মুলতান টেস্ট জিততে পাকিস্তানের প্রয়োজন আর ১৫৭ রান, ইংল্যান্ডের দরকার ৬ উইকেট।
Published : 11 Dec 2022, 08:25 PM
ইমাম-উল-হক ও সাউদ শাকিলের জুটি তখন পেরিয়ে গেছে শতরান। ফিফটি করে এগিয়ে চলেছেন দুজনই। দিনের খেলা শেষ হতে তখন কেবল মিনিট দশেকের অপেক্ষা। জ্যাক লিচের ঝুলিয়ে দেওয়া বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন ইমাম-উল-হক। ইংলিশরা যখন উল্লাসে মত্ত, ইমামের মাথা তখন নুইয়ে গেছে হতাশায়। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, নিজে কী করে ফেলেছেন!
ইমামের মনোযোগ হারানোর ওই মুহূর্তই দিনটাকে করে রাখল ভারসাম্যপূর্ণ। মুলতান টেস্ট জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন আর ১৫৭ রান, ইংল্যান্ডের চাওয়া ৬ উইকেট। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ ইউসুফ বললেন, সম্ভাবনায় দুই দলই এখন ৫০-৫০।
দিনের শুরুতে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ৫ উইকেটে ২০২ রান নিয়ে রোববার খেলা শুরু করে তারা। লিড তখনই ২৮১ রানের। হ্যারি ব্রুক ও বেন স্টোকস শুরু করেন লিড আরও বাড়ানোর অভিযান। তবে খুব একটা সফল হননি তারা।
৭৪ রানে অপরাজিত ব্রুক অবশ্য তার প্রথম লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন। তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যান দেখা পান দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির। স্টোকস এগিয়ে যেতে থাকেন ফিফটির দিকে। আবরার আহমেদকে ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্পর্শ করেন তার কোচকে। টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখন যৌথভাবে স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের, ১০৭টি।
রেকর্ডটি এ দিন আর নিজের করে নিতে পারেননি স্টোকস। মোহাম্মদ নাওয়াজকে উড়িয়ে মেরে তিনি ধরা পড়েন সীমানায়। ৪১ রানে তার বিদায়ে ভাঙে ১২৫ বলে ১০১ রানের জুটি।
অধিনায়কের বিদায় দিয়েই ধস নামে ইংল্যান্ডের ইনিংসে। আবরার আহমেদকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন অলি রবিনসন। আরেক লেগ স্পিনার জাহিদ মাহমুদ শিকার ধরে থাকেন একের পর এক। যার মধ্যে আছে ব্রুকও।
আগের টেস্টে ১১৬ বলে ১৫৩ ও ৬৫ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানের রান এবার ১৪৯ বলে ১০৮।
লোয়ার অর্ডারে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি কেউ। ১৯ রানের মধ্যে ইংল্যান্ড হারায় শেষ ৫ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ৭টির সঙ্গে আবরার যোগ করেন আরও ৪ উইকেট। মোট ২৩৪ রানে ১১ উইকেট নিয়ে নাম লেখান তিনি রেকর্ড বইয়ে। পাকিস্তানের হয়ে অভিষেকে ৮ উইকেটের বেশি নেই আর কারও। পেসারদের মধ্যে অভিষেকে ১১ উইকেট আছে আর কেবল মোহাম্মদ জাহিদের (১৯৯৬ সালে, ১৩০ রানে ১১ উইকেট)।
৩৫৫ রানের লক্ষ্যে ছুটে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন আব্দুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। নিয়মিত ওপেনার ইমাম হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে স্ক্যান করাতে হাসপাতালে যাওয়ায় রিজওয়ান প্রথমবার ওপেন করেন ২৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে।
ওভারপ্রতি চারের বেশি রান তুলে ৬৬ রান যোগ করে ফেলে এই জুটি। চার বোলার ব্যবহার করে ব্যর্থ ইংল্যান্ড অধিনায়ক এরপর বল তুলে দেন বিশ্বস্ত সেনানী জিমি অ্যান্ডারসনের হাতে। সেই ২০০৬ সালের পর প্রথমবার পঞ্চম বোলার হিসেবে আক্রমণে এলেন তিনি।
৪০ বছর বয়সী পেসার প্রথম ওভারেই দেখালেন জাদু। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দিলেন তিনি রিজওয়ানকে (৩০)। বোল্ড হয়ে হতভম্ব রিজওয়ান উইকেটে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলের কিছুক্ষণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে।
একটু পরই আরেকটি জোর ধাক্কা। অলি রবিনসনের অনেক বাইরের বল পা বাড়িয়ে ছেড়ে দেন বাবর আজম। কিন্তু দারুণভাবে ভেতরে ঢুকে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। একটু পর মার্ক উড ফিরিয়ে দেন ৪৫ রান করা আব্দুল্লাহ শফিককে।
৮৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নেন সাউদ শাকিল ও চোটের শঙ্কা কাটিয়ে ক্রিজে ফেরা ইমাম। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে আবার নিয়ন্ত্রণে ফেরে পাকিস্তান। এরপর সেই শেষ বেলার নাটকীয়তা।
ইমাম ৬০ রানে ফিরলেও শাকিল অপরাজিত ৫৪ রানে। চতুর্থ দিনে পাকিস্তান তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮১
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২০২
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২০২/৫) ৬৪.৫ ওভারে ২৭৫ (ব্রুক ১০৮, স্টোকস ৪১, রবিনসন ৩, উড ৬, লিচ ০*, অ্যান্ডারসন ৪; আলি ৯-০-৪৪-০, ফাহিম ৫-২-১২-০, আবরার ২৯-৯-১২০-৪, নাওয়াজ ১০-০-৪২-১, জাহিদ ১০.৫-১-৫২-৩, সালমান ১-০-৫-০)।
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৫৫) ৬৪ ওভারে ১৯৮/৪ (শফিক ৪৫, রিজওয়ান ৩০, বাবর ১, শাকিল ৫৪*, ইমাম ৬০, ফাহিম ৩*; রবিনসন ১০-৩-১৪-১, লিচ ২০-০-৮৮-১, রুট ১৩-২-৩৬-০, উড ১১-০-৩৫-১, অ্যান্ডারসন ৬-১-৮-১, জ্যাকস ৪-০-১৫-০)।