বাবর-রিজওয়ানের ব্যাটে ১৩ বছর পর ফাইনালে পাকিস্তান

দ্বিতীয় দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবার ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব অর্জন করল তারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2022, 11:47 AM
Updated : 9 Nov 2022, 11:47 AM

চোট কাটিয়ে ফেরার পর থেকে সেরা ছন্দ খুঁজে ফেরা শাহিন শাহ আফ্রিদি ফের বল হাতে আলো ছড়ালেন। ব্যাটিংয়ে জয়ের পথ সহজ করে দিলেন রান খরায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। নিউ জিল্যান্ডকে অনায়াসে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠল পাকিস্তান।

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বুধবার প্রথম সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানের জয় ৭ উইকেটে।

আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৫২ রান করেছিল নিউ জিল্যান্ড। জবাবে বাবর ও রিজওয়ানের ফিফটিতে ৫ বল বাকি থাকতেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় পাকিস্তান।

এবারের আগে ২০০৭ ও ২০০৯ আসরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান। ২০০৭ আসরে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়েই ফাইনালের টিকেট পেয়েছিল দলটি। পরেরবার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।

এর আগে প্রথম দল হিসেবে তিনবার ফাইনাল খেলার কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা; ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালের আসরে।

নিউ জিল্যান্ডের বিদায়ে একটি বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেল। গত আসরের মতো এবার আর নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলবে না। কারণ পাকিস্তানের মতো দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালের দুই দল ভারত এবং ইংল্যান্ড এরই মধ্যে একবার করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দুই ইনিংসের শুরুই হয়েছে বাউন্ডারি দিয়ে। দুই ইনিংসেই প্রথম ওভারে দেখা মিলতে পারত উইকেটের। নিউ জিল্যান্ড ইনিংসে প্রথম বলে চার হজমের এক বল পরই উইকেট নেন আফ্রিদি। পাকিস্তান ইনিংসে সেই সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট।

রান তাড়া করতে নেমে দর্শনীয় কাভার ড্রাইভে প্রথম বলেই চার মারেন রিজওয়ান। ওভারের চতুর্থ বলে স্ট্রাইক পেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাবর। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে নাগালে পেয়েও গ্লাভসে রাখতে পারেননি ডেভন কনওয়ে। সেখানেই শেষ হয়ে যায় জমজমাট ম্যাচ হওয়ার সব সম্ভাবনা।

শূন্য রানে জীবন পেয়ে এর পূর্ণ ফায়দা নেন পাকিস্তান অধিনায়ক। আগের পাঁচ ম্যাচে সাকুল্যে ৩৯ রান করা বাবর এবার তুলে নেন চলতি আসরে নিজের প্রথম ফিফটি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চারে ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।

পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৫৫ রান যোগ করে নিউ জিল্যান্ডকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকেই দেন বাবর ও রিজওয়ান। ইনিংসের ১৩তম ওভারে বাবরের বিদায়ে ভাঙে জুটি। তার আগে রিজওয়ানের সঙ্গে মিলে যোগ করেন ১০৫ রান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম জুটি হিসেবে তিনবার শতরান পার করলেন এ দুজন। গত আসরে ভারত ও নামিবিয়ার বিপক্ষে একশ ছাড়ানো জুটি গড়েছিলেন তারা।

সুপার টুয়েলভের ম্যাচগুলোতে বাবরের মতো পুরোপুরি বিবর্ণ ছিলেন না রিজওয়ান। তবে ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না তিনি। এবার ফাইনালে ওঠার মঞ্চে হাসল তার ব্যাট। ক্যারিয়ারের ২৩তম ফিফটিতে ৪৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন রিজওয়ান।

অবশ্য ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর ব্যাটসম্যান। ১৭তম ওভারের শেষ বলে বোল্টের ফুল টসে ক্যাচ দেন তিনি। উচ্চতায় থাকায় নো বলের আবেদন করেছিলেন রিজওয়ান। রিপ্লে দেখে তাকে আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার।

দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ৩ ওভারে ২১ রানের সমীকরণে ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা করে কিউইরা। লকি ফার্গুসনের করা ১৮তম ওভারে ১টি করে চার-ছয় মেরে পাকিস্তানের জয়ের পথ সুগম করেন তরুণ মোহাম্মদ হারিস। তবে রিজওয়ানের মতো তিনিও পারেননি ম্যাচ শেষ করে ফিরতে।

১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়া হারিস খেলেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস। শেষ ওভারে ২ রানের সমীকরণ অনায়াসে মিলিয়ে বিজয়ীর হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়েন শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ।

প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করলেও বাকি অংশে আর চার-ছয়ের পসরা সাজাতে পারেনি। ২০ ওভারে ১০টি চারের সঙ্গে স্রেফ ২টি ছক্কা মারতে পারে তারা। পুরো ইনিংসে ২১টি ‘ডাবল’ দেখা গেছে। যা এ বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ।

আফ্রিদির করা ম্যাচের প্রথম বলে চার মারার এক বল পরই এলবিডব্লিউ হয়ে যান ফিন অ্যালেন। শুরুতে তার উইকেট হারিয়ে খোলসে ঢুকে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভারে স্রেফ ৩৮ রান করতে পারে তারা। এর সঙ্গে যোগ হয় ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে মিড অফ থেকে শাদাব খানের দুর্দান্ত থ্রোয়ে ডেভন কনওয়ের রান আউট। ৩ চারে ২০ বলে ২১ রান করেন কনওয়ে।

নিউ জিল্যান্ডের বিপদ আরও বাড়ে অষ্টম ওভারে। মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টুর্নামেন্টে দলের সেরা ব্যাটসম্যান গ্লেন ফিলিপস।

পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের হাল ধরেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন ও গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের নায়ক ড্যারিল মিচেল। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। মিচেল একপ্রান্তে হাত খুলে খেললেও উইলিয়ামসন রানের গতি বাড়াতে ব্যর্থ হন।

১৭তম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ১টি করে চার-ছক্কায় ৪২ বলে ৪৬ রান করেন কিউই অধিনায়ক। শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি মিচেল ও জেমস নিশাম।

বিশ্বকাপের গত আসরে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৭২ রান করা মিচেল এবার অপরাজিত থাকেন ৩৫ বলে ৫৩ রান করে। তার ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে ছিল ১টি ছক্কা।

৪ ওভারে স্রেফ ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন আফ্রিদি। বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠার ম্যাচে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই। চোট কাটিয়ে ফেরার আসরে প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকার পর চার ম্যাচে তার প্রাপ্তি এখন ১০টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫২/৪ (অ্যালেন ৪, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ৪৬, ফিলিপস ৬, মিচেল ৫৩*, নিশাম ১৬*; আফ্রিদি ৪-০-২৪-২, নাসিম ৪-০-৩০-০, রউফ ৪-০-৩২-০, ওয়াসিম ২-০-১৫-০, শাদাব ৪-০-৩৩-০, নাওয়াজ ২-০-১২-১)

পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১৫৩/৩ (রিজওয়ান ৫৭, বাবর ৫৩, মোহাম্মদ হারিস ৩০, শান ৩*, ইফতিখার ০*; বোল্ট ৪-০-৩৩-২, সাউদি ৩.১-০-২৪-০, ফার্গুসন ৪-০-৩৭-০, স্যান্টনার ৪-০-২৬-১, সোধি ৪-০-২৬-০)

ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান