বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ।
Published : 07 Oct 2023, 10:40 AM
মাঠের বিবর্ণ পারফরম্যান্স, বাইরের নানা বিতর্ক পেরিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ধারামশালায় আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে সাকিব আল হাসানের দল। খেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়।
টানা তৃতীয় আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের আশায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ২০১৫ আসরে হারিয়েছিল আফগানিস্তানকে, গত আসরে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
দুই দলের সবশেষ দেখায় গত মাসে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে তারা। তবে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে এসে সিরিজ জিতেছে আফগানরা। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও এক তরফা ব্যবধান নেই। ১৫ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৯টি, আফগানদের ৬টি।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস জিতলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন ফিল্ডিং।
ধারামশালায় সবশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। ফিল্ডিং নেওয়ায় এই পরিসংখ্যানের ভূমিকা থাকার কথা জানালেন সাকিব।
“শুরুতে পেসারদের জন্য কিছুটা সহায়তা থাকবে। পাঁচটি বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ভালো করার মতো একটি দল আছে আমাদের। শুরুটা ভালো করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তিন পেসারের সঙ্গে দুই স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজাল বাংলাদেশ। পেস বিভাগে থাকছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
স্পিনে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়া প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্তকেও দেখা যেতে পারে হাত ঘোরাতে।
শান্ত ছাড়াও তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ হাসান, শরিফুল ইসলাম প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন।
বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিদ হাসান, মাহমুদউল্লাহ।
প্রায় আড়াই বছর পর দলে ডাক পেয়ে প্রথম ম্যাচেই মূল একাদশে সুযোগ পেয়ে গেলেন নাভিন উল হক।সাত ওয়ানডের সবশেষটি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে খেলেন ২৩ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
নাভিন ছাড়া পেস বিভাগে আছেন ফাজালহাক ফারুকি, আজমতউল্লাহ ওমারজাই। আর স্পিনে তিন নিয়মিত মুখ রাশিদখান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নাবি।
আফগানিস্তান একাদশ:হাশমতউল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রেহমাত শাহ, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মাদ নাবি, আজমতউল্লাহ ওমারজাই, রাশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফাজালহাক ফারুকি, নাভিন-উল-হক।
ছোট মাঠ, ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ উইকেট। খুব একটা ঝুঁকি না নিয়েও দ্রুত রান তুলছিলেন দুই আফগান ওপেনার। নবম ওভারে তাদের বিচ্ছিন্ন করলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ পেল প্রথম সাফল্য।
বাংলাদেশ অধিনায়কের অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে সুইপ করেন ইব্রাহিম জাদরান। শরীর থেকে বেশ দূরের বল মাঝ ব্যাটে নিতে পারেননি। কানায় লেগে ক্যাচ যায় ডিপ স্কয়ার লেগে। বেশ কিছুটা এগিয়ে সহজেই মুঠোয় নেন তানজিদ হাসান। ভাঙে ৫০ বল স্থায়ী ৪৭ রানের জুটি।
২৫ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে ২২ রান করেন ইব্রাহিম।
৮.২ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে ৪৭। ২৫ বলে ২৩ রান নিয়ে খেলছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ক্রিজে তার সঙ্গী রেহমাত শাহ।
আফগানিস্তানের ভালো শুরুর পর ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করেছে আফগানরা। শেষ দুই ওভারে তারা করতে পেরেছে স্রেফ ৩ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামের বিপক্ষে দারুণ শুরু করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান। প্রথম ৫ ওভারে আসে ২৭ রান।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। পরের ওভারে বল হাতে নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার দ্বিতীয় ওভারেই আসে প্রথম সাফল্য। সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ২২ রান করা ইব্রাহিম।
গুরবাজের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়েছেন রেহমাত শাহ।
নাজিবউল্লাহ জাদরানের সঙ্গে রেহমাত শাহর জুটিতে রানের গতি বাড়তে শুরু করেছিল। সেটা থামিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক পেলেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট।
পানি বিরতির পর প্রথম বলে বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন রেহমাত। টাইমিং করতে পারেননি তিনি। সিলি মিড অফে সহজ ক্যাচ নেন লিটন দাস। ভাঙে ৪১ বল স্থায়ী ৩৬ রানের জুটি।
২৫ বলে এক চারে ১৮ রান করেন রেহমাত।
১৫.১ ওভারে আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ৮৩। ৪১ বলে ৩৬ রানে খেলছেন গুরবাজ। ক্রিজে তার সঙ্গী অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি।
৫৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিল আফগানিস্তান। তাদের রান তিন অঙ্কে গেল ১২৮ বলে। পেসারদের বলে সহজেই রান করতে পারছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু স্পিনে বেশ ভুগতে হচ্ছে। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রান আসছে না সহজে।
২২ ওভারে আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ১০৪। ৫৬ বলে ৪৫ রানে ব্যাট করছেন ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদির রান ২৬ বলে ১২।
শরিফুল ইসলামের বলে দারুণ পুল শটেবাউন্ডারি মেরে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১ হাজার রান পূর্ণ করলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। একইসঙ্গে গড়লেন আফগানিস্তানের হয়ে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড।
প্রায় তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭ ইনিংসে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন ২১ বছর বয়সী গুরবাজ। দুই হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এখন তিনি তৃতীয় ফিফটির দুয়ারে দাঁড়িয়ে।
আফগানিস্তানের হয়ে এর আগে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড ছিল রেহমাত শাহর, ৩১ ইনিংসে। এই বিশ্ব রেকর্ড পাকিস্তানের বাঁহাতি ওপেনার ফাখার জামানের, ১৮ ইনিংসে।
এক প্রান্তে দারুণ বোলিং করে যাওয়ার পুরস্কার পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে ফিরিয়ে দিলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
মিরাজের বলে বেশ ভুগছিলেন আফগান অধিনায়ক। বাঁহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান খেলছিলেন একের পর এক ডট। চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠায় বেরিয়ে গিয়ে স্লগ করে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন তিনি। একেবারেই টাইমিং হয়নি, বল ওঠে যায় আকাশে। সহজেই মিড-অনে ক্যাচ নেন তাওহিদ হৃদয়। ভাঙে ৫৭ বল স্থায়ী ২৯ রানের মন্থর জুটি।
৩৮ বলে দুই চারে ১৮ রান করেন শাহিদি।
২৪.৪ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৩ উইকেটে ১১২। ৬০ বলে ৪৭ রানে খেলছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ক্রিজে তার সঙ্গী নাজিবউল্লাহ জাদরান।
টানা দুই ওভারে মেডেন-উইকেট পেল বাংলাদেশ। হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ বিদায় করার পর রহমানউল্লাহ গুরবাজের প্রতিরোধ ভাঙলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি পেসারের বলে বেরিয়ে এসে চড়াও হয়েছিলেন গুরবাজ। স্লোয়ার ডেলিভারিতে টাইমিং করতে পারেননি বিস্ফোরক এই ওপেনার। ডিপ কাভার থেকে ছুটে এসে ক্যাচ নেন তানজিদ হাসান।
৬৩ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে ৪৭ রান করেন গুরবাজ।
অনেকবার বাংলাদেশকে ভোগানো নাজিবউল্লাহ জাদরানকে এবার দাঁড়াতে দিলেন না সাকিব আল হাসান। দারুণ এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
স্টাম তাক করে করা ডেলিভারির লাইনে যেতে পারেননি নাজিবউল্লাহ। বল তার ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে! ভাঙে ২০ বল স্থায়ী ১০ রানের জুটি।
১৩ বলে ৫ রান করেন নাজিবউল্লাহ।
২৮.৪ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৫ উইকেটে ১২৩। ৯ বলে ৫ রানে খেলছেন মোহাম্মাদ নাবি। ক্রিজে তার সঙ্গী আজমতউল্লাহ ওমারজাই।
দুটি বোলিং পরিবর্তন করলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ পেল আরও দুটি উইকেট!
আগের ওভারে অধিনায়ক সাকিব ফিরিয়েছিলেন নাজিবউল্লাহ জাদরানকে। পরের ওভারে আরেক অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ নাবিকে বোল্ড করে থামালেন তাসকিন আহমেদ।
গতিময় পেসারের বল অফে খেলতে চেয়েছিলেন নাবি। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে উড়িয়ে দেয় লেগ স্টাম্প।
১২ বলে নাবি করেন ৬ রান।
৩০ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৬ উইকেটে ১২৬। ক্রিজে আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের সঙ্গী রাশিদ খান।
বোলিংয়ে ফিরেই সাফল্য পেলেনন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন রাশিদ খান।
আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন রাশিদ। সেটা ভেঙে গেল মিরাজের চমৎকার এক ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্প ঘেঁষা বল লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন রাশিদ। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে! ভাঙে ২৬ বল স্থায়ী ২৪ রানের জুটি।
১৬ বলে এক চারে রাশিদ করেন ৯ রান।
৩৫ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৭ উইকেটে ১৫৬। ক্রিজে ওমারজাইয়ের সঙ্গী মুজিব উর রহমান।
বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। দারুণ এক ডেলিভারিতে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে দিলেন শরিফুল ইসলাম।
বাঁহাতি পেসারের অ্যাঙ্গেল ভেতরে ঢোকা বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ওমারজাই। ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে!
২০ বলে চারটি চারে ওমারজাই করেন ২২ রান।
৩৬ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৮ উইকেটে ১৫৬। ক্রিজে মুজিব উর রহমানের সঙ্গী নাভিন উল হক।
পরপর তিন ওভারে তিন উইকেট হারাল আফগানিস্তান। বড় শট খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন মুজিব উর রহমান।
দারুণ বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন মুজিব। কিন্তু বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি, এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প।
৪ বলে ১ রান করেন মুজিব।
৩৭ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৯ উইকেটে ১৫৬। ক্রিজে নাভিন উল হকের সঙ্গী ফাজালহাক ফারুকি।
শূন্য রানে শেষ ৩ উইকেট হারাল আফগানিস্তান। টানা চার ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানে গুটিয়ে গেল তাদের ইনিংস।
শরিফুল ইসলামের শর্ট বলে ছক্কার চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন নাভিন উল হক। ৩৭.২ ওভারেই থেমে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রেহমাত শাহর জুটিতে এক সময় অনেক বড় সংগ্রহে চোখ রেখেছিল আফগানিস্তান। এক সময়ে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ১১২। সেখান থেকে তিনশর আশেপাশে যাওয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে আফগানদের ১৫৬ রানে থামিয়েছে বাংলাদেশ।
আফগানদের শেষ সাত ব্যাটসম্যানের ছয় জনই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
বোলিংয়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ৩০ রানে বাঁহাতি এই স্পিনার নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৯ ওভারে ২৫ রান দিয়ে মিরাজেরও শিকার ৩ উইকেট।
খারাপ করেননি পেসাররাও। ম্যাচের শুরুতে ফুল লেংথ ডেলিভারি দিচ্ছিলেন তারা, পরে বেছে নেন শর্ট বলের কৌশল। কাজও হয় তাতে। মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন একটি করে উইকেট, শরিফুল ইসলাম দুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ (গুরবাজ ৪৭, ইব্রাহিম ২২, রেহমাত ১৮, শাহিদি ১৮, নাজিবউল্লাহ ৫, নাবি ৬, ওমারজাই ২২, রাশিদ ৯, মুজিব ১, নাভিন ০, ফারুকি ০*; তাসকিন ৬-০-৩২-১, শরিফুল ৬.২-১-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৭-১-২৮-১, সাকিব ৮-০-৩০-৩, মিরাজ ৯-৩-২৫-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)
অনেক বিকল্পই খোলা রেখেছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ওপেনিংয়ের জন্য দুই বিশেষজ্ঞ ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাসকেই বেছে নিল তারা।
এ নিয়ে তৃতীয়বার এক সঙ্গে ওপেন করছেন তানজিদ ও লিটন।
বিশ্বকাপ অভিষেকে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তানজিদ হাসান। তরুণ বাঁহাতি ওপেনার ফিরে গেলেন রান আউট হয়ে।
ফাজালহাক ফারুকির পর এক্সট্রা কাভাবে পাঠিয়ে কিছুটা এগিয়ে যান লিটন। রানের জন্য ছুটে যান তানিজদ। পরে ফেরার চেষ্টা করে সফল হননি। নাজিবউল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রো স্টাম্পে লাগলে ফিরে যান রান আউট হয়ে। ভাঙে ১৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।
১৩ বলে এক চারে তানজিদ করেন ৫ রান।
৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ২২। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
সপ্তম ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান রান আউট হয়ে ফেরার পর বোল্ড হলেন লিটন দাস।
ফাজালহাক ফারুকির বলে বেরিয়ে এসে চড়াও হতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ঠিক মতো খেলতে পারেননি। ব্যাটের কানায় এলে উপড়ে ফেলে লেগ স্টাম্প!
দুই চারে ১৮ বলে ১৩ রান করেন লিটন।
৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ২৭। ক্রিজে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজকেও হারাতে পারত বাংলাদেশ। ফাজালহাক ফারুকির বলে পয়েন্টে ক্যাচ নিতে পারেননি নাজিবউল্লাহ জাদরান।
অফ স্টাম্পের বাইরের বল নিচে রাখতে পারেননি মিরাজ। হাঁটু উচ্চতায় ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি নাজিবউল্লাহ। সে সময় ১৬ রানে ছিলেন মিরাজ।
পরের বলে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় আফগানিস্তান। প্যাডে লাগার আগে ফারুকির বল ছুঁয়ে গিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট।
৯ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৯।
ছোট রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই হারাল দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাসকে।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৪৪। ২০ বলে ১৮ রানে খেলছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯ বলে ৩ রানে খেলছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ডাইভ দিলে হয়তো নিজের উইকেট বাঁচাতে পারতেন তানজিদ। রানে ফেরার সন্ধানে থাকা লিটন আরেকটু সময় নিতেই পারতেন। তেড়েফুড়ে মারতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত যদি পয়েন্টে মিরাজের ক্যাচ নিতে পারতেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। সরাসরি থ্রোয়ে তানজিদকে আউট করা এই ফিল্ডার নিতে পারেননি হাঁটু উচ্চতার ক্যাচ।
নাভিন উল হকের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের আপার কাটে সুযোগ এসেছেল মুজিব উর রহমানের বলে। কিন্তু থার্ড ম্যানে ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি, আরেকবার বেঁচে যান মিরাজ। সে সময় ২৩ রানে ছিলেন তিনি।
দ্রুত দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
তাদের জুটিতে পঞ্চাশ এসেছে কেবল ৫৫ বলে। আফগান স্পিন বা পেস কিছুই খুব একটা ভাবাতে পারছে না শান্ত ও মিরাজকে। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৭৮। ৩৮ বলে ৩৭ রানে খেলছেন মিরাজ। ২৭ বলে শান্তর রান ১৮।
কোনো ঝুঁকি নিচ্ছেন না মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এক-দুই নিয়ে খেলে দলকে নিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ্যের দিকে।
তাদের ব্যাটে ২৩তম ওভারে একশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে পঞ্চাশ স্পর্শ করেছেন মিরাজ, ৫৮ বলে। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে চারটি চার।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি, এবার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পেলেন ফিফটি। বিশ্বকাপে এটাই মিরাজের প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া রান। আগের সেরা ছিল কেবল ১২!
আর কেবল ১ সেকেন্ড বাকি ছিল! নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে কথা বলে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বেঁচে গেলেন তার জন্যই।
মুজিব উর রহমানের বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন মিরাজ। আফগানদের জোরাল আবেদনে সাড়া দিয়ে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়েছিল বল।
সে সময় ৫০ রানে ছিলেন মিরাজ।
২৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১০৬। ৬৭ বলে ৫১ রানে খেলছেন মিরাজ। ৫২ বলে শান্তর রান ৩০।
উইকেটের জন্য মরিয়া চেষ্টায় কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলো আফগানিস্তান। রাশিদ খানের বলে ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। সে সময় ৪২ রানে ছিলেন তিনি।
২৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১২৪।
নাভিন উল হকের বলে মিড অফে রেহমত শাহর দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভাঙল ১২৯ বল স্থায়ী ৯৭ রানের জুটি।
মনে হচ্ছিল ফিল্ডারকে পার করে বল কিন্তু দারুণভাবে লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেন রেহমাত। ফিরে যাওয়ার আগে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটিতে পাঁচ চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ।
২৯ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১২৬। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
চারের পর ছক্কা মেরে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সফল হননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে ধরা পড়েছেন সীমানায়, ফাজালহাক ফারুকির হাতে।
১৯ বলে দুই চারে সাকিব ১৪ রান।
অধিনায়কের ফিরে যাওয়ার পর ফিফটি করেন দারুণ ছন্দে থাকা সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ৮০ বলে। তার ব্যাট থেকে এসেছে একটি করে চার ও ছক্কা
৩৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৪৮।
আফগানিস্তানকে অনায়াসে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ। ১৫৭ রানের লক্ষ্য সাকিব আল হাসানের দল ছুঁয়ে ফেলেছে ৯২ বল বাকি থাকতে।
চমৎকার বোলিংয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। অপরাজিত ফিফটিতে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
৮৩ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে শান্ত অপরাজিত ছিলেন ৫৯ রান। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ৩ বলে খেলছিলেন ২ রানে।
এক দিনে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমসের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৬ উইকেটে জেতে সাইফ হাসানের নেতৃত্বাধীন দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ (গুরবাজ ৪৭, ইব্রাহিম ২২, রেহমাত ১৮, শাহিদি ১৮, নাজিবউল্লাহ ৫, নাবি ৬, ওমারজাই ২২, রাশিদ ৯, মুজিব ১, নাভিন ০, ফারুকি ০*; তাসকিন ৬-০-৩২-১, শরিফুল ৬.২-১-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৭-১-২৮-১, সাকিব ৮-০-৩০-৩, মিরাজ ৯-৩-২৫-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)
বাংলাদেশ: ৩৪.৪ ওভারে ১৫৮/৪ (তানজিদ ৫, লিটন ১৩, মিরাজ ৫৭, শান্ত ৫৯*, সাকিব ১৪, মুশফিক ২*; ফারুকি ৫-০-১৯-১, মুজিব ৭-০-৩০-০, নাভিন ৫.৪-০-৩১-১, রাশিদ ৯-০-৪৮-০, নাবি ৬-১-১৮-০, ওমারজাই ২-০-৯-১)