ভিরাট কোহলির অপরাজিত সেঞ্চুরিতে টানা চতুর্থ জয় পেল ভারত
Published : 19 Oct 2023, 01:54 PM
আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও হতশ্রী প্রদর্শনীতে দুই ম্যাচেই মিলেছে বড় পরাজয়।
হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে বাংলাদেশের সামনে এবার ভারত। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। খেলা শুরু দুপুর আড়াইটায়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে বাংলাদেশ। চার ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে তারা। তবে ২০০৭ সালের পর বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয় নেই সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের।
বিশ্ব আসরে এই পরিসংখ্যানে বদল আনার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের কাজ সহজ করতে পারে পুনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেট। অবশ্য এতে থাকছে ছন্দে থাকা ভারতের রান পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কাও।
সেই ভাবনায়ই একাদশে পরিবর্তন এনে বোলিংয়ে শক্তি বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। আর টানা তিন জয়ে আসর শুরু করা স্বাগতিকরা দিয়েছে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে নামার বার্তা।
বিশ্বকাপের এক ম্যাচ পর ফের টস জিতল বাংলাদেশ। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
গত ম্যাচে পাওয়া ঊরুর পেশির চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ম্যাচটি খেলতে পারছেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহ-অধিনায়ক শান্ত।
ভারত অধিনায়ক রোহিত শার্মা বলেছেন, টস জিতলে তিনি আগে ফিল্ডিংই করতেন। তাই টসের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই।
চোটের কাছে হার মেনেছেন সাকিব আল হাসান। এছাড়া একাদশের বাইরে রাখা হয়েছে তাসকিন আহমেদকে।
ভারতের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও পেসার হাসান মাহমুদ। বিশ্বকাপে দুজনেরই এটি প্রথম ম্যাচ।
সাকিবকে পরিবর্তনে নাসুমকে নেওয়ায় বোলারের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও একাদশে ব্যাটসম্যান কমল একজন।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহিদ হৃদয়, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিদ হাসান, মাহমুদউল্লাহ, নাসুম আহমেদ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতা ম্যাচের একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি ভারত। তিন পেসার, দুই স্পিনার ও এক পেস অলরাউন্ডার নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে নামছে তারা।
ভারত একাদশ: রোহিত শার্মা (অধিনায়ক), শুবমান গিল, ভিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুর, কুলদিপ ইয়াদাভ, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ।
সাকিব আল হাসানের চোটে প্রথমবার বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া ষষ্ঠ অধিনায়ক তিনি।
তার আগে আমিনুল ইসলাম, খালেদ মাসুদ, হাবিবুল বাশার, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে অনুভূতি প্রকাশ করে শান্ত বলেছেন, 'আমার জন্য ও আমার পরিবারের জন্য এটি খুব গর্বের মুহূর্ত।'
বিশ্বকাপের আগে স্রেফ একটি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা হয়েছে শান্তর।
জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে সাবধানী শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে স্রেফ ১০ রান। তবে কোনো উইকেট হারায়নি তারা।
দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের বলে কিছুটা তুলে কভার ড্রাইভে চার মারেন তানজিদ হাসান। প্রথম পাঁচ ওভারে বাউন্ডারি এই একটিই।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে জাসপ্রিত বুমরাহর ইয়র্কার লেংথ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হতে পারতেন তানজিদ। বুঝতে পারেননি ভারতের ফিল্ডাররা। ফলে রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে যান বাঁহাতি ওপেনার। সে সময় ৭ রানে ছিলেন তিনি।
একের পর এক ডট খেলছিলেন লিটন দাস। তিনি রানের খাতা খোলেন ১৪তম বলে!
তানজিদ ১৬ বলে ৯ এবং লিটন ১৪ বলে ১ রানে খেলছেন।
২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক সাকিব আল হাসানের। প্রায় ১৬ বছর পর ভারতের সঙ্গে আরেকটি ম্যাচেই চোটের কারণে দলের বাইরে বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাঝের ১৬ বছরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবকটি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। সবশেষ ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে সাকিবকে ছাড়া কোনো ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তখনও অভিষেকই হয়নি বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডারের।
বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই অ্যাঙ্কেলে চোট পেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। নবম ওভারের তৃতীয় বলে তাকে স্ট্রেইট ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন লিটন দাস। ওই বলে ফলো থ্রুতে মচকে যায় পান্ডিয়ার অ্যাঙ্কেল।
বেশ কিছুক্ষণ মাঠেই শুশ্রূষা দেওয়া হয় পান্ডিয়াকে। পরে বোলিংয়ের জন্য উঠেও দাঁড়ান তিনি। কিন্তু ব্যথার তীব্রতা অনুভব করায় বোলিং না করে বেরিয়ে যান তিনি। তখন কাছেই থাকা ভিরাট কোহলি বাকি তিন বল করার জন্য এগিয়ে আসেন।
ওয়ানডেতে সবশেষ ২০১৭ সালের অগাস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোলিং করেছিলেন কোহলি। ওই ওভারের তিন বলে ২ রান দিয়েছেন তিনি।
অতি সাবধানী শুরুর পর রানের গতি বাড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের চলতি আসরে প্রথমবারের মতো পাওয়ার প্লে কাটিয়ে দিয়েছে শুরুর জুটিতেই।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৬৩। প্রথম ৫ ওভারে তুলেছিল কেবল ১০ রান!
চলতি আসরে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৯ ছিল আগের সেরা।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে তিন ছক্কা ও চারটি চারে ৪০ রানে খেলছেন তানজিদ হাসান। ওয়ানডেতে এটাই তার সর্বোচ্চ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার করেছিলেন ১৬।
সাবধানী ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ২১ রানে খেলছেন লিটন দাস। ১৪তম বলে রানের খাতা খোলা এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান মেরেছেন চারটি চার।
৬ ম্যাচ পর উইকেটবিহীন পাওয়ার প্লে কাটাল বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে এলো ৫০ রানের জুটি।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে দীর্ঘ ২৪ বছর পুরোনো রেকর্ড নিজেদের করে নিলেন লিটন দাস, তানজিদ হাসান। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির মালিক এখন তারা।
১৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮২ রান।
বিশ্বকাপে এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল ৬৯ রান। ১৯৯৯ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানে জেতা ম্যাচে প্রথম উইকেটে এই জুটি গড়েন মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেন।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েছেন লিটন ও তানজিদ। লিটন ৪১ বলে ৩৫ ও তানজিদ ৩৭ বলে ৪৪ রানে খেলছেন।
প্রথম তিন ম্যাচে রান পাওয়ায় চাপের মুখে ছিলেন তানজিদ হাসান। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে সব যেন উড়িযে দিলেন তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার।
ভারতের বিপক্ষে ৪১ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তানজিদ। ওয়ানডেতে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল কেবল ১৬।
এই সময়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে তিনটি ছক্কা ও পাঁচটি চার।
প্রথম তিন ম্যাচে রান পাননি তানজিদ। এনে দিতে পারেননি ভালো শুরু। ভারতের বিপক্ষে দারুণ সব শটের পসরা মেলে তিনিই সচল রেখেছেন রানের চাকা।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৯০। ৪১ বলে ৫০ রানে খেলছেন তানজিদ। ৪৩ বলে পাঁচ চারে লিটন দাসের রান ৩৭।
বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভ ভাঙলেন বাংলাদেশের শুরুর জুটি। দলকে ভালো সূচনা এনে দিয়ে ফিরে গেলেন তানজিদ হাসান।
সুইপের চেষ্টায় সফল হননি তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার। কুলদিপের একটু দ্রুত গতির বলের লাইন মিস করে হয়ে যান এলবিডব্লিউ। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর লিটন দাসের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ না নিয়ে ফিরে যান তানজিদ। ভাঙে ৮৮ বল স্থায়ী ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।
৪৩ বলে তিন ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫১ রান করেন তানজিদ।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৯৪। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
