Published : 31 Aug 2022, 12:08 PM
বিগ ব্যাশের ড্রাফটে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের থাকা নিয়ে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল, তাতেই সম্ভাব্য ভবিষ্যতের একটু আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই উত্তাপের ছোঁয়া পুরোপুরিই পাওয়া গেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন নিউ জিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার।
দিন তিনেক আগে বিগ ব্যাশের ড্রাফটে ডি গ্র্যান্ডহোমকে দলে নেয় অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্স। সেই খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। কারণ ডি গ্র্যান্ডহোম তাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার, কিন্তু বিগ ব্যাশে খেলতে চাওয়ার কথা তিনি জানাননি। যে সময়টায় সামনের বিগ ব্যাশ, সেই সময় নিউ জিল্যান্ড দলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা আছে।
এনজেডসি তখন বলেছিল, ডি গ্র্যান্ডহোমের সঙ্গে কথা বলে তারা একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এনজেডসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকেই বুধবার জানা গেল সেই সমাধান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়!
অবসরের কারণ হিসেবে ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বললেন নিজের চোটাক্রান্ত শরীর আর পরিবারকে সময় দেওয়ার কথা।
“আমাকে মেনে নিতে হবে যে বয়স আমার কমছে না এবং অনুশীলন করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষ করে এত চোট সামলে। আমার পরিবারও বেড়ে উঠছে। ক্রিকেট পরবর্তী জীবন কেমন হবে, সেসব নিয়ে ভাবছিলাম। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এসব মাথায় ঘুরঘুর করছিল।”
“২০১২ সালে অভিষেকের পর থেকে এত বছর ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে খেলতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে আমি গর্বিত। তবে আমার মনে হচ্ছে, ইতি টানার সঠিক সময় এখনই।”
জেন্টল মিডিয়াম পেস বোলিং, আগ্রাসী ব্যাটিং আর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে গত দশ বছরে নিউ জিল্যান্ড দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ডি গ্র্যান্ডহোম। তবে একের পর এক চোট তাকে মাঠে থাকতে দেয়নি নিয়মিত।
তার জন্ম ১৯৮৬ সালে, জিম্বাবুয়ের হারারেতে। সেখানেই ক্রিকেটের শুরু ও বেড়ে ওঠা। ঘরোয়া ক্রিকেটের শুরুও সেখানেই। জিম্বাবুয়ের হয়েই তিনি খেলেন ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে। ২০০৬ সালে পাড়ি জমান নিউ জিল্যান্ডে, পরে আপন করে নেন সেই দেশকেই।
২০১২ সালে জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক। কদিন পরই পা রাখেন ওয়ানডেতে। টেস্ট অভিষেক তার ২০১৬ সালে। ক্রাইস্টচার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট নিয়ে তিনি চমকে দেন। ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন অভিষেকে।
সব মিলিয়ে ২৯ টেস্ট খেলে ৩৮.৭০ গড়ে ২ সেঞ্চুরিতে তার রান ১ হাজার ৪৩২, উইকেট ৪৯টি। ৪৫ ওয়ানডে খেলে ২৬.৫০ গড় ও ১০৬.১৫ স্ট্রাইক রেটে রান ৭০৬, উইকেট ৩০টি। আর টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি ৪১টি। তাতে ১৩৮.৩৫ স্ট্রাইক রেটে রান ৫০৫, উইকেট ১২টি।
তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন গত বছর ভারতকে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জয়ী দলে থাকা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস সেই ফাইনালে হেরে যাওয়া ম্যাচেও তিনি ছিলেন নিউ জিল্যান্ডের একাদশে। সেদিন দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তিনি (১০-২-২৫-১)।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় খেলার হাতছানি তার অবসরের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় তিনি বেশ আকর্ষণীয় নাম। পাশাপাশি নিউ জিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য কদিন আগে নিউ জিল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ট্রেন্ট বোল্ট। বাঁহাতি এই পেসার অবশ্য অবসর নেননি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ফাঁকে সুযোগমতো জাতীয় দলেও খেলতে চান তিনি।
ডি গ্র্যান্ডহোমের অবসরের খবরে হতাশা প্রকাশ করলেন নিউ জিল্যান্ডের কোচ গ্যারি স্টেড। তবে এই অলরাউন্ডারের বাস্তবতাও তিনি অনুধাবন করতে পারছেন বলে জানালেন বিবৃতিতে।
“ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে কলিনের প্রভাব ছিল দারুণ এবং দলের দুর্দান্ত কিছু অর্জনে তার অবদান অনেক। ব্যাটিংয়ে প্রবল জোর আর বোলিং স্কিল মিলিয়ে সে ছিল সত্যিকারের ম্যাচ উইনার এবং যে কোনো দলের জন্য সম্পদ। দারুণ এক টিম-ম্যান সে এবং ড্রেসিং রুমে তার উপস্থিতি আমরা নিশ্চিতভাবেই মিস করব।”
“তাকে চলে যেতে দেখাটা দুঃখের। তবে ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে তার নতুন পথ বেছে নেওয়ার কারণ আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। তার ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা। সামনে যখন তার সুযোগ হয়, নিউ জিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা তাকে দেখতে চাই।”