গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে ছিলেন রায়ান কুক, এখন তিনি বিশ্বকাপে সাকিবদের প্রথম প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের কোচ।
Published : 23 Oct 2022, 09:19 PM
কিংস্টন টুইন ওভালে তখন বাংলাদেশ দলের গা গরম করার পর্ব শুরু হতে চলেছে। হঠাৎ সেখানে আগমণ একজনের। হাসান মাহমুদ, মোসাদ্দেক হোসেনকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে তার আড্ডা জমে গেল। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরস্পরকে তারা খুব ভালোভাবেই চেনেন। সেই চেনা-জানার পরিধি গভীর বলেই বাংলাদেশের জন্য তিনি হতে পারেন বড় বাধা। ওই আগন্তুকের নাম রায়ান কুক, বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে ছিলেন কুক। এখন তিনিই ছবি আঁকছেন বাংলাদেশকে হারানোর। গত মাস পাঁচেক ধরে নেদারল্যান্ডস দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন কুক। তার দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই হোবার্টে সোমবার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে সাকিবদের।
প্রায় সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ ছিলেন তিনি। তবে কাজের পরিধি সীমাবদ্ধ ছিল না স্রেফ ফিল্ডিংয়েই। আর্ম থ্রোয়ার দিয়ে নেটে থ্রো ডাউন করতেন তিনি নিয়মিতই। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলীয় অনুশীলনে এবং আলাদা করেও কাজ করতেন নানা সময়ে। টিম মিটিংয়ের অংশ তো ছিলেনই।
কোচ পরিচয়ের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও দলের অনেকের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এই ক্রিকেটারদের ভেতর-বাহিরের খবর রাখেন তিনি খুব ভালোভাবেই। প্রায় সবার নাড়ী-নক্ষত্র তার জানা।
শুধু বাংলাদেশ দল সম্পর্কেই নয়, কুককে পেয়ে নেদারল্যান্ডস প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকবে আরেকটি জায়গাতেও। বিগ ব্যাশে হোবার্ট হারিকেন্স দলের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি ২০১৭-১৮ মৌসুমে। তাদের ঘরের মাঠ এই বেলেরিভ ওভাল। এই আঙিনা সম্পর্কেও তাই তার ধারণাও যথেষ্ট।
দক্ষিণ আফ্রিকার এক ক্রিকেট পরিবারে জন্ম রায়ান কুকের। তার বাবা জিমি কুক, ভাই স্টিভেন কুক খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। রায়ান ক্রিকেটার হিসেবে বড় হতে পারেননি। দ্রুতই তাই নাম লেখান কোচিংয়ে। বাবা জিমি কুকের একাডেমির কোচ হিসেবে শুরু। পরে যোগ দেন কেপ টাউনে গ্যারি কার্স্টেন একাডেমির কোচ হিসেবে। সেই ২০১৪ সাল থেকে আছেন তিনি কার্স্টেনের একাডেমিতে। এখনও তিনি এই একাডেমির ডিরেক্টর অব কোচিং।
কার্স্টেনের হাত ধরেই হোবার্ট হারিকেন্স দলে কাজের সুযোগ মিলেছিল তার। কার্স্টেনের পরামর্শেই ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তাকে ফিল্ডিং কোচ করে আনে বিসিবি।
শুরুতে তার চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়ে আরও। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তাকে যথেষ্ট খাটতেও দেখা গেছে। তবে সেটির প্রতিফলন দলের ফিল্ডিংয়ে পড়েনি।
২০১৯ বিশ্বকাপ থেকেই বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং পড়তির দিকে যেতে থাকে। ক্রমে বেহাল অবস্থা হয়ে পড়ে। কুককে তবু দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের বাজে ফিল্ডিংয়ের পর আর তাকে রাখেনি বিসিবি। কুক ফিরে যান কার্স্টেনের একাডেমিতে।
নেদারল্যান্ডসে তার কাজের শুরু গত মে মাসে। ডাচদের মূল কোচ রায়ান ক্যাম্পবেল অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ করা হয় কুককে। সেই দায়িত্ব চলছে।
তার কোচিংয়ে এই কদিনে বেশ নজরকাড়া ক্রিকেটে খেলেছে নেদারল্যান্ডস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজগুলো হারলেও দারুণ লড়াই উপহার দেয় ডাচরা। গত অগাস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৩১৫ রান তাড়ায় তারা পৌঁছে যায় ২৯৮ পর্যন্ত, আরেক ম্যাচে পাকিস্তানকে ২০৬ রানে আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ৯ রানে।
এই সময়ে টি-টোয়েন্টিতে তো দারুণ খেলেছে দল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠে তারা হেরে যায় জিম্বাবুয়ের কাছে। অগাস্টে একটি টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়ে হেরে যায় একটুর জন্য। এরপর এই বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্ব উতরে মূল পর্বে খেলার সাফল্য।
কুকের বর্তমান দল এখন মুখোমুখি তার সাবেক দলের। কিছুটা স্মৃতিকাতর তিনি হতেই পারেন। তবে পেশাদার জগতে আবেগের জায়গা খুব একটা নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শক্তি-দুর্বলতা বের করে আনতে খুব বেশি স্মৃতি হাতড়াতে হবে না তাকে। এখনও সব টাটকাই থাকার কথা!
কুকের কাগজ-কলমের আঁকিবুকি যদি ২২ গজে মেলে ধরতে পারে তার দল, তাদের সাফল্য রথ তাহলে ছুঁতে পারে নতুন সীমানা।