তানজিদ হাসানের বিদায়ের পর রানের গতিতে বেশ ভাটা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের রান রেট নেমে গেছে ছয়ের নিচে। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি গড়ে তোলার চেষ্টার মধ্যেই একশ স্পর্শ করেছে দলের রান।
১৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ১০৩। ১৩ বলে ৫ রানে খেলছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত। ৫২ বলে ওপেনার লিটনের রান ৪৪।
নবম ওভার অসমাপ্ত রেখে মাঠ ছাড়া হার্দিক পান্ডিয়াকে বোলিং আর পাচ্ছে না ভারত। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ম্যাচে আর ফিল্ডিং করবেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
বিশ্বকাপে নেতৃত্বের অভিষেকে ভালো করতে পারলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেন কম রানেই।
বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা বল পিছিয়ে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন শান্ত। একটু ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর ফিরে যান রিভিউ না নিয়েই। ভাঙে ৩২ বল স্থায়ী ১৭ রানের জুটি।
২০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১১০। ৬০ বলে ৪৮ রানে খেলছেন লিটন দাস। ক্রিজে তার সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরুটা হয়েছিল ভীষণ মন্থর। ডট খেলেছিলেন প্রথম ১৩ বল। এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়াচ্ছেন লিটন দাস।
কুলদিপ ইয়াদাভের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৬২ বলে ডানহাতি এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। চলতি আসরে যা তার দ্বিতীয়।
২১ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১১৩। ৬২ বলে ৫০ রানে খেলছেন লিটন। ৪ বলে ১ রানে ব্যাট করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এক প্রান্তে অবিচল লিটন দাস। আরেক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশ। উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুলের দারুণ ক্যাচে ফিরে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
মোহাম্মদ সিরাজের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল কিপারের পাশ দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন মিরাজ। ব্যাটের কানায় লেগে পাশ দিয়ে চলেই যাচ্ছিল। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ রিফ্লেক্সে চমৎকার ক্যাচ নেন রাহুল। ভাঙে ২৫ বল স্থায়ী ১৯ রানের জুটি।
১৩ বলে মিরাজ করেন ৩ রান।
২৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৩১। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী তাওহিদ হৃদয়। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পাঁচে নেমেছেন তিনি।
কঠিন সময় পার করে দিয়ে অনায়াস ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস। রবীন্দ্র জাদেজাকে তুলে মেরে নিজের উইকেট ছুড়ে এলেন তিনি। চাপে পড়ে গেল বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী জুটির পর আর কোনো জুটি গড়তে পারছে না বাংলাদেশ। এক সময় ছয়ের উপরে থাকা রান রেট নেমে গেছে পাঁচের নিচে।
ভারতীয় বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের গতিতে ভাটার টান হয়তো প্রভাব ফেলেছিল লিটনের ব্যাটিংয়ে। জাদেজার বলে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় তিনি ধরা পড়লেন সীমানায়। ভাঙল ২১ বল স্থায়ী ৮ রানের জুটি।
২৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৩৮। ক্রিজে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম জন বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
৩০ ওভার বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৪৩। ১৭ বলে ৭ রানে খেলছেন তাওহিদ হৃদয়। মুশফিকের রান ৮ বলে।
অনেকটা সময় পেয়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু থিতু হতে পারেননি উইকেটে। টাইমিং করতে পারছিলেন না একদমই, আউটও হলেন তেমনই এক শটে।
শার্দুল ঠাকুরের বল লেগে ঘুরিয়ে বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু ঠিক মতো খেলতে পারেননি তিনি। শর্ট মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন শুবমান গিল। ভাঙে ৫৮ বল স্থায়ী ৪২ রানের জুটি।
১৬ রান করতে ৩৫ বল খেলেন হৃদয়। ইনিংসে নেই কোনো বাউন্ডারি।
৩৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৮১। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।
শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলা মুশফিকুর রহিম বিদায় নিলেন রবীন্দ্র জাদেজার দারুণ ক্যাচে।
