চরম ব্যর্থতার দুটি আসরের পর এবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
Published : 26 Nov 2023, 07:35 PM
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসরে বাংলাদেশের একমাত্র জয় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই দলের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই এবার শুরু হচ্ছে চ্যাম্পিয়নশিপেরর নতুন চক্র। টেস্ট আঙিনায় প্রায় দুই যুগ কাটিয়েও লাল বলের ক্রিকেটে এখনও পায়ের নিচে মাটি শক্ত করতে পারেনি এই দল। নতুন চক্র শুরুর আগে চান্দিকা হাথুরুসিংহের কণ্ঠে নেই কোনো বড় স্বপ্ন বা লক্ষ্য। বরং কোচের কণ্ঠে বাস্তবতারই ছাপ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। নতুন চ্যাম্পিয়নশিপের পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যস্ত সময়েরও শুরু হবে এই সিরিজ দিয়ে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি অনুযায়ী, আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান-পারফরম্যান্স ভালো কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবেই ব্যতিক্রম নয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অবস্থাও। প্রথম চক্রে শ্রীলঙ্কার মাঠে একটি টেস্ট ড্র করে তারা। হেরে যায় ঘরের মাঠে দুটিসহ বাকি ছয় ম্যাচের সবকটি। পরের চক্রে একমাত্র জয় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে, তাদেরই মাঠে। এছাড়া ড্র হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট।
সব মিলিয়ে দুই আসরে ১৯ ম্যাচে জয় ১টি, ড্র ২টি। এর মধ্যে ঘরের মাঠে আট ম্যাচে নেই কোনো জয়, ড্র ১টি।
নতুন চক্রে দেশের মাঠে বাংলাদেশের তিন সিরিজে নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বিদেশে প্রতিপক্ষ ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান।
সিলেটে রোববার দলের অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলের লক্ষ্যের কথা জানালেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ।
“প্রতিটি দলই চায় দেশের মাঠে জেতার গর্ব খুঁজে নিতে। আমরাও ব্যতিক্রম নই। তো, আমরা নিজেদের কন্ডিশনে ম্যাচ জেতার দিকে তাকিয়ে আছি এবং বাইরে গিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করতে চাচ্ছি। এটি আমাদের পরিকল্পনা। নিজেদের শক্তিমত্তা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সচেতন। তাই আমরা বড় কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করব না। দেশের মাঠে আমরা যতটা সম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করব এবং যখন বিদেশে যাব, সে অনুযায়ী প্রস্তুত হব।”
নতুন এই চক্রের শুরুতেই বেশ কজন নিয়মিত ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চোটের কারণে নেই সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন। ছুটি নিয়েছেন লিটন কুমার দাস।
অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে নতুনদের নিয়ে গড়া দলে এখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি হাসান মাহমুদ, হাসান মুরাদ ও শাহাদাত হোসেনের। মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, শরিফুল ইসলাম, নাঈম হাসানরা খেলেননি খুব বেশি ম্যাচ।
তাই নতুন পথচলা শুরুর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও সচেতন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রায় সেই বিষয় মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজানোর বার্তা হাথুরুসিংহের।
“খেয়াল করে দেখুন, আমরা এখন একটা দল গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় আছি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি একধরনের পালাবদলের বেলা। রোমাঞ্চকর বিষয় হলো, খুব ভালো কিছু তরুণ ক্রিকেটার আছে এখানে। তবে চ্যালেঞ্জটা হলো, তারা এখনও পর্যন্ত খুব বেশি (আন্তর্জাতিক) ক্রিকেট খেলেনি।”
