দল ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায় ছক্কার রেকর্ড এককভাবে করার সুযোগ পেলেন না ইয়াশাসভি জয়সওয়াল, তবে দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে আরও অনেক রেকর্ডে নাম উঠল তার ও ভারতের।
Published : 18 Feb 2024, 02:42 PM
ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পরপরই টানা দুটি ছক্কায় ওয়াসিম আকরামের বিশ্বরেকর্ড ছুঁলেন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। এরপর অপেক্ষা রেকর্ডটি তার একার করে নেওয়ার। কিন্তু সেই সময় আর পেলেন না তিনি। তার ছক্কার পরও দুটি ছক্কা এলো বটে। তবে তার সঙ্গী সারফারাজ খানের ব্যাটে। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শার্মা। জয়সওয়াল রয়ে গেলেন আকরামের পাশেই।
এককভাবে না হলেও রেকর্ডটি ছুঁতে পারাও কম কৃতিত্বের নয়। প্রায় ২৭ বছর ধরে যে রেকর্ডটি আকরামের, সেখানেই এখন অংশীদার জয়সওয়াল। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডটি এখন যৌথভাবে এই দুজনের।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোট টেস্টের চতুর্থ দিনে ২১৪ রানের অসাধারণ ইনিংসের পথে এক ডজন ছক্কা মারেন জয়সওয়াল।
১৯৯৬ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা আকরাম। এরপর সানাৎ জায়াসুরিয়া, বিরেন্দর শেবাগ, ম্যাথু হেইডেন, ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের জমানা পেরিয়েও রেকর্ডটি ছিল অক্ষত। এতদিনে সেই উচ্চতার ছোঁয়া পেলেন ভারতের ২২ বছর বয়সী এক বিস্ময় প্রতিভা।
ছক্কাপ্রীতির নজির অবশ্য আগেও রেখেছেন জয়সওয়াল। সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকেই সেই ব্যাটিং বয়ে এনেছেন তিনি দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও। এই ম্যাচের আগেই ৬ টেস্টে ১৩ ছক্কা ছিল তার। এবার এক ইনিংসেই প্রায় ছুঁয়ে ফেললেন সেই সংখ্যা।
জয়সওয়ালের ইনিংসটির শুরু আগের দিন। শুরুটা একটু রয়েসয়েই ছিল তার। ৫০ রান করতে বল খেলেন ৮০টি। এর মধ্যেও অবশ্য দুটি ছক্কা ছিল। পরে গতি বাড়িয়ে শতরান করেন ১২২ বলে। সেঞ্চুরিতে ছক্কা ছিল ৫টি। দিনের শেষ ভাগে তিনি ১০৪ রান করে অবসর নেন অসুস্থতায়।
চতুর্থ দিনে রোববার শুবমান গিল ৯১ রানে রান আউট হওয়ার পর আবার ব্যাটিংয়ে নেমে রান রথ ছোটাতে থাকেন জয়সওয়াল। দেড়শ ছোঁয়ার সময় তার ছক্কা ছিল ৭টি। পরে টানা তিনটি ছক্কা মারেন তিনি টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার জিমি অ্যান্ডারসনকে।
অ্যান্ডারসনের ১৮৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তাকে টানা তিনটি ছক্কা মারতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান।
জয়সওয়াল ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ২৩১ বলে। এরপর টানা দুটি ছক্কা মারেন জো রুটকে। এর পরপরই ইনিংস ঘোষণা।
টানা দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে ১৪ চার ও ১২ ছক্কায় ২১৪ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি ২৩৬ বলে।
তার ১২ ছক্কার চারটি অ্যান্ডারসনকে, চারটি রুটকে, দুটি করে রেহান আহমেদ ও টম হার্টলিকে।
শুধু এটিই নয়, টানা দুই ডাবল সেঞ্চুরিতে আরও কিছু রেকর্ডে নাম লেখা হয়ে গেছে তার। জয়সওয়াল ও অন্যদের ছক্কার জোয়ারে রেকর্ড বইয়ে ওলট-পালট ফেলে দিয়েছে ভারতও।
ছক্কার মালা (১)
৫ ম্যাচ সিরিজের কেবল তৃতীয় ম্যাচ চলছে। এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখনই গড়ে ফেলেছে ভারত। এখনও পর্যন্ত ৪৮টি ছক্কা মেরেছে তারা।
আগের রেকর্ড ছিল ভারতেরই। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ টেস্টে ৪৭টি ছক্কা মেরেছিল তারা। গত বছরের অ্যাশেজে ৫ টেস্টে ৪৩ ছক্কা মেরেছিল ইংল্যান্ড।
ছক্কার মালা (২)
এই টেস্টে ভারতের ছক্কা সংখ্যা ২৮টি। এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এটিই। এখানেও তারা ছাড়িয়েছে নিজেদেরকেই।
২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশাখাপাত্নামে ২৭ ছক্কা ছিল আগের রেকর্ড। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে শারজাহতে ২২টি ছক্কা মেরেছিল নিউ জিল্যান্ড।
ছক্কার মালা (৩)
রাজকোট টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮টি ছক্কা মেরেছে ভারত। জয়সওয়ালের ১২টি ছাড়াও ৩টি মেরেছেন সারফারাজ খান, ২টি গিল, একটি কুলদিপ ইয়াদাভ। এক ইনিংসে এত ছক্কা আগে হয়নি তাদের। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুম্বাইয়ে ১৫ ছক্কা ছিল আগের রেকর্ড।
বাঁহাতি রাজা
চলতি সিরিজে এখনও পর্যন্ত ইয়াসাশভি জয়সওয়ালের রান ৫৪৫। এক সিরিজে ভারতের হয়ে কোনো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।
২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলির ৫৩৪ ছিল আগের রেকর্ড।
টানা দুইয়ে তৃতীয়
ভারতের হয়ে টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। আগের টেস্টে তিনি করেছিলেন ২০৯।
ভারতের হয়ে আগে এই কীর্তি আছে ভিনোদ কাম্বলি ও ভিরাট কোহলির।
জোড়া ডাবলে তৃতীয়
২২ বছর ৪৯ দিন বয়সেই টেস্ট ক্রিকেটে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেল ইয়াশাসভি জয়সওয়ালের। তার চেয়ে কম বয়সে টেস্টে একাধিকবার দুইশ ছুঁতে পেরেছেন আর কেবল দুজন।
দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির সময় ভিনোদ কাম্বলির বয়স ছিল ২১ বছর ৫৪ দিন, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ২১ বছর ৩১৮ দিন। (বয়সের রেকর্ডের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় টেস্ট শুরুর দিনটি)।
দ্বিতীয় ইনিংসে ডাবল
দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ভারতীয় ব্যাটসম্যান ইয়াশাসভি জয়সওয়াল।
ভারতের হয়ে প্রথম এই স্বাদ পেয়েছিলেন ১৯৬৫ সালে মানসুর আলি খান পাতৌদি। পরের বছরই তা করে দেখান দিলিপ সারদেসাই। পরে তা দুইবার করেন সুনিল গাভাস্কার। এছাড়া এটি করেছেন ভিভিএস লক্ষ্ণণ ও ওয়াসিম জাফার।