জাসপ্রিত বুমরাহর স্লোয়ারে কাট করে চার মারতে চেয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু পার করতে পারেননি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ফিল্ডারকে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে চমৎকার এক ক্যাচ নেন জাদেজা। ভাঙে ৩১ বল স্থায়ী ২২ রানের জুটি।
৪৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২০১। ক্রিজে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী নাসুম আহমেদ।
মোহাম্মদ সিরাজকে চার বলের মধ্যে দুটি চার মারার পর আরেকটি বড় শটের চেষ্টায় ফিরলেন নাসুম আহমেদ। বাংলাদেশ হারাল সপ্তম উইকেট।
সিরাজের শর্ট বল সরে গিয়ে সজোরে মারতে চেয়েছিলেন নাসুম। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে। ভাঙে ২৬ বল স্থায়ী ৩২ রানের জুটি।
দুই চারে ১৮ বলে নাসুম করেন ১৪।
৪৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ২৩৩। ক্রিজে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী মুস্তাফিজুর রহমান।
শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহকে পঞ্চাশের আগেই ফেরালেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বাংলাদেশও থমকে গেল আড়াইশ পেরিয়েই।
সাতে নেমে ৩৬ বলে তিনটি করে ছক্কা ও ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। বড় শটের সন্ধানে থাকা অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন বুমরাহ।
ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে ২৫৬ রানে নিয়ে যান শরিফুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮ (তানজিদ ৫১, লিটন ৬৬, শান্ত ৮, মিরাজ ৩, হৃদয় ১৬, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৬, নাসুম ১৪, মুস্তাফিজ ১*, শরিফুল ৭*; বুমরাহ ১০-১-৪১-২, সিরাজ ১০-০-৬০-২, পান্ডিয়া ০.৩-০-৮-০, কোহলি ০.৩-০-২-০, শার্দুল ৯-০-৫৯-১, কুলদিপ ১০-০-৪৭-১, জাদেজা ১০-০-৩৮-২)
কী দারুণ শুরুই না এনে দিয়েছিলেন তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। তবে বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের সেরা উদ্বোধনী জুটির পরও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
পঞ্চাশ ছুঁয়েই বিদায় নেন তানজিদ, বেশিদূর যেতে পারেননি লিটনও। দৃঢ় ভিত কাজে লাগাতে পারেননি তিন তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয়।
ইনিংস মেরামতের কাজ মোটামুটি করলেও রানের গতিতে দম দেওয়ার মুহূর্তে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। শেষ দিকে দলকে আড়াইশ রানে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ১৫তম ওভারে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল বিনা উইকেটে ৯৩। সেখান থেকে বাংলাদেশ কোনোমতে আড়াইশ পেরিয়ে থামে ২৫৬ রানে।
পেসারদের প্রথম তিন ওভারে এলো ২৬ রান। রোহিত শার্মা ও শুবমান গিল মিলে মারলেন একটি ছক্কা ও চারটি চার। তাই দ্রুতই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
চতুর্থ ওভারে আক্রমণে আসেন নাসুম আহমেদ। প্রথম ওভারে বেশ ভালোই করেন বাঁহাতি স্পিনার। দ্বিতীয় বলে গিলের বিরুদ্ধ করেন এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন। শেষ বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হতে হতে বেঁচে যান গিল!
৪ ওভারে ভারতের রান বিনা উইকেটে ২৮।
বাংলাদেশের মতো ভালো শুরু পেয়েছে ভারত। রোহিত শার্মা ও শুবমান গিলের জুটিতে পঞ্চাশ এসেছে ৫৪ বলে।
৯ ওভারে ভারতের রান বিনা উইকেটে ৫০। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছেন রোহিত। ভারত অধিনায়ক ৩৩ বলে খেলছেন ৩৭ রানে। ২১ বলে গিলের রান ১৩।
শর্ট বলে ছক্কা হজম করলেও হাল ছাড়েননি হাসান মাহমুদ। আরেকটি স্লোয়ারে ঠিকই সাফল্য পেলেন। রোহিত শার্মাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিলেন প্রথম উইকেট।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে ছক্কা মেরেছিলেন রোহিত। পরের বলও শর্টই করেন হাসান। এবার ঠিক মতো টাইমিং করতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। সীমানায় ক্যাচ নেন তাওহিদ হৃদয়। ভাঙে ৭৬ বল স্থায়ী ৮৮ রানের জুটি।
৪০ বলে দুই ছক্কা ও সাত চারে ৪৮ রান করেন রোহিত।
ক্রিজে গিয়েই পরপর দুটি ‘নো’ বল পেয়ে যান ভিরাট কোহলি। হাসানের উপহার কাজে লাগিয়ে মারেন চার ও ছক্কা। তাতে ১৩ ওভারেই একশ স্পর্শ করে ভারতের রান।
১৩ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১০৩। ৩৬ বলে ৪০ রানে ব্যাট করছেন শুবমান গিল। ৪ বলে কোহলির রান ১৩।
চলতি বছর ওয়ানডেতে দারুণ ছন্দে থাকা শুবমান গিল স্পর্শ করলেন আরেকটি ফিফটি, ৫২ বলে।
