আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে বাজেভাবে হেরে গেল বাংলাদেশ।
Published : 17 Oct 2022, 07:13 PM
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে নতুন করে দুর্ভাবনার কিছু পাওয়া কঠিন। কিন্তু অবস্থা এতটাই করুণ যে, প্রত্যাশা তলানিতে থাকার পরও শঙ্কার নতুন উপকরণ বের করে ফেলল তারা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধান তো বড় বটেই, আরও বাজে হারের ধরন। সাম্প্রতিক সময়ে যা নিয়ে দেশের ক্রিকেটে তুমুল আলোচনা, সেই ‘ইন্টেন্ট’ ও ‘ইম্প্যাক্ট’ তো কিছু দেখা গেলই না, পাওয়া গেল না লড়াইয়ের ছিটেফোটাও।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয় ৬২ রানে।
ব্রিজবেনে সোমবার আফগানদের ১৬০ রান তাড়ায় বাংলাদেশ করতে পারে স্রেফ ৯৮ রান।
গা গরমের ম্যাচে জয়-পরাজয় খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কখনোই। এসব ম্যাচে ‘ইনটেনসিটি’ তীব্র থাকে না কখনই। কিন্তু সেসবেরও তো একটা মাত্রা থাকে! রান তাড়ায় বাংলাদেশ ম্যাচে থাকতে পারল না একটুও। চাপ না থাকায় খোলা মনে ব্যাটিং করার কথা। হলো উল্টো। এই ম্যাচেও এমন ব্যাটিং আরও একবার যেন ফুটিয়ে তুলল দলের দীনতা।
বাংলাদেশ কতটা বাজে ব্যাটিং করেছে, সেটি বোঝা যাবে আরেকটি তথ্যে। আফগানদের সেরা বোলার রশিদ খান এই ম্যাচে খেলেননি!
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা লিটন কুমার দাসও অবশ্য এই ম্যাচে খেলেননি। পায়ে একটু ব্যথা থাকায় সতর্কতা হিসেবে তাকে খেলায়নি দল। তবে ম্যাচের আগে বেশ লম্বা সময় নেটে ব্যাটিং করেন তিনি। আপাতত চোট-শঙ্কা তাকে ঘিরে নেই।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি যে একদমই হয়নি, তা অবশ্য নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভালো বোলিংয়ের ধারা ধরে রেখে তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ নিজেদের ঝালিয়ে নেন বেশ ভালোভাবেই। সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো বোলিং করতে না পারা সাকিব আল হাসান নিজের প্রথম ৩ ওভারে ভালো বোলিং করেন। ১৮ ওভার পর্যন্ত আফগানিস্তানকে বেশ চাপে রাখে বাংলাদেশের বোলিং।
তবে শেষ দুই ওভারে মোহাম্মদ নবির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আফগানদের রান স্পর্শ করে ১৬০। সাকিব ও তাসকিনের করা ওই দুই ওভার থেকে রান আসে ৩৩।
১৯তম ওভারে সাকিবের বলে নবির সহজ ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। জীবন পাওয়ার পর আফগান অধিনায়ক ৭ বলে করেন ২৯ রান! দুটি করে ছক্কা মারেন তিনি তাসকিন ও সাকিবকে।
অ্যালান বোর্ডার ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ বোলিংয়ে নামে টস হেরে। এই মাঠেই দিনের প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড গুটিয়ে যায় ৯৮ রানে। তবে উইকেট যে ভয়ঙ্কর নয়, সেটির প্রমাণ দিতেই যেন দক্ষিণ আফ্রিকা অনায়াসে জিতে যায় ১১.২ ওভারেই। পরের ম্যাচ হয় একই উইকেটে। বাদামি ঘাসের সেই উইকেটে বাংলাদেশের শুরুটা হয় বেশ ভালো।
