ভারত পরীক্ষার 'নীরব প্রস্তুতি' বাংলাদেশ দলের

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিশ্রাম নিয়ে চাঙা হয়ে ওঠার চেষ্টায় ক্রিকেটাররা, চোটাক্রান্ত সাকিব আল হাসানকে নিয়ে অপেক্ষায় দল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিপুনে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2023, 01:53 PM
Updated : 15 Oct 2023, 01:53 PM

কনরাড পুনে হোটেলের লবিতে অপেক্ষা করছিলেন একঝাঁক সংবাদকর্মী। ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের ছবি-টবি যদি পাওয়া যায়, একটু কথা যদি কারও সঙ্গে বলা যায়! ক্যামেরা-মাইক্রোফোন হাতে তাদের ছুটোছুটি দেখে কৌতূহলি চোখে তাকাচ্ছিলেন অনেকেই। এক ভদ্রলোক এসে জানতে চাইলেন ঘটনা। বাংলাদেশের সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, “আমি একটি কার্গো জাহাজের ক্যাপ্টেন, আপনাদের চট্টগ্রাম আর মোংলা বন্দরে অনেকবার গিয়েছি…।”

ক্রিকেটেও তার আগ্রহ প্রবল। নানা কথার ফাঁকে তিনি বললেন, “পাকিস্তান তো কালকে কিছু্‌ই করতে পারল না। যদিও ভারত জিতেছে, কিন্তু খেলা দেখে মজা পাইনি। আমি চাই ভারত জিতুক, কিন্তু তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। কি মনে হয়, তোমাদের দল কি পারবে লড়াই করতে?”

প্রশ্নটি অবশ্য শুধু সান্দেস সুদ নামের মধ্যবয়সী ওই ভারতীয় মানুষটিরই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসারীদেরও। ভারতের সামনে কতটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী বৃহস্পতিবার। আপাতত চলছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির প্রথম অংশে চলছে ‘বিশ্রাম পর্ব।’ শনিবার চেন্নাই থেকে পুনে এসে বিশ্রামে ছিল দল। হোটেলে জিম বা সুইমিং করা ছাড়া পুরোপুরি এই বিশ্রাম চলেছে রোববার, চলবে সোমবারও। উদ্দেশ্য, বড় দুটি পরাজয়ের মানসিক বোঝা সরিয়ে ফেলা। ক্রিকেট থেকে কিছুটা দূরে সরে মনের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া। নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়ে ফুরফুরে হয়ে ওঠা।

এই দাওয়াই কতটা কার্যকর হতে পারে, তা বলে দেবে সময়। তবে টিম হোটেলে ক্রিকেটারদের যে কজনকে দেখা গেল, তাদেরকে বেশ চনমনেই মনে হলো।

দুপুর দেড়টার দিকে মাহমুদউল্লাহকে দেখা গেল লবিতে কিছুটা সময় কাটাতে। পরে তিনি বেরিয়ে গেলেন হোটেল থেকে। শেখ মেহেদি হাসান ও হাসান মাহমুদও আলাদাভাবে বেরিয়ে গেলেন একটু পর। পরে লবিতে এলেন পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রসেকারান। মুম্বাইয়ের সন্তান তিনি। পাশের শহর পুনের ভেতর-বাহিরও তার খুব ভালো চেনা। পরিচিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানালেন এই শহরের বিশেষ খাবার কী কী, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। “অবশ্যই মিশেল পাউ খেয়ে দেখবে’- বললেন তিনি বারবার। অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন পরের ম্যাচের ভেন্যু তার নিজের শহর মুম্বাইতে।

আরও কিছুক্ষণ পর লবির দিকে দেখা গেল নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিদ হাসান তামিম ও তাওহিদ হৃদয়কে। পরে বোঝা গেল, তারা অপেক্ষা করছিলেন তাসকিন আহমেদের জন্য। তাসকিন আসার পর সেখানেই খানিকটা আড্ডা দিয়ে তারা বাইরে গেলেন দুপুরের খাবার খেতে। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ‘হাই-হ্যালো’, হাসি বিনিময়, সবই হলো তাদের। বেশ প্রাণবন্তই মনে হলো তাদেরকে।

তাদের মনের আকাশের মেঘ কতটা সরেছে, তা তো বোঝার উপায় নেই। তবে বাইরের এই ঝলমলে রোদ দেখে আশার ছবি আঁকাই যায়।

মনের ওষুধের প্রয়োগ শেষে ক্রিকেট স্কিল ঝালিয়ে নেওয়ার পর্ব চলবে দুই দিন। অ্যানালিস্ট ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা মিলে নিশ্চয়ই এই বিরতির সময়টায় আরও ভালোভাবে গবেষণা করছেন, ভারতকে কোন অস্ত্র দিয়ে ধরাশায়ী করা যায়, কোথায় কীভাবে আঘাত করলে কাবু করা যায়। সেই ছক মাঠে বাস্তবায়নের জন্য মঙ্গল ও বুধবার মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে নিজেদের শানিত করবে দল।  

তবে সাকিব আল হাসান অনুশীলন করতে পারবেন কি না, তা জানা যায়নি এখনও। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন রোববার টিম হোটেলে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছিল। তবে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পরও শেষ পর্যন্ত তার দেখা পাওয়া যায়নি। সাকিবের চোটের সবশেষ অবস্থাও তাই আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। প্রতিটি দিন যেহেতু তার অবস্থা মূল্যায়ন করে দেখা হবে, আপাতত অপেক্ষাই করতে হচ্ছে তাকে নিয়ে।

বাংলাদেশ দলের এখন যা অবস্থা, ভারতের বিপক্ষে সাকিবকে ছাড়া মাঠে নামা অনেকটাই অকল্পনীয়। পুরোপুরি ফিট না হলেও যদি মোটামুটি খেলার অবস্থায় থাকেন, তবু তাকে খেলাতে মরিয়া থাকবে দল। তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাকিব নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, শতভাগ ফিট না হয়ে মাঠে নামা মানে দলের সঙ্গে প্রতারণার মতো। এখন তিনি যদি শতভাগ ফিট হয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে খেলবেন কি না, সেটিও দেখার ব্যাপার থাকবে। আপাতত শঙ্কাভরা অপেক্ষা তাকে নিয়ে।

বাংলাদেশ যেমন সবশেষ দুই ম্যাচকে ভুলে সামনে তাকাতে চাইবে, ভারতের বাস্তবতা ঠিক উল্টো। প্রথম তিন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে তারা। সেই ফর্ম, আত্মবিশ্বাস ও ছন্দকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবেন রোহিত শার্মা, ভিরাট কোহলিরা।

সমস্ত ক্রিকেটীয় সমীকরণ বলে, এই মুহূর্তে ভারতকে বিপাকে ফেলা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। খুব কঠিন। তবে খেলাটা ক্রিকেট বলেই আশা। এখানে শেষ কথা বলে তো কিছু নেই!