মুশফিকুর রহিমের উড়ন্ত ক্যাচে শুরুতেই সাফল্য পেল বাংলাদেশ। চাপ সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিল শ্রীলঙ্কা। আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপ ধরে রাখলেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসানরা। এর মাঝেই ঘটল ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউটের ঘটনা। সেই উত্তেজনা এক পাশে রেখে দারুণ সেঞ্চুরি করলেন চারিথ আসালাঙ্কা। তবু তাদেরকে বেশি দূর যেতে দিল না বাংলাদেশ।
দিল্লির আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে সোমবার ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে ২৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ছয় ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেতে এবার লঙ্কান বোলারদের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে বাংলাদেশকে।
টসের সময় শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুসাল মেন্ডিস বলেছিলেন, তিনশর বেশি স্কোর হবে নিরাপদ। তাদের সেটি করতে দেয়নি বাংলাদেশ। তবু জয়ের পথটা সহজ হবে না সাকিবদের। এই মাঠে বিশ্বকাপের আগের চার ম্যাচে স্রেফ একটিতে জিতেছে পরে ব্যাট করা দল।
লঙ্কানদের টেনে নেওয়া ইনিংসে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৮ রান করেছেন আসালাঙ্কা। চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন পাথুম নিসানকা, সাদিরা সামারাউইক্রামা।
বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম হাসান। এজন্য তার খরচ ৮০ রান। এছাড়া শরিফুল ইসলাম, সাকিব ধরেছেন ২টি করে শিকার।
এসব ছাপিয়ে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা নিশ্চিতভাবেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড আউট। ইনিংসের ২৫তম ওভারে ব্যাটিং শুরুর সময় হেলমেট কিছুটা আঁটসাঁট করতে গিয়ে ছিঁড়ে যায় একপ্রান্তের ফিতা। সেটি বদলানোর প্রক্রিয়ায় লেগে যায় বাড়তি সময়।
এতে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় টাইম আউটের আবেদন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কোনো ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর ২ মিনিটের নতুন ব্যাটসম্যানকে প্রথম বল খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী ম্যাথিউসকে আউট দেন আম্পায়ার।
ফলে কার্যত দশ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে শ্রীলঙ্কা। কোনো বলই খেলার যে সুযোগ পাননি সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। তার এমন আউটের পর দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় আসালাঙ্কার। সেটি দারুণভাবেই পালন করেছেন ২৬ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সন্ধ্যার পর শিশিরের উপদ্রব হতে পারে ভেবে টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই শরিফুল ইসলামের বলে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় কুসাল পেরেরার ক্যাচ নেন মুশফিক।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে কুসাল মেন্ডিস, নিসানকা যোগ করেন ৬১ রান। নিসানকা সাবলীল ব্যাটিং করলেও রানের জন্য ধুঁকতে থাকেন মেন্ডিস। দ্বাদশ ওভারে প্রথম আক্রমণে এসেই লঙ্কান অধিনায়ককে ফেরান সাকিব।
পরের ওভারে ৪১ রান করা নিসানকাকে বোল্ড করেন তানজিম। দ্রুত ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন সামারাউইক্রামা ও আসালাঙ্কা। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৬৩ রান। জুটি ভাঙেন সাকিব। ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ৪১ রান করা সামারাউইক্রামা।
এরপরই ঘটে ম্যাথিউসের টাইমড আউটের ঘটনা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি সত্যিই এই আবেদন করছেন কি না। সাকিবের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে ম্যাথিউসকে সেটি জানান আম্পায়াররা।
ম্যাথিউস তখন হেলমেটের ছেঁড়া ফিতা দেখিয়ে নিজের সমস্যার কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। কিন্তু কোনো কথা বলতে চাননি সাকিব। তিনি ইশারায় দেখিয়ে দেন আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। তাতে কোনো লাভ হয়নি।
হুট করেই ২ উইকেট হারানোর পর ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন আসালাঙ্কা, ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৭৮ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন ৩৪ রান করা ধানাঞ্জয়া।
পরে নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে নেন আসালাঙ্কা। ৪৮তম ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে বাউন্ডারি মেরে ৯৪ থেকে ৯৮ রানে পৌঁছান তিনি। পরের বলে ২ রান নিয়ে পূর্ণ করেন বিশ্বকাপে প্রথম ও ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এরপর বেশি দূর যেতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তানজিমের ওভারে ছক্কা মেরে এক বল পর ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে লিটন দাসের দারুণ ক্যাচে তৃতীয় সাফল্য পান তানজিম।
কোনো উইকেট না পেলেও দিল্লির ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ১০ ওভারে এক মেডেনসহ স্রেফ ৩৯ রান দেন তাসকিন।