অবিশ্বাস্য জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারল না ভারত

২৬ ছক্কা আর রান উৎসবের ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরাল শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2023, 05:24 PM
Updated : 5 Jan 2023, 05:24 PM

দুইশর বেশি রান তাড়ায় পাওয়ার প্লের মধ্যে চার ব্যাটসম্যানদের বিদায়। ১০ ওভারে রান ৫ উইকেটে ৬৪। বাকি ১০ ওভারে দরকার ১৪৩। সূর্যকুমার যাদব, আকসার প্যাটেল ও শিভাম মাভির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আশা জাগাল ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত পারল না তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। ২৬ ছক্কা আর রান উৎসবের ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরাল শ্রীলঙ্কা। 

পুনেতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার জয় ১৬ রানে। ২০৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাগতিকরা করতে পারে ১৯০ রান। 

শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২১ রান। আকসার খেলছিলেন ২৯ বলে ৬৩ রানে, মাভি ১২ বলে ২৫ রানে।

ইনিংসে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে এই ওভারে স্রেফ ৪ রান দিয়ে দুই ব্যাটসম্যানকেই ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। এর আগে ব্যাট হাতে শেষের ঝড়ে দলকে বড় পুঁজিও এনে দেন তিনিই। ছয় নম্বরে নেমে ৬ ছক্কা ও ২ চারে ২২ বলে খেলেন অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস। ম্যাচের সেরা আর কে! 

ঝড়ো ফিফটি করেন কুসল মেন্ডিসও। ৩১ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে এই ওপেনার করেন ৫২ রান। 

ভারতের হয়েও পঞ্চাশ পার করেন দুজন। টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব ৩৬ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় করেন ৫১ রান। 

সাত নম্বরে নেমে প্রথম ফিফটিতে ৩১ বলে ৬৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন আকসার। যেখানে ৬টি ছক্কার পাশে চার ৩টি।

মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মেন্ডিস ও পাথুম নিসানকার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ওভারে টানা তিনটি নো বলসহ ৯ বলের ওভারে আর্শদিপ সিং দেন ১৯ রান।  

কোনো উইকেট না হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৫ ও ৮ ওভারে ৮০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। মেন্ডিস ফিফটি পূর্ণ করেন ২৭ বলে। এর পরপরই তার ঝড় থামিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন যুজবেন্দ্র চেহেল। 

দুই অঙ্কে যেতে পারেননি ভানুকা রাজাপাকসা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। মাঝে নিসানকা বিদায় নেন ৩৫ বলে ৩৩ রান করে। 

রানের গতিতে দম দেন চারিথ আসালাঙ্কা। ৪ ছক্কায় তিনি করেন ১৯ বলে ৩৭ রান। পরপর দুই বলে তাকে ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে দেন উমরান মালিক।

এরপর ঝড় তোলেন শানাকা। শেষ তিন ওভারে তিনি মারেন ৬টি ছক্কা। যার তিনটি মাভির করা ইনিংসের শেষ ওভারে। শেষ ৫ ওভারে শ্রীলঙ্কা তোলে ৭৭  রান। 

অবশ্য শেষের আগের ওভারে ৩০ রানে আউট হতে পারতেন শানাকা। লং অনে তার ক্যাচ নেন সূর্যকুমার, কিন্তু ‘ওভার স্টেপিং’ করেন বোলার আর্শদিপ। কোটার প্রথম ওভারে তিনটির পর শেষ ওভারে এই পেসার ‘নো বল’ করেন দুটি। 

আগের ম্যাচে অভিষেকে ৪ উইকেট নেওয়া মাভি এ দিন দেখেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ৪ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। 

বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম তিন ওভারেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ইশান কিষান, শুভমান গিল ও অভিষিক্ত রাহুল ত্রিপাঠিকে হারায় ভারত। কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

হার্দিক পান্ডিয়া ও প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা দিপক হুডাও টিকতে পারেননি। দশম ওভারে ৫৭ রানে ৫ উইকেট নেই স্বাগতিকদের। 

সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারত। মুখোমুখি চতুর্থ বলে হাসারাঙ্গাকে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলা আকসার আউট হতে পারতেন পরের বলে, যদি বল গ্লাভসে জমাতে পারতেন কিপার মেন্ডিস। 

জীবন পেয়ে হাসারাঙ্গার তৃতীয় ওভারে তাণ্ডব চালান আকসার। মারেন টানা তিনটি ছক্কা। এই ওভারে লেগ স্পিনারকে আরেকটি ছক্কা মারেন সূর্যকুমার। রান আসে ২৬। 

শেষ ৫ ওভারে দরকার ছিল ৬৮ রান। দুই ব্যাটসম্যানের সামনে বল ফেলার যেন জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না শ্রীলঙ্কার বোলাররা। শিশিরের জন্য ঠিকমতো বল গ্রিপ করতে পারছিলেন না স্পিনাররা। ভারতের জয় মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব।

তবে ফিফটির পরপরই সূর্যকুমারের বিদায় আর ৪০ বলে ৯১ রানের জুটি ভাঙলে ভারতের সম্ভাবনায় লাগে চোট। আকসার ও মাভি এরপর চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট হয়ে উঠল না।   

তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা। আগামী শনিবার রাজকোটে শেষ ম্যাচে হবে সিরিজের ফয়সালা। ভারতে টি-টোয়েন্টিতে হারের চক্র ভাঙার পর দেশটিতে সিরিজ জয়ের হাতছানি শানাকাদের সামনে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২০৬/৬ (নিসানকা ৩৩, মেন্ডিস ৫২, রাজাপাকসা ২, আসালাঙ্কা ৩৭, ধনাঞ্জয়া ৩, শানাকা ৫৬, হাসারাঙ্গা ০, করুনারত্নে ১১*; পান্ডিয়া ২-০-১৩-০, আর্শদিপ ২-০-৩৭-০, মাভি ৪-০-৫৩-০, আকসার ৪-০-২৪-২, চেহেল ৪-০-৩০-১, উমরান ৪-০-৪৮-৩)  

ভারত: ২০ ওভারে ১৯০/৮ (কিষান ২, গিল ৫, ত্রিপাঠি ৫, সূর্যকুমার ৫১, পান্ডিয়া ১২, হুডা ৯, আকসার ৬৫, মাভি ২৬, উমরান ১; মাদুশাঙ্কা ৪-০-৪৫-২, রাজিথা ৪-০-২২-২, করুনারত্নে ৪-০-৪১-১, হাসারাঙ্গা ৩-০-৪১-১, থিকশানা ৪-০-৩৩-০, শানাকা ১-০-৪-২) 

ফল: শ্রীলঙ্কা ১৬ রানে জয়ী 

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা 

ম্যান অব দা ম্যাচ: দাসুন শানাকা