হাসান মাহমুদের প্রথম ওভারে একটি ওয়াইড ছাড়া রান আসেনি। আরেক প্রান্তে তাসকিন আহমেদ ধরে রাখেন চাপ। তৃতীয় ওভারে হাসানের বলে হজরতউল্লাহ জাজাই চার-ছক্কা মারেন বটে, তবে তাকে ফিরিয়েই বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন তাসকিন। পাওয়ার প্লেতে আফগানরা তোলে ১ উইকেটে ৩৯ রান।
এমনিতে আগ্রাসী হলেও রহমানউল্লাহ গুরবাজকে এ দিন শান্ত রাখতে পারে বাংলাদেশের বোলাররা। ১৭ বলে ১০ রান করার পর তিনি গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন সাকিবকে ছক্কা মেরে। তবে ওই ওভারেই তাকে ফেরান সাকিব।
এরপর আফগানিস্তানকে এগিয়ে নেন তিনে নামা ইব্রাহিম জাদরান। মিডল অর্ডারে দারবিশ রাসুলি, নাজিবউল্লাহ জাদরানদের বড় কিছু করতে দেয়নি বাংলাদেশ। রাসুলিকে দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করেন তাসকিন। হাসানের বাড়তি বাউন্সের বলে পুল করতে গিয়ে আউট হন নাজিবউল্লাহ জাদরান। ৩৯ বলে ৪৬ রান করা ইব্রাহিমও আউট হন হাসানের বাড়তি লাফানো বল কাট করার চেষ্টায়।
১৮ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান ছিল ৫ উইকেটে ১২৭। এরপর নবির জীবন পাওয়া এবং শেষের ওই ক্যামিও ইনিংস।
বাংলাদেশের রান তাড়া নিয়ে বর্ণনার তেমন কিছুই নেই। কে কার আগে বিদায় নেবেন, এই প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন যেন সবাই। শান্তর সঙ্গে আবার মেহেদী হাসান মিরাজকে ফেরানো হয় ওপেনিংয়ে। শান্ত আউট হন ফারুকির বলে ক্রস ব্যাটে খেলে। মিরাজ দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকে শেষ পর্যন্ত ১৬ রান করতে পারেন ৩১ বল খেলে।
পুরনো হন্তারক ফজলহক ফারুকি আবার ফিরে আসেন সেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে। ৩ ওভারের স্পেলে ৩ উইকেট নিয়ে নেন তিনি ৯ রানে।
কেবল সাকিবের আউটের ডেলিভারি ছিল দুর্দান্ত। বল পিচ করে সুইং ও স্কিড করে ছোবল দেয় স্টাম্পে। ফারুকির বলেই আফিফ হোসেনের আউট নিয়ে একটু সংশয়ের জায়গা আছে। তবে দলের ব্যাটিংয়ের দুর্দশা এসবে বদলাচ্ছে না। মোসাদ্দেক হোসেন খানিকটা লড়াই করেন শেষ দিকে। কিন্তু রান ১০০ হয়নি তার পরও।
নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ দিকে কিছুটা লড়াই ও উন্নতির ছাপ ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। কিন্তু এই ম্যাচ আবার বড় চোট হয়ে এলো আত্মবিশ্বাসের জন্য। এই মাঠেই পরের প্রস্তুতি ম্যাচ বুধবার, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬০/৭ (জাজাই ১৫, গুরবাজ ২৭, ইব্রাহিম ৪৬, রাসুলি ১২, নাজিবউল্লাহ ৫, নবি ৪১*, উসমান ৭, ওমরজাই ১*; হাসান ৪-০-২৪-২, তাসকিন ৪-০-৩০-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-৪৬-২, নাসুম ২-০-১৬-০ সৌম্য ১-০-৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-৪-০)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ৯৮/৯ (শান্ত ১২, মিরাজ ১৬, সৌম্য ১, সাকিব ১, আফিফ ০, সোহান ১৩, মোসাদ্দেক ২৯, মুস্তাফিজ ১০*, হাসান ০*; ফারুকি ৩-১-৯-৩, মুজিব ৩-১-৫-১, ফরিদ ৪-০-৪২-২, ওমরজাই ২-০-২০-০, নবি ৩-০-১১-১)।