আনিসুলের প্রথম সেঞ্চুরি, এনামুল-সাদমানের ফিফটি

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এদিন পঞ্চাশের স্বাদ পেয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 01:02 PM
Updated : 28 March 2023, 01:02 PM

পায়ের ওপরের ডেলিভারি লেগ সাইডে ঠেলে দৌড় দিলেন আনিসুল ইসলাম। দ্বিতীয় রান পূর্ণ হতেই লাফিয়ে উঠে ছুঁড়লেন মুষ্টিবদ্ধ হাত। ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির উদযাপনে দুই হাতে উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট-হেলমেট। তার চমৎকার ইনিংস ও সাব্বির হোসেনের ফিফটিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের চলতি আসরে প্রথম জয় পেল ব্রাদার্স ইউনিয়ন।

বিকেএসপিতে মঙ্গলবার শেষ দিকে জমে ওঠা ম্যাচে অগ্রনী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ব্রাদার্সের জয় ৩ উইকেটে। প্রতিপক্ষের ২৮৬ রান পেরিয়ে যায় তারা ১ বল বাকি থাকতে।

ব্রাদার্সের জয়ের নায়ক আনিসুল চারে নেমে ৫ ছক্কা ও ৮ চারে খেলে ১০৭ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। পেশাদার ক্যারিয়ারে এর আগে দশবার পঞ্চাশের স্বাদ পেলেও তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন প্রথমবার। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরা তিনি ছাড়া আর কে!

আনিসুলের সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটিতে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া সাব্বির তিনটি করে ছক্কা-চারে করেন ৬২ রান।

অগ্রণী ব্যাংককে বড় পুঁজি এনে দেওয়ার পথে সাদমান ইসলাম করেন ৫৭ রান। শামসুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ঠিক ৫০ রান। দুইজনে বাউন্ডারি মারেন ৬টি করে। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন মার্শাল আইয়ুব।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অগ্রনী ব্যাংক তৃতীয় বলেই হারায় আজমির আহমেদকে। সেই ধাক্কা সামাল দেন সাদমান ও জাহিদ জাভেদ। দ্রুত কিছু রান তুলে জাহিদ বিদায় নেওয়ার পর শামসুলকে নিয়ে দলকে টানেন সাদমান।

ফিফটির পর রান আউটে কাটা পড়েন সাদমান। কয়েক ওভার পর সাজঘরে ফেরেন শামসুলও। আজিম নাজিরও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের রান বাড়ান মার্শাল।

রান তাড়ায় ভালো কিছুর আভাস দিয়ে ফিরে যান ব্রাদার্সের দুই ওপেনার মিজানুর রহমান ও তানজিদ হাসান। দুইজনেই করেন ২১ রান করে। ৪৭ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে পথে রাখেন সাব্বির ও আনিসুল।

তাদের জুটিতে লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকে ব্রাদার্স। পঞ্চাশের পর আবু হায়দারকে ছক্কার চেষ্টায় সাব্বির ধরা পড়েন শরিফুল্লাহর হাতে। এরপর মাইশুকুর কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন আনিসুলকে।

১০৮ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন আনিসুল। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। আরাফাত সানিকে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন লং অফে। আনিসুলের বিদায়ের পর ৩৭ বলে ৪৩ রানের সমীকরণ মেলানোর পথে দলকে এগিয়ে নেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার সাদ নাসিম ও জাহিদুজ্জামান।

শেষ ওভারে নাটকীয় মোড় নেয় ম্যাচ। ৬ বলে ৭ রানের সমীকরণে প্রথম বলে নাসিমকে হারায় ব্রাদার্স। পরের দুই বলে আসে দুই রান। চতুর্থ বলে দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় রানআউট আরাফাত সানি জুনিয়র। পরের বলে ডাবল নেন মানিক খান। ওভারের শেষ বলটি হয় ওয়াইড, সঙ্গে দৌড়ে এক রান নিয়ে জয়ের উল্লাসে মাতে বাদার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অগ্রনী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮৬/৯ (আজমির ০, সাদমান ৫৭, জাহিদ ২৮, শামসুল ৫০, আজিম ৩১, মার্শাল ৬৩, ইলিয়াস ২২, শরিফুল্লাহ ১৭*, আবু হায়দার ১, এনামুল ৬, সানি ২*; মেহেদি ১০-০-৫২-২, মানিক ৮-০-৬৫-১, আরাফাত জুনি. ১০-০-৪৫-২, সাব্বির ৪-০-২২-০, সজিব ৬-০-৪১-০, নাসিম ১০-০-৪২-১)

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৯.৫ ওভারে ২৮৭/৭ (মিজানুর ২১, তানজিদ ২১, সাব্বির ৬২, আনিসুল ১০৭, মাইশুকুর ২৫, নাসিম ২৮, জাহিদুজ্জামান ১২* আরাফাত জুনি. ১ মানিক ২*; সানি ১০-১-৪২-১ শরিফুল্লাহ ৬-০-৫২-১, এনামুল ৮.৫-১-৪৩-৩, আবু হায়দার ৯-০-৫৬-১, ইলিয়াস ৭-০-৪৫-০, জাহিদ ৮-০-৩৮-০, আজিম ১-০-৮-০)

ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আনিসুল ইসলাম

এনামুলের ঝড়ো ফিফটিতে আবাহনীর ১০ উইকেটে জয়

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপগঞ্জ টাইগার্সকে দেড়শর আগে গুঁড়িয়ে দিলেন আবাহনী লিমিটেডের বোলাররা। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় আগ্রাসী ব্যাটিং উপহার দিলেন এনামুল হক। তার বিধ্বংসী ফিফটি ও নাঈম শেখের কার্যকর ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয় তুলে নিল দলটি।

ফতুল্লায় আবাহনীর জয় ১০ উইকেটে। রূপগঞ্জ টাইগার্সকে ১২৭ রানে গুটিয়ে তারা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় স্রেফ ১৯.১ ওভারে।

৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৬৩ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলে জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন এনামুল, জিতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫২ বলে ৪৩ রান করেন নাঈম শেখ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রূপগঞ্জ টাইগার্স দ্বিতীয় ওভারেই হারায় উইকেট; সাইফ উদ্দিন ফিরিয়ে দেন ইমতিয়াজ হোসেনকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। 

ইমরানুজ্জামান, মুমিনুল হক, নাঈম ইসলাম ও ভারতের অঙ্কিত দুই অঙ্কের ঘরে গেলেও কেউ দীর্ঘ করতে পারেননি ইনিংস। ২ চারে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন অধিনায়ক নাঈম। 

আবাহনীর ব্যবহৃত পাঁচ বোলারই নিয়েছেন উইকেট। ৩৫ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিনটি তানভির ইসলাম। দুটি করে উইকেট নেন সাইফ, রকিবুল হাসান ও তানজিম হাসান।

ওয়াইড দিয়ে ওভার শুরু করা নাঈম হাসানের প্রথম বৈধ বলে ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খোলেন এনামুল। এক বল পর চার মারেন নাঈম শেখ। 

সেই শুরু, চলতে থাকে তাদের আগ্রাসন। ৩৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন এনামুল। আবাহনী শতরান স্পর্শ করে ১৬ ওভারে। এভাবেই দলকে জয়ের ঠিকানায় নেন এনামুল-নাঈম। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৩৭.২ ওভারে ১২৭ (ইমতিয়াজ ১, ইমরানুজ্জামান ১৬, মুমিনুল ১৩, নাঈম ইসলাম ৩৩, অঙ্কিত ২১, সানজামুল ২, সালমান ৫, নাঈম হাসান ৭, আলাউদ্দিন ১৯*, ইয়াসিন ৬, মুকিদুল ১; তানভির ৯-১-৩৫-৩, সাইফ ৬-০-১৭-২, রকিবুল ৯-০-৩৯-২, তানজিম ৭.২-০-১৮-২, নাহিদুল ৬-০-১৭-১)

আবাহনী লিমিটেড: ১৯.১ ওভারে ১৩১/০ (এনামুল ৮০*, নাঈম শেখ ৪৩*; নাঈম হাসান ৪-০-৩২-০, আলাউদ্দিন ১-০-৭-০, মুকিদুল ১-০-১৩-০, ইয়াসিন ৩-০-২২-০, সানজামুল ৬.১-০-৪০-০, মুমিনুল ৩-০-১৫-০, নাঈম ইসলাম ১-০-২-০)

ফল: আবাহনী লিমিটেড ১০ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক

শাহরিয়ারের অপরাজিত ফিফটিতে সিটি ক্লাবের প্রথম জয়

ইনিংস শুরু করতে নেমে একাই দলকে টানলেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তবে বাকিদের ব্যর্থতায় দেড়শ পেরিয়ে গুটিয়ে গেল ঢাকা লেপার্ডস। রান তাড়ায় রায়ান রাফসান ও শাহরিয়ার কমলের পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংসে আসরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল সিটি ক্লাব।

বিকেএসপিতে লেপার্ডসকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সিটি ক্লাব। প্রতিপক্ষের ১৬২ রান তারা টপকে যায় ৩০ বল বাকি থাকতে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা লেপার্ডসের হয়ে দুটি করে ছক্কা-চারে ৫২ রান করেন জসিম। দলটির আরও চার ব্যাটসম্যান যান দুই অঙ্কে। কিন্তু তাদের কেউ পার করতে পারেননি ৩০ রানও। ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান আসে সোহরাওয়ার্দী শুভর ব্যাট থেকে।

সিটি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন আসিফ হাসান ও রাফসান আল মাহমুদ। দুটি করে শিকার রবিউল হক ও মাজ আহমেদ সাদাকাতের।

রান তাড়ায় তৌফিক খানকে দ্রুত হারানো সিটি ক্লাবের হাল ধরেন রায়ান ও শাহরিয়ার। তাদের ৬৯ রানের জুটিতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি।

১ ছক্কা ও ৬ চারে ৫০ রান করে রায়ান ফিরলেও দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন শাহরিয়ার। ৩ চারে গড়া ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচ সেরা হন তিনিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা লেপার্ডস: ৪৬.৩ ওভারে ১৬২ (জসিম ৫২, পিনাক ৪, জেম ১৩, হৃদয় ১৪, রকিবুল ৩, সোহরাওয়ার্দী ৩০, মইন ১৮, চতুরাঙ্গা ৪, জনি ৯*, শাকিল ৩, সোহেল ০; রবিউল ৬-০-৩২-২, আমিনুর ৫-০-২০-০, আসিফ ১০-১-৩০-৩, রাফসান ৫.৩-০-১৬-৩, সাদাকাত ১০-১-১৯-২, রায়ান ১০-১-৪৩-০)

সিটি ক্লাব: ৪৫ ওভারে ১৬৩/৪ (রায়ান ৫০, তৌফিক ১৭, শাহরিয়ার ৬৯*, সাদাকাত ৬, রাফসান ৮, জয়রাজ ৫*; শাকিল ৫-১-১৯-০, সোহেল ৩-০-১৭-০, চতুরাঙ্গা ১০-১-৩১-২, মইন ৯-২-৩৪-২, জনি ৮-০-২৪-০, সোহরাওয়ার্দী ১০-১-৩৬-০)

ফল: সিটি ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহরিয়ার কমল