Published : 13 Jan 2024, 01:09 PM
জন্ম বেলজিয়ামে, ক্রিকেটের শুরু ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়। ক্রিকেট ও পড়াশোনা পাশাপাশিই চালিয়ে গেছেন আন্তুম আমির নাকভি। এখন তিনি একজন কোয়ালিফাইড বাণিজ্যিক পাইলট। তবে আপাতত তার ধ্যানজ্ঞান ক্রিকেট। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার। গত মৌসুমে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে আবির্ভাবেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে। এবার তো গড়ে ফেললেন অনন্য এক কীর্তি।
জিম্বাবুয়ের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট লগান কাপের ম্যাচে অপরাজিত ৩০০ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন নাকভি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তো বটেই, স্বীকৃত যে কোনো ধরনের ক্রিকেটেই জিম্বাবুয়ের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি এটি।
হারারাতে মাটাবেলেল্যান্ড টাস্কার্সের বিপক্ষে মিড ওয়েস্ট রাইনোজের হয়ে এই ইনিংসটি খেলেন নাকভি। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম ৭ ম্যাচে ৩টি সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন তিনি। অষ্টম ম্যাচেই ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে গেলেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে দল ৮৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে যান নাকভি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শতরান পূরণ করেন ৯৯ বলে। সেখান থেকে দুইশ রানে যেতে একটু বেশি বল খেলেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ২২১ বলে।
পরের সময়টায় এগিয়ে যান তিনি ঝড়ের বেগে। ৩৮ বলেই করেন পরের পঞ্চাশ। দিন শেষ করেন ২৫০ রানে অপরাজিত থেকে।
অনেকগুলো রেকর্ডের হাতছানি তখন তার সামনে। লগান কাপে সর্বোচ্চ ২৬৫ রানের রেকর্ড সেফাস ঝুয়াওয়ের। জিম্বাবুয়ের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রেকর্ড ২৭৯। সেই ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার কুরি কাপে রেকর্ডটি গড়েছিলেন রে গ্রিপার।
প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ ইনিংসের কীর্তি ব্রায়ান ডেভিসনের ২৯৯। লগান কাপেই ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে। তবে তখন এই টুর্নামেন্টের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ছিল না।
তৃতীয় দিনে শুক্রবার একে একে সবাইকে ছাড়িয়ে যান নাকভি। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ত্রিশতকে পা রাখেন ২৯৫ বলে।
৪৪৪ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৩০ চার ও ১০ ছক্কায় অপরজিত থাকেন ২৯৫ বলে ৩০০ রান করে।
জিম্বাবুয়েতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি তিনি। ২০০০-০১ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ৩০৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের মার্ক রিচার্ডসন।
নাকভি তা ছুঁতে পারেননি দল ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায়। তবে সেখানে কাউকে দায় দেওয়ার উপায় নেই তার। তিনি নিজেই তো দলের অধিনায়ক!
জিম্বাবুয়ের সাবেক দুই ব্যাটসম্যান গ্রেইম হিক ও মারি গুডউইন অবশ্য আরও বড় ইনিংস খেলেছেন। তবে তারা দুজনই তখন আর জিম্বাবুয়েতে খেলেন না। ইনিংসগুলো খেলেছেন তারা ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে।
গত জানুয়ারিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক নাকভির। ঈগলসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে একমাত্র ইনিংসে ছয়ে নেমে ১৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন তিনি। অফ স্পিনে প্রথম ইনিংসে উইকেট নেন ৪টি, পরের ইনিংসে ১টি। দ্বিতীয় ম্যাচের একমাত্র ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন আরেকটি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা ২১তম ব্যাটসম্যান তিনি।
পঞ্চম ম্যাচে আরেকটি সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি বল হাতে দুই ইনিংসে নেন ৫ উইকেট।
এবারের মৌসুমে রাইনোজের অধিনায়কত্বের ভার দেওয়া হয় তাকে। নতুন মৌসুমের শুরুটায় তিনি ব্যর্থ হন ব্যাট হাতে। দুই ম্যাচের তিন ইনিংসে রান ছিল ৬, ০ ও ৩০। তৃতীয় ম্যাচেই করে ফেললেন ট্রিপল সেঞ্চুরি।
সব মিলিয়ে এখন ৮ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিতে তার রান এখন ৭১৫, ব্যাটিং গড় ১০২.১৫। অফ স্পিনে শিকার করেছেন ২০ উইকেট।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও তার শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। ৮ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটি করে ফেলেছেন। ব্যাটিং গড় ৭৩.৪২, স্ট্রাইক রেট ১১০.৭৭। উইকেট নিয়েছেন ৯টি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, দারুণ এক প্রতিভা উঠে আসছে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে।
আন্তুম নাকভির ৩ বছরের ছোট ভাই আওয়াদ নাকভিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শুরুটা দারুণ করেছেন। ৭ ম্যাচ খেলে তার ব্যাটিং গড় ৫৪.২৫।