ডেঙ্গুর জন্য দলের প্রথম দুটি ম্যাচে খেলতে পারেননি এই ওপেনার। পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে হয় তার বিশ্বকাপ অভিষেক। সেই ম্যাচে থেমে যান ১৬ রান করেই।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করা গিল এবারও দাঁড়িয়ে গেছেন। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পথে মেরেছেন দুটি ছক্কা ও পাঁচটি চার।
১৯ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ১৩০। ৫৩ বলে ৫১ রানে খেলছেন গিল। ২৩ বলে ভিরাট কোহলির রান ২৯।
মেহেদী হাসান মিরাজের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি কিছুটা জায়গা করে উড়িয়ে মারলেন শুবমান গিল। অল্পের জন্য ছক্কা পাননি। ডিপ মিড উইকেট সীমানায় লাফিয়ে উঠে চমৎকার ক্যাচে তার বিদায়ঘণ্টা বাজালেন মাহমুদউল্লাহ।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ বলে ৫৩ রান করে ফিরেছেন গিল। চার নম্বরে নেমেছেন শ্রেয়াস আইয়ার।
২০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৪২ রান। বাকি ৩০ ওভারে তাদের করতে হবে আর ১১৫ রান। ২৫ বলে ৩৪ রানে খেলছেন ভিরাট কোহলি।
ক্রিজে গিয়েই পেয়েছিলেন দুটি ‘নো’ বল। দুটি ফ্রি হিট কাজে লাগিয়ে শুরুটা করেছিলেন উড়ন্ত। ভালো শুরুর পর স্রেফ ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভিরাট কোহলি। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ছুঁয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৯তম ফিফটি, ৪৮ বলে।
বাংলাদেশের পেস কিংবা স্পিন কিছুই ভাবাতে পারছে না কোহলিকে। অনায়াসেই আসছে রান। শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে জুটিতে দলকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন জয়ের দিকে।
২৭ ওভারে ভারতের রান ২ উইকেটে ১৭১। ২১ বলে ১৮ রানে খেলছেন আইয়ার। ৪৮ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে ৫০ রানে ব্যাট করছেন কোহলি।
বড় শটের চেষ্টায় নিজের উইকেট দিয়ে এলেন শ্রেয়াস আইয়ার। মেহেদী হাসান মিরাজের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে উড়িয়ে মারেন আইয়ার। বল ভেসে যায় যাওয়ায়।
ডিপ মিড উইকেট সীমানা থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে এসে সহজ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। ফেরার আগে ২ চারে ২৫ বলে ১৯ রান করেন আইয়ার। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল
৩০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৮৪ রান। বাকি ২০ ওভারে ভারতের প্রয়োজন আর ৭৩ রান। ৫৮ বলে ৫৭ রানে খেলছেন ভিরাট কোহলি।
ভিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। ৩৪ ওভারে দলটির রান স্পর্শ করেছে দুইশ।
৩৪ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ২০১। ৬৮ বলে ৬৫ রানে ব্যাট করছেন কোহলি। ১৮ বলে ১৩ রানে খেলছেন রাহুল।
জয়ের জন্য শেষ ১৬ ওভারে ৫৬ রান চাই ভারতের।
ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরুর পর দিক হারানোর বাংলাদেশ কোনোমতে পার হয় আড়াইশ। এই রান নিয়ে খুব একটা লড়াই করতে পারেনি তারা। বিরাট কোহলির ৪৮তম সেঞ্চুরিতে অনায়াস জয় পেয়েছে ভারত।
একপেশে লড়াইয়ে ৭ উইকেটে জিতেছে রোহিত শার্মার দল। বাংলাদেশের ২৫৬ রান তাড়া পেরিয়ে গেছে ৫১ বল বাকি থাকতে।
ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন অনেক আগেই কেটে গিয়েছিল। শেষ দিকে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল কোহলি সেঞ্চুরি পান কী না সেটা নিয়ে। ভারতের যখন ২০ রান প্রয়োজন, তখন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান।
দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই রান তুলে নেন তিনি, ম্যাচ শেষ করেন নাসুম আহমেদকে ছক্কা উড়িয়ে। দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি!
৯৭ বলে চারটি ছক্কা ও ছয়টি চারে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। তার সঙ্গে ৮৩ রানের জুটি উপহার দেওয়া লোকেশ রাহুল ৩৪ বলে করেন ৩৪ রান।
আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ হারল টানা তিন ম্যাচে। অন্য দিকে টানা চতুর্থ জয় পেল ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮ (তানজিদ ৫১, লিটন ৬৬, শান্ত ৮, মিরাজ ৩, হৃদয় ১৬, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৬, নাসুম ১৪, মুস্তাফিজ ১*, শরিফুল ৭*; বুমরাহ ১০-১-৪১-২, সিরাজ ১০-০-৬০-২, পান্ডিয়া ০.৩-০-৮-০, কোহলি ০.৩-০-২-০, শার্দুল ৯-০-৫৯-১, কুলদিপ ১০-০-৪৭-১, জাদেজা ১০-০-৩৮-২)
ভারত:৪১.৩ ওভারে ২৬১/৩ (রোহিত ৪৮, ফিল ৫৩, কোহলি ১০৩*, আইয়ার ১৯, রাহুল ৩৪*; শরিফুল ৮-০-৫৪-০, মুস্তাফিজ ৫-০-২৯-০, নাসুম ৯.৩-০-৬০-০, হাসান ৮-০-৬৫-১, মিরাজ ১০-০-৪৭-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৬-০)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ভিরাট কোহলি