তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৪৪ রানে হারাল ভারত।
Published : 28 Apr 2024, 09:34 PM
টসের সময় নিগার সুলতানা বললেন, ‘১৫০ রানের মধ্যে আটকাতে পারলে ভালো হবে।’ অধিনায়কের কথা রাখলেন বাংলাদেশের বোলাররা। দেড়শ ছুঁতে পারল না ভারত। কিন্তু রান তাড়ায় আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ল ব্যাটিং। নিগার ছাড়া হতাশা উপহার দিলেন বাকি সব ব্যাটার। বাংলাদেশ সিরিজ শুরু হলো বড় পরাজয়ে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার বাংলাদেশকে ৪৪ রানে হারায় ভারত। ১৪৬ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ১০১ রানে আটকে গেছে নিগারের দল।
সামনের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের ভাবনায় নিজেদের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ সফরসূচির বাইরে সিরিজটি খেলছে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রথম ম্যাচে তিন বিভাগেই সফরকারীরা নিজেদের সামর্থ্যের ছাপ রাখলেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের পক্ষে তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। তবে ত্রিশ ছুঁয়েছেন তিন ব্যাটার। সম্মিলিত অবদানে ম্যাচ জেতার মতো পুঁজি পায় তারা। পরে রেনুকা সিংয়ের দারুণ বোলিংয়ে স্বাগতিকদের বেশি দূর যেতে দেয়নি তারা।
ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটিতে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৫১ রানের ইনিংস খেলেন নিগার। কিন্তু বাংলাদেশের আর কেউই ১৫ ছুঁতে পারেননি। এর আগে বল হাতে ৩ উইকেট নেন তরুণ লেগ স্পিনার রাবেয়া খাতুন।
ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার আগে ফিল্ডিংয়েও হতাশ করে বাংলাদেশ। তিনটি সহজ ক্যাচ ছাড়ার সঙ্গে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও দক্ষতা দেখাতে পারেননি সুলতানা খাতুন, ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণারা।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে সুলতানা খাতুনের বলে স্মৃতি মান্ধানার ক্যাচ ছেড়ে দেন তৃষ্ণা। ১ রানে বেঁচে যাওয়ার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্মৃতি। আর দুটি চার মেরে তৃষ্ণার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন বাঁহাতি ওপেনার।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ইয়াস্তিকা ভাটিয়ার সঙ্গে ৩১ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন শেফালি ভার্মা। পঞ্চম ওভারে মারুফা আক্তারের বলে শেফালিকে জীবন দেন সুলতানা। তিনিও দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। আর ৯ রান যোগ করে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তরুণ ব্যাটার।
তবে ছন্দপতন ঘটতে দেননিইয়াস্তিকা ও হারমানপ্রিত কৌর। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৩৩ বলে ৪৫ রানের জুটি। ত্রয়োদশ ওভারে একশ রান করে ফেলে ভারত। পরের ওভারে হারমানপ্রিতকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন ফাহিমা খাতুন।
৪ চারে ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন ভারত অধিনায়ক। ইয়াস্তিকাও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রাবেয়ার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন দলের সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা ব্যাটার। ২৯ বলের ইনিংসে৬টি চার মারেন তিনি।
দুই সেট ব্যাটারেরবিদায়ের পর শেষ দিকে খুব বেশি রান করতে পারেনি ভারত। রিচা ঘোষ ১৭ বলে ২৩ ও অভিষিক্ত সাজানা সাজিভান ১১ বলে ১১ রান করে দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান।
শেষ ওভারে স্রেফ ২ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন মারুফা। ৩ উইকেটের জন্য রাবেয়ার খরচ ২৩ রান।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় বলে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি মারেন দিলারা আক্তার। তবে পরের বলেই ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন রেনুকা।
আরও একবার হতাশ করেন সোবহানা মোস্তারি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচের একাদশে বাদ পড়ার পর এই ম্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। চমৎকার কাভার ড্রাইভে একটি চার মারলেও ৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিন নম্বরে নামা ব্যাটার।
বাঁহাতি ওপেনার মুর্শিদাখাতুন ১৩ রান করতে খেলেন ১৮ বল। ফাহিমা খাতুন অল্পেই ফিরলে স্রেফ ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ৩২ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন নিগার। কিন্তু চাহিদামাফিক দ্রুত রান তুলতে পারেননি তারা। ১৮ বলে ১১ রান করে স্বর্ণা বিদায় নিলে একা পড়ে যান নিগার। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৪৫ বলে পঞ্চাশ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ম্যাচের শেষ ওভারে পুজা ভাস্ত্রাকারের বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন নিগার। সমাপ্তি ঘটে তার ৪৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসের।
৪ ওভারে স্রেফ ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন রেনুকা সিং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৪৫/৭ (স্মৃতি ৯, শেফালি ৩১, ইয়াস্তিকা ৩৬, হারমানপ্রিত ৩০, রিচা ২৩, সাজানা ১১, পুজা ৪, শ্রেয়াঙ্কা ১*; মারুফা ৩-০-১৩-২, সুলতানা ৩-০-২৬-০, তৃষ্ণা ৩-০-২৩-১, নাহিদা ৩-০-২৯-০, রাবেয়া ৪-০-২৩-৩, ফাহিমা ৪-০-৩১-১)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০১/৮ (দিলারা ৪, মুর্শিদা ১৩, সোবহানা৬, নিগার ৫১, ফাহিমা ১, স্বর্ণা ১১, রাবেয়া ২, নাহিদা ৯, সুলতানা ০*, মারুফা ১*; রেনুকা ৪-০-১৮-৩, পুজা ৪-০-২৫-২, শ্রেয়াঙ্কা ৪-০-২৪-১, দিপ্তি ৪-০-১৫-১, রাধা ৪-০-১৯-১)
ফল: ভারত ৪৪ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রেনুকা সিং