প্রথম দুই ম্যাচ জিতেও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ফাইনালে উঠতে পারল না মধ্যাঞ্চল।
Published : 28 Dec 2023, 04:17 PM
ফাইনালের টিকেট পেতে উত্তরাঞ্চলের শুধু জিতলেই হতো না, ব্যবধানটাও হতে হতো বেশ বড়। হাবিবুর রহমানের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে সেই চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মধ্যাঞ্চলের বিদায়ঘণ্টাও বাজিয়ে দিল তারা।
কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মধ্যাঞ্চলকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে উত্তরাঞ্চল। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে ২০২ রানের লক্ষ্য স্রেফ ২৪.৪ ওভারে ছুঁয়ে ফেলেছে আকবর আলির নেতৃত্বাধীন দল।
অথচ প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠার বড় দাবিদার ছিল মধ্যাঞ্চল৷ শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারায় তাদের নেট রান রেটে (-০.৬৯২) লেগেছে বড় ধাক্কা। শ্রেয়তর নেট রান রেটে (০.৬৬১) তাদের টপকে গেছে উত্তরাঞ্চল।
যা সম্ভব হয়েছে হাবিবুরের তাণ্ডবে। দুইবার জীবন পেয়ে মধ্যাঞ্চলের বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তিনি। স্রেফ ৪৯ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে গড়েছেন বাংলাদেশের লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে দ্রুততম শতকের রেকর্ড।
৯টি করে চার-ছক্কায় ৬১ বলে ১১৭ রানের ইনিংস খেলে অনুমেয়ভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ২৪ বছর বয়সী ওপেনার।
রান তাড়ায় নাজমুল ইসলামের প্রথম বলে চার মেরে যাত্রা শুরু করেন তানজিদ হাসান। ওই ওভারে লং অফে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান হাবিবুর। পরের বলেই বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন ঝড়।
তৃতীয় ওভারে আবু হায়দার রনির বলে ২টি করে চার-ছক্কা মারেন হাবিবুর। পরের ওভারে আরেকটি চার মেরে তিনি চল্লিশের ঘরে পৌঁছে যান৷ নাজমুলের বলে পরপর দুই বলে ছক্কা-চার মেরে স্রেফ ১৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি৷ ২০১৮-১৯ মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৮ বলে রেকর্ডটি গড়েছিলেন ফরহাদ রেজা। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ১৯ বলে ফিফটি করেছিলেন নাজমুল হোসেন।
হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরের বলেই শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন হাবিবুর। প্রথমটির মতো এবারও ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন জিসান আলম। দ্বিতীয় দফায় জীবন পাওয়ার পর
হাবিবুরের রান তোলার গতি কমে একটু।
তারপরও পাওয়ার প্লেতে উত্তরাঞ্চল করে ১২৪ রান। হাবিবুরকে ৯৭ রানে রেখে দ্বাদশ ওভারে ফিরে যান তানজিদ। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে ৩৪ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার৷
এক ওভার পর কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে পৌঁছে যান হাবিবুর। তার আগে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল মাশরাফির, ৫০ বলে। অষ্টাদশ ওভারে জিসানের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন হাবিবুর।
এরপর বাকি পথ অনায়াসেই পাড়ি দেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অমিত হাসান।
দিনের শুরুতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন জিসান। এক ওভার পর ফের নাহিদুল ইসলামকে ছক্কায় ওড়ান তিনি। তবে পরের বলেই বিদায়ঘণ্টা বাজে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনারের।
দ্বিতীয় উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৩ রানের জুটি গড়েন নাঈম শেখ ও সাইফ হাসান। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ বলে ২৮ রান করে ফেরেন নাঈম।
দলকে একশ পার করিয়ে একই পথ ধরেন সাইফ। ২টি করে চার-ছক্কায় ৮৫ বলে ৪৭ রান করেন মধ্যাঞ্চল অধিনায়ক। এরপর একাই লড়েন মাহিদুল ইসলাম। আর কেউ তেমন সঙ্গ দিতে পারেনি তাকে।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ২টি করে চার-ছক্কায় ৯৯ বলে ৬৭ রান করেন ছন্দে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান। আবু হায়দারের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।
উত্তরাঞ্চলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন শহিদুল ইসলাম।
মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার দিবারাত্রির ফাইনালে পূর্বাঞ্চলের মুখোমুখি হবে উত্তরাঞ্চল। ম্যাচ শুরু দুপুর সাড়ে ১২টায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মধ্যাঞ্চল: ৪৮.১ ওভারে ২০১ (জিসান ১০, নাঈম শেখ ২৮, সাইফ ৪৭, মাহিদুল ৬৭*, নাঈম ইসলাম ১, আরিফুল ৪, মাহফুজুর ৪, আবু হায়দার ২৪, রিপন ২, এনামুল ০, নাজমুল ১; নাহিদুল ৭-০-৪৪-১, শহিদুল ৯-০-৪১-৪, রকিবুল ১০-০-৩৩-২, আমিনুল ৪-০-১৬-০, মামুন ৮.১-০-৩৭-১, তাইবুর ১০-০-২৯-২)
উত্তরাঞ্চল: ২৪.৪ ওভারে ২০৩/২ (তানজিদ ৩৪, হাবিবুর ১১৭, মামুন ২০*, অমিত ২১*; নাজমুল ৫-০-৩৭-০, আবু হায়দার ১-০-২১-০, সাইফ ৪.৪-০-৪০-০, রিপন ৩-০-২৮-০, মাহফুজুর ৫-০-৩৮-০, এনামুল ৩-০-২০-১, জিসান ৩-০-১৩-১)
ফল: উত্তরাঞ্চল ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: হাবিবুর রহমান