুই ওভারই মেডেন নিয়ে। আঁটসাঁট লাইন-লেংথে ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিলেন উইকেটে। নিজে উইকেট অবশ্য পাননি, তবে ধরে রেখেছিলেন চাপ।
শুরুর চাপ থেকেই পরে মিলেছে উইকেট। মাশরাফি-মুস্তাফিজের বোলিংয়ে এ দিন একটুও স্বস্তিতে ছিলেন না ওয়ানডেতে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মা। মাঝ ব্যাটে খেলতেই ধুঁকছিলেন। এরপরও টিকে যান কোনোরকমে। কিন্তু নিজের প্রথম ওভারেই তাকে ফেরান রুবেল হোসেন।
মাঝের ওভারগুলোয় কেন রুবেল দলের অন্যতম সেরা উইকেটশিকারী, সেটি দেখিয়েছেন এই ম্যাচেও। লাইন-লেংথ খুব ধারাবাহিক ছিল না, একটু খরুচেও ছিলেন। তবে আগ্রাসী বোলারদের ক্ষেত্রে সেটি বোধগম্যই। আগের মতো গতি না থাকলেও এ দিন কয়েকবারই স্পর্শ করেছেন ১৪০ কিলোমিটার। আলগা বল যেমন দিয়েছেন, তেমনি উইকেট নেওয়ার মতো বলও বেরিয়েছে তার হাত থেকে। তেমনই একটি বলে বিদায় করেছেন বিজয় শঙ্করকে।
তবে তিন পেসার খেললে রুবেলের জায়গা পাওয়া যে সহজ হবে না, সেটি নিশ্চিত করে রেখেছেন সাইফ। তার কাজটুকু করেছেন তিনি দারুণভাবেই। লাইন-লেংথ ছিল ভালো, ছোট ছোট সুইং মিলেছে। আচমকা বাউন্সার বা ইয়র্কারে চমকে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। থিতু হয়ে যাওয়া বিরাট কোহলিকে বোল্ড করেছেন দারুণ এক ইয়র্কারে। সন্তুষ্ট হয়েই হয়তো প্রথম স্পেলের পর তাকে আর বোলিংয়ে আনা হয়নি।
চার পেসারের সৌজন্যে সেই শুরু পরে আর ধরে রাখা যায়নি। তবে দলের প্রাপ্তি হয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতলেও নতুন বলে পেসার বোলিং ছিল দুর্ভাবনার। এই ম্যাচের পারফরম্যান্স স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিতে পারে।