নারী এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ ওভারে ৪১ রানের লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ।
Published : 10 Oct 2022, 12:58 PM
শেষ বলটি হতেই লঙ্কানদের উচ্ছ্বাস দেখে কে! বাঁধনহারা উদযাপনে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকলেন তারা। বাংলাদেশের ডাগআউট তখন স্তম্ভিত। অধিনায়ক নিগার সুলতানা নিষ্পলক তাকিয়ে সামনে। একটু পর তিনি হতাশায় নুইয়ে ফেললেন মাথা। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, এভাবেও হারা যায়!
নারী এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সহজ লক্ষ্য কঠিন বানিয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেল ৩ রানে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সোমবার লঙ্কানরা ১৮.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৩ তোলার পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৭ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪১ রান। কিন্তু আত্মঘাতী সব শটে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ব্যাটারা করতে পারে স্রেফ ৩৭ রান।
নিজেদের কাজ বাংলাদেশের ব্যাটাররা কঠিন করে তোলেন নিজেরাই। ইনিংসের শুরুতে প্রয়োজন ছিল ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান। কিন্তু বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে দেখে মনে হলো, ওভারপ্রতি বুঝি ৮-৯ রান করে লাগে!
অথচ না পেরেছেন তারা বাউন্ডারি মারতে, না পেরেছেন এক-দুই নিতে। ৭ ওভারে বাউন্ডারি স্রেফ একটি। গায়ের জোরে হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়েছেন বেশ কজন।
দ্বিতীয় ওভারেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড মুর্শিদা খাতুন। পরের ওভারে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড অভিজ্ঞ ফারজানা হক।
শঙ্কার আভাস তখনও মেলেনি। নিগার সুলতানা দুর্দান্ত ফর্মে, আরও কত কত ব্যাটার আছেন। নিগার ও রুমানা আহমেদ দলকে এগিয়েও নেন কিছুটা।
শেষ ১২ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৪ রানের। নিগার-রুমানা তখনও ক্রিজে। দুজনই মোটামুটি থিতু। কিন্তু অভিজ্ঞদের দিয়েই শুরু আত্মহত্যার মিছিল। বাঁহাতি স্পিনার ইনোকা রানাবিরার এক ওভারে ঘুরে যায় খেলার মোড়।
হুট করেই যে বড় শটের নেশা পেয়ে বসে সবাইকে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে রুমানা (৯ বলে ৮) ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। ওভারের তৃতীয় বলে একই চেষ্টা করতে যান নিগার (১১ বলে ১২)। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ক্রস ব্যাটে স্লগ করতে গিয়ে বল তুলে দেন স্রেফ ওপরে। সহজ ক্যাচ নেন লঙ্কান কিপার।
ওই ওভারেই একই পথের পথিক সোবহানা মোস্তারি। ক্রস ব্যাটে স্লগ করে তিনি ধরা পড়েন মিড উইকেটে। ওভারের শেষ বলে দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট সালমা খাতুন।
এক ওভারে চার উইকেট। বাংলাদেশের সম্ভাবনারও মৃত্যু সেখানেই।
শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। মেয়েদের ক্রিকেটে যা খুব কঠিন। বাংলাদেশ তা পারেওনি। এবার প্রতি বলে সিঙ্গেল এসেছে, বাউন্ডারি আসেনি।
ম্যাচের প্রথমভাগে দাপট ছিল বাংলাদেশের বোলারদের। লঙ্কান ব্যাটাররা ডানা মেলতেই পারেনি।
সবচেয়ে বড় বাধা চামারি আতাপাত্তুকেই সবার আগে ফেরান জাহানারা আলম। প্রথম ম্যাচের পর থেকে আর খেলার সুযোগ না পাওয়া অভিজ্ঞ পেসার একাদশে ফিরেই দারুণ স্কিলের ছাপ রাখেন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি দুই ওপেনারের সামনে রাউন্ড দা উইকেটে বোলিং করে দারুণ সুইং ও মুভমেন্ট আদায় করেন তিনি।
তেমনই এক ডেলিভারিতে অনেক বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে বিপজ্জনক আতাপাত্তুকে বোল্ড করে দেন জাহানারা।
এরপর রুমানা আহমেদ, সানজিদা আক্তার মেঘলাদের দারুণ বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটাররা খুব সুবিধে করতে পারেননি। পাঁচে নেমে কিছুটা লড়াই করেন নিলাকাশি ডি সিলভা (২৮*)।
একশর কমেই যাওয়ার পথে ছিল লঙ্কান ইনিংস। তাদের থামায় বৃষ্টি। তাতে বাংলাদেশের সমীকরণ সহজ হয়ে উঠে আরও। অবিশ্বাস্যভাবে, সেই ম্যাচটিও হেরে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
সেমি-ফাইনালের সম্ভাবনা এখনও অবশ্যই জিইয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ১৮.১ ওভারে ৮৩/৫ (হার্শিথা ১৮, আতাপাত্তু ১, আনুশকা ৮, হাসিনি ১১, নিলাকাশি ২৮*, কাভিশা ১১, ওশাদি ১*, সালমা ৩-০-৯-০, জাহানারা ৩.১-০-১৭-১, সোহেলি ২-০-৯-০, মেঘলা ৪-০-১৩-১, রুমানা ৩-০-১৪-২, ফাহিমা ৩-০-১৬-১)
বাংলাদেশ (লক্ষ্য ৭ ওভারে ৪১): ৭ ওভারে ৩৭/৭ (ফারজানা ৬, মুর্শিদা ১, নিগার ১২, রুমানা ৮, সোবহানা ১, রিতু ৩*, ফাহিমা ১, সালমা ২, জাহানারা ০*; সুগান্দিকা ২-০-৯-০, ওশাদি ২-০-১৩-১, ইনোকা ২-০-৭-৪, কাভিশা ১-০-৬-০)।
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কা ৩ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ইনোকা রানাবিরা।