বিপিএলে রেকর্ড গড়া বোলিং করা পেসার মুকিদুল বললেন, সংবাদ সম্মেলনে মাইক্রোফোনের সামনে তার অস্বস্তি প্রবল।
Published : 08 Feb 2023, 10:20 AM
সংবাদ সম্মেলনের চেয়ারে বসতে বসতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মিডিয়া ম্যানেজার বললেন, “মুগ্ধকে এখানে আনতে জান বেরিয়ে গেছে আমার… আসতেই চায়নি। এমনকি দরজা থেকেও ফিরে যেতে চেয়েছিল…।” মুগ্ধ যার ডাক নাম, সেই মুকিদুল ইসলাম তখন মুখ টিপে হাসছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন হলো এটা নিয়েই, “কেন আসতে চাননি?” লাজুক হাসিতে মুকিদুলের উত্তর, “এই জিনিসটা খুব ভয় পাই আসলে…।”
ঘণ্টা দেড়েক আগে তিনিই ছিলেন ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতি জাগানিয়া। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহর মতো দেশের ক্রিকেটের মহারথীদের উইকেট শিকার করেছেন। ৫ উইকেট নিয়ে বিধ্বস্ত করেছেন ফরচুন বরিশালের ব্যাটিং লাইন আপ। তার বোলিং তোপে এ দিন তটস্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। সেই তিনিই কি না ভয় পান সংবাদ সম্মেলনকে!
কারণটাও জিজ্ঞেস করা হলো। তার ছোট্ট উত্তর, “ভয় পাওয়ার কারণ নেই আসলে… আমার কাছে অস্বস্তি লাগে…।”
অস্বস্তি পাশ কাটিয়ে কথা চলতে থাকল। বিপিএলে মঙ্গলবার বরিশালের বিপক্ষে কুমিল্লার জয়ের নায়ক তিনি। ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৩ রান দিয়ে। দুর্দান্ত এই বোলিংয়ে ধরা দিয়েছে দারুণ কিছু অর্জনও। এবারের বিপিএলে দেশি-বিদেশি মিলিয়েই প্রথম কোনো বোলার পেলেন ৫ উইকেট। তার নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগে কখনও ৪ উইকেটও ছিল না।
তবে সবচেয়ে বড় অর্জন, বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে দেশের পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন ২২ বছর বয়সী এই পেসারের।
রেকর্ডের কথা বলতেই দেখা গেল মুকিদুল নিশ্চিত নন, “আমার তো মনে হয় না (রেকর্ড হয়েছে)… আগেও দেখেছি, মুস্তাফিজ ভাই আরও ভালো করেছেন…।”
মুস্তাফিজের ৫ উইকেট ছিল ২৭ রানে। মুকিদুল পেরিয়ে গেছেন আসলে শফিউল ইসলামের রেকর্ড, যা ছিল ২৬ রানে ৫ উইকেট।
রেকর্ডের কথা বলার পরও অবশ্য খুব উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল না তার চেহারায় বা কণ্ঠে। তিনি বললেন স্রেফ পরিকল্পনা অনুসরণের কথা।
“আমি আমার পরিকল্পনায় বোলিং করেছি। চেষ্টা করছিলাম, অধিনায়কের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার। সেটাতে সফল হয়েছি।”
“আসলে উইকেট নেওয়ার জন্য বল করিনি। আমি চেয়েছি ডট বল করতে। আমি তো জানতাম না যে ৫ উইকেট পাব… কেউ এটা জানে না। আমার কাজটা আমি করেছি, ডট বল করার চেষ্টা করেছি, লাইন-লেংথ ভালো রাখতে চেষ্টা করেছি, উইকেট চলে এসেছে।”
এই ম্যাচের আগে এবারের বিপিএলে ৫ ম্যাচ খেলে তার উইকেট ছিল মোট ৪টি। এক ম্যাচেই ছাড়িয়ে গেলেন আগের সব ম্যাচের উইকেট সংখ্যাকে। তবে তার দাবি, আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে বোলিংয়ে খুব বেশি পরিবর্তন এ দিন করেননি।
“খেলাটাই এরকম যে কোনো দিন উইকেট পাবেন, কোনো দিন পাবেন না। কোনো দিন ভালো বল হবে, কোনো দিন হবে না। এটা বলা কঠিন যে আজকে ভালো করব বা নিয়মিত ভালো করব। এটা কখনোই হয় না। ভাগ্যকে পাশে পেতে হয়। ভালো কিছু করার জন্য ভালো জায়গায় বল করতে হয়।”
এমন বোলিংয়ের প্রদর্শনী তিনি দেখালেন, অথচ চোটের থাবা নাকি এখনও আছে তার শরীরে! গত অক্টোবরে জাতীয় লিগে স্রেফ একটি ম্যাচ খেলতে পারেন। মিরপুরে সেই ম্যাচে রংপুরের হয়ে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ হন চট্টগ্রামের বিপক্ষে। পরে বিসিবি একাদশের হয়ে ভারত সফরে গিয়ে চোটে পড়েন। এরপর আর দেশে ফিরে খেলতেই পারেননি জাতীয় লিগের কোনো ম্যাচ।
মাস দুয়েকের বিরতি শেষে এই বিপিএল দিয়ে তিনি মাঠে ফেরেন। তবে তিনি জানালেন, চোট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি পুরোপুরি।
“ইনজুরিতে পড়েছিলাম সবশেষ ‘এ’ দলে খেলার সময়। ওখানে আমাকে দেখার পর দেবাশিষ স্যার (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) বলেছিলেন যে, সময় লাগবে ৬ মাসের মতো। এখনও আমি ইনজুরিতেই আছি। তবে খেলতে পারছি আর কী।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি খেলছেন বেশ কিছু দিন ধরেই। পারফরম্যান্সও করছেন মোটামুটি। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তো তার ধারাবাহিতা বেশ ভালো। সাদা বলেও খারাপ নয়। হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে জায়গা পাচ্ছেন নিয়মিতই। বাংলাদেশ ইমার্জিং দল, ‘এ’ দলেও খেলে ফেলেছেন। তবে জাতীয় দলের বিবেচনায় এখনও সেভাবে আসতে পারেননি।
মুকিদুলের অবশ্য তাড়া নেই। আস্তে আস্তে নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে মেলে ধরেই আসতে চান জাতীয় দলে।
“আমার কাছে মনে হয়, পারফরম্যান্স নিজের কাছে। নির্বাচকদের নজরে আসার কথা বললে… আমার চেয়েও অনেক ভালো ভালো বোলার আছে। মুস্তাফিজ ভাই আছেন, তাসকিন ভাই আছেন… নিজেদের প্রমাণ করেই এই জায়গায় এসেছেন ওরা। আমার মনে হয়, আমাকেও আরও প্রমাণ করতে হবে ওই জায়গাটায় যেতে হলে। আমি চেষ্টা করব নিজেকে আরও প্রমাণ করার। প্রমাণ করে যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারি।”
তার পরিবারের অনেকেই এ দিন মাঠে ছিল। তাদের সামনে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে রাতটি স্মরণীয় করে রেখেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে কুমিল্লার মিডিয়া ম্যানেজার জানালেন, মুকিদুলের পরিবার থেকে আনা পিঠা খেয়ে তারা জয় উদযাপন করবেন।
মুকিদুল তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। সংবাদ সম্মেলন তো শেষ হলো! মিনিট দশেকের সংবাদ সম্মেলন শেষে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, “এখন কি মাইক্রোফোন নিয়ে ভয় কেটেছে?” আবারও তার সলজ্জ উত্তর, “এখনও বুক দুরু দুরু করছে…।”