“আমাদের পরিকল্পনা হতে হবে, এখনকার চেয়ে সামনের সময়টায় আরেকটু ভালো খেলা। ব্যাটিং-বোলিংয়ের প্রত্যেকটা পজিশনের জন্য ক্রিকেটারদের বড় একটা পুল তৈরি করার। দলে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ থাকতে হবে, দলের ক্রিকেটাররা অন্যদের চ্যালেঞ্জ করার মাধ্যমে আমাদের দলকে আরও ভালো করে তুলবে।”
সাকিব আল হাসানে না থাকা মানে বোলিংয়ের শক্তি এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়া। অধিনায়কের পাশাপাশি চোটের কারণে দলে নেই পেস আক্রমণের মূল দুই অস্ত্র তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনও। বোলিং বিভাগের শক্তি কমেছে অনেকটাই। পেস বিভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সৈয়দ খালেদ আহমেদ খেলেছেন মোটে ১২ টেস্ট।
সাকিব না থাকলেও অবশ্য স্পিনে অভিজ্ঞতার ভার কিছুটা আছে। প্রায় দশ বছর ধরে খেলছেন তাইজুল ইসলাম। মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারও পেরিয়েছে সাত বছর। দুজনেরই ঝুলিতে আছে দেড়শর বেশি করে উইকেট।
তাইজুল, মিরাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি স্কোয়াডের অন্য দুই স্পিনার নাঈম, মুরাদের ওপরও আস্থা রাখছেন হাথুরুসিংহে। তার মতে, ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন স্পিনাররাই।
“তাইজুল ও মিরাজের অভিজ্ঞতা আছে। তাইজুলের মনে হয় দুইশর বেশি (১৭৭) টেস্ট উইকেট আছে। সে এই বোলিং আক্রমণের নেতা হবে এবং মিরাজ, আমি ভুল না করে ২০১৬ থেকে খেলছে। তরুণ মুরাদ আছে এবং নাঈম হাসানও। আমার মনে হয়, এই কন্ডিশন ও গরমে খেলায় এসব ছেলেরা, মূলত স্পিনাররা বড় প্রভাব রাখবে।”
অভিন্ন ভাবনা সফরকারীদেরও। স্পিনে শক্তি বাড়িয়ে টেস্ট সিরিজটি খেলতে এসেছে তারা। দুই বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার, এজাজ প্যাটেল, লেগ স্পিনার ইশ সোধির সঙ্গে স্পিনে হাত ঘোরাতে পারেন রাচিন রবীন্দ্র, গ্লেন ফিলিপসও।
রোববারের অনুশীলনেও সিলেট আউটার স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটে স্পিনারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় কিউইদের স্পিন কোচ সাকলায়েন মুশতাককে। এজাজ, সোধি, রবীন্দ্রদের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর ফিলিপসের সঙ্গে আলাদা কাজ করেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি।
পরে সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ লুক রনকি জানালেন, সম্ভাব্য স্পিন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তারা।
“আমি মনে করি, বাংলাদেশে এটিই (স্পিনারদের দাপট) ক্রিকেটের ধরন, তাই নয়? এখানে অনেক বেশি স্পিনার সম্পৃক্ত থাকে। এখানের উইকেটে আমরা শুনেছি, গতি ও বাউন্স থাকতে পারে। তবে অনুশীলন করে এটিও বুঝেছি যে, আমরা অসম বাউন্স ও টার্নের আশা করতে পারি। তো দেখা যাক, উইকেট কেমন আচরণ করে।”
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাংলাদেশের লক্ষ্য তেমন বড় না হলেও, নিউ জিল্যান্ডের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০১৯-২১ চক্রে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। পরে ২০২১-২৩ চক্র তারা শেষ করে ছয় নম্বরে থেকে। নতুন চক্র শুরুর আগে এবার প্রথমবারের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির লক্ষ্য তাদের।
নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের ভিডিওবার্তায় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ড্যারেল মিচেল রোববার জানালেন, বড় লক্ষ্য পূরণে ছোট ছোট ধাপে এগোতে চান তারা।
“আমরা অবশ্যই জানি, এটিই (চ্যাম্পিয়ন হওয়া) চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া সব দলই এটি পেতে চায়। আমাদের জন্য বিষয়টা হলো, ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করা। ম্যাচ জিততে জিততে এগিয়ে যাওয়া। প্রথমে আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলব। বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জটা সবসময়ই কঠিন।”