৭২০ রানের ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।
Published : 09 Feb 2024, 10:47 PM
প্রায় চারশ’র কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়ায় রান পঞ্চাশ পেরিয়েই পাঁচ উইকেট নেই। আফগানিস্তানের সামনে তখন অল্পেই গুটিয়ে যাওয়ার চোখ রাঙানি। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দুইশ ছাড়ানো অভাবনীয় এক জুটি গড়লেন মোহাম্মাদ নাবি ও আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। দুজনই পেলেন সেঞ্চুরির স্বাদ। লক্ষ্যের কাছে যদিও যেতে পারল না আফগানরা। প্রত্যাশিত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল শ্রীলঙ্কা।
প্রথম ওয়ানডেতে শুক্রবার পাল্লেকেলেতে দুই দল মিলিয়ে হলো ৭২০ রান! ৪২ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।
স্বাগতিকদের জয়ের নায়ক পাথুম নিসানকা। এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার হয়ে সানাৎ জায়াসুরিয়ার সর্বোচ্চ ১৮৯ রানের ইনিংসের ২৪ বছর পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি, গড়েন দেশটির প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি।
নিসানকা ইনিংস শুরু করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২১০ রানে। ১৩৯ বলের ইনিংস গড়া ২০ চার ও ৮ ছক্কায়। আরেক ওপেনার আভিশা ফার্নান্দো ৮৮ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৮৮ রান। শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেট হারিয়ে করে ৩৮১ রান।
জবাবে ৫ উইকেটে ৫৫ রানের নড়বড়ে অবস্থানে থেকে নাবি ও ওমারজাইয়ের নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে ৩৩৯ পর্যন্ত যায় আফগানিস্তান।
একে অপরের বিপক্ষে দুই দলই পেল সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১৩০ বলে ১৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৬ রান করেন নাবি। প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে ওমারজাই অপরাজিত থাকেন ১৪৯ রানে। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে দারুণ পারফর্ম করে যাওয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ১১৫ বলের ইনিংসে ১৩ চারের পাশে ছক্কা ৬টি।
গত বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ওমারজাই। তারপর প্রথমবার এই সংস্করণে নেমেই দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তিনি। এই সংস্করণে আফগানদের হয়ে তার চেয়ে বড় ইনিংস আছে কেবল রহমানউল্লাহ গুরবাজ (১৫১) ও ইব্রাহিম জাদরানের (১৬২)।
নাবি ও ওমারজাইয়ের জুটিতে আসে ২২২ বলে ২৪২ রান। ওয়ানডে ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ডানেডিনে নিউ জিল্যান্ডের লুন রনকি ও গ্র্যান্ট এলিয়টের অবিচ্ছিন্ন ২৬৭ রানের জুটি সর্বোচ্চ।
ষষ্ঠ উইকেটে আফগানিস্তানের আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল সামিউল্লাহ শিনওয়ারি ও আসগর আফগানের ১৬৪, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালে।
যে কোনো উইকেটেই নাবি ও ওমারজাইয়ের চেয়ে বড় জুটি আফগানদের আছে আর কেবল একটি। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৬ রান তুলেছিলেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম।
রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার দুই পেসার প্রামদ মাদুশান ও দুশমান্থা চামিরার ছোবলে শুরতেই এলোমেলো হয়ে যায় আফগানিস্তান। ২৭ রানের মধ্যেই প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় তারা।
মাদুশান নিজের প্রথম তিন ওভারে একে একে ফিরিয়ে দেন গুরবাজ, ইব্রাহিম ও অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদিকে। চামিরা আক্রমণে এসেই বিদায় করেন রেহমাত শাহকে। নাইবও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
এরপরই লড়াই শুরু ওমারজাই ও নাবির। ওমারজাইকে ২৮ রানে ফেরানোর একটি সুযোগ অবশ্য এসেছিল, কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার কুসাল মেন্ডিস। নাবি কোনো সুযোগই দেননি।
৬৪ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া নাবি তিন অঙ্কে পৌঁছান ১০৬ বলে। খানিক পর ৯৫ থেকে জানিথ লিয়ানাগেকে ছক্কায় উড়িয়ে ৮৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওমারজাই।
পায়ে ক্র্যাম্প করায় ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলেন না নাবি। তাকে ফিরিয়েই মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন মাদুশান। ওমারজাই শেষ পর্যন্ত খেলে কমান পরাজয়ের ব্যবধান।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল কেবল ২২। পরের ওভারে ওমারজাইকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রানের গতিতে দম দেন নিসানকা। পরের ওভারে দুটি চার মেরে হাত খোলেন আভিশকাও। ফারিদ আহমাদের করা অষ্টম ওভারে আসে ১৯ রান।
দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান একশ পূর্ণ হয় ত্রয়োদশ ওভারে। নিসানকা ফিফটি করেন স্রেফ ৩১ বলে। আভিশকা আট ইনিংস পর ফিফটির দেখা পান ৫৫ বলে।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ১২ রান দূরে থাকতে ফারিদের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন আভিশকা। তিনে নেমে ভালো করতে পারেননি মেন্ডিস (৩১ বলে ১৬)।
তৃতীয় উইকেটে সাদিরা সামারাউইক্রামার সঙ্গে ৭১ বলে ১২০ রানের আরেকটি বড় জুটি গড়েন নিসানকা। ৮৮ বলে চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। দেড়শ স্পর্শ করেন ১১৬ বলে। ১৬৩ থেকে ফাজালহাক ফারুকির একই ওভারে মারেন একটি ছক্কা ও তিনটি চার।
সামারাউইক্রামা আউট হয়ে যান ৩৬ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ রান করে। নাইবের বলে ডাবল নিয়ে জায়াসুরিয়াকে ছাড়িয়ে যান নিসানকা। পরের বল ছক্কায় উড়িয়ে পৌঁছে যান ডাবল সেঞ্চুরির দুয়ারে। শেষ ওভারে মুখোমুখি প্রথম বলেই চার মেরে দ্বিশতক পূর্ণ করেন তিনি। যে ইনিংস তাকে এনে দিল ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৮১/৩ (নিসানকা ২১০*, আভিশকা ৮৮, মেন্ডিস ১৬, সামারাউইক্রামা ৪৫, আসালাঙ্কা ৭*; ফারুকি ৯-০-৭৭-০, ওমারজাই ৬-০-৫৫-০, ফারিদ ৯-১-৭৯-২, নাইব ৮-০-৬১-০, নুর ৮-০-৬২-০, নাবি ১০-০-৪৪-১)
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৩৯/৬ (গুরবাজ ১, ইব্রাহিম ৪, রেহমাত ৭, শাহিদি ৭, ওমারজাই ১৪৯*, নাইব ১৬, নাবি ১৩৬, ইকরাম ১০*; মাদুশানকা ৯-০-৬৫-০, মাদুশান ১০-০-৭৫-৪, চামিরা ৭.৩-০-৫৫-২, হাসারাঙ্গা ১০-১-৫৭-০, থিকশানা ১০-০-৫৬-০, লিয়ানাগে ৩-০-২৫-০, আসালাঙ্কা ০.৩-০-৩-০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৪২ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা
ম্যান অব দা ম্যাচ: পাথুম নিসানকা