খুলনার জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া এনামুল হক জয়ের মূল কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিধ্বংসী ফিফটি করা ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানকে।
Published : 23 Jan 2024, 08:42 AM
ওপেন করতে নেমে বড় রান তাড়ায় দলকে জিতিয়ে ফেরার নজির বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খুব একটা নেই। সেদিক থেকে এনামুল হক দারুণ বাহবা পেতেই পারেন। তবে তিনি নিজে কৃতিত্ব দিচ্ছেন আরেক সতীর্থকে। খুলনা টাইগার্স অধিনায়কের মতে, রান তাড়ায় এভিন লুইসের বিধ্বংসী ফিফটিই ম্যাচে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
বিপিএলের সোমবার এই ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল ফরচুন বরিশাল। ম্যাচের প্রথম ভাগে দাপট ছিল তাদেরই। ১৮৭ রানের পুঁজি গড়ে তারা ২০ ওভারে। এই মৌসুমে এই প্রথম কোনো দল ১৮০ রান ছাড়াতে পারল।
সেই রান নিয়েও পাত্তা পায়নি তারা। পুঁজি যে আদতে যথেষ্ট নয়, তা দ্রুতই বুঝিয়ে দেন লুইস। রান তাড়ায় প্রথম ৫ ওভারেই ৫টি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। ষষ্ঠ ওভারে তিনি আউট হয়ে যান। তবে নামের পাশে ততক্ষণে লেখা হয়ে গেছে ২২ বলে ৫৩ রান।
বিপিএলে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন লুইস, তার ব্যাটে তাণ্ডব দেখা গেছে আগেও। এবার প্রথম ম্যাচে দুটি ছক্কা মেরেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেই দেখালেন নিজের বিস্ফোরক রূপটি।
এই ইনিংসের পথেই বিপিএলে হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি কেবল ৩১ ইনিংসে। তার ব্যাটিং গড় ৩৮.৮৪, স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৬২। টুর্নামেন্টের ইতিহাসের হাজার রান ছোঁয়া ২৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট তারই।
তার ঝড়েই পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৮৭ রান তুলে ফেলে খুলনা। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে যা পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ রান।
লুইসের এই ব্যাটিং আরেকপ্রান্ত থেকে উপভোগ করেছেন এনামুল। দলের জয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানের ইনিংসের ভূমিকাই বেশি দেখেন খুলনা অধিনায়ক।
“আপনারা তো লুইসের খেলা দেখলেন। লুইসের ব্যাটিংই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সেখান থেকে টেনে নিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি শুধু ক্যারি করেছি। আফিফও তা-ই। আমাদের কাছে আগের দিনের মতোই মনে হয়েছে, (ওভারপ্রতি) ৭-৮ করে লাগবে। খেলাটা পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিয়েছে লুইস।”
“মিরপুরে ১৯০ রান তাড়া করা সহজ নয়। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, লুইসই খেলাটা বদলে দিয়েছে।”
লুইসের ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে রান রেটের চাপ অনেকটাই সরে যায় খুলনার। তবে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি ছিল তখনও। আফিফ হোসেনকে সঙ্গী করে সেই পথে এগিয়ে যান এনামুল। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন দুজন।
৩৫ বলে ৪১ রান করে আফিফ যখন বিদায় নেন, খুলনার জয় তখন অনেকটাই সময়ের ব্যাপার। শেই হোপের ১০ বলে ২৫ রানের ক্যামিওতে কাঙ্ক্ষিত সেই সময়টাও চলে আসে দ্রুত। আরেকপ্রান্তে এনামুল দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ৪৪ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে।
আগের ম্যাচ ১২২ রান তাড়ায় জিততেও বেশ বেগ পেতে হয়েছিল খুলনাকে। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯তম ওভারে গিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছিল তারা। সেই ম্যাচ থেকে পাওয়া শিক্ষা বরিশালের বিপক্ষে কাজে লেগেছে, বললেন এনামুল।
“আমরা গত ম্যাচ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। চট্টগ্রামের সঙ্গে ওই ম্যাচ আমরা ৬ উইকেটে নিয়ে গিয়েছি, অনেক পরে গিয়ে জিতেছি। ওই ম্যাচটা থেকে আমরা শিখেছি। আমাদের এরকম আলোচনা ছিল যে, পরেরবার এরকম পরিস্থিতি পেলে যেন সর্বোচ্চ ২ বা ৩ উইকেট পড়ে। সেই আলোচনা আমাদের আজকে কাজে দিয়েছে, লুইস আউট হয়ে যাওয়ার পর।”
“আফিফের সঙ্গে একটাই কথা হয়েছে যে, খেলাটা গভীরে নিয়ে যাই, আরেকটু লম্বা করি (ইনিংস), ঝুঁকি না নেই, এক-দুই করে নিতে থাকি, বাজে বল এলে কাজে লাগাব। এই পরিকল্পনা ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি ওই পরিকল্পনামতোই ইনিংস টেনে নেওয়ার।”
মিরপুরে রাতের ম্যাচে বোলারদের কাজ কঠিন করে তোলে শীতের শিশির। রাত যত বাড়তে থাকে, শিশিরের পরিমাণও বাড়তে থাকায় বোলারদের কাজও হয়ে ওঠে কঠিন। সেই সুবিধার কথা মানছেন এনামুলও। তবে সেটাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ খুলনা অধিনায়ক।
“তাদেরও সহায়তা করেছে, আমাদেরও করেছে। আসলে পার্থক্য খুব বেশি নয়… দেড় ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা। এরকম নয় যে খুব পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে মিরপুরে আমরা আগেও দেখেছি, (রাতের ম্যাচে) রান তাড়া একটু সহজ হয়। (বোলারদের জন্য) বল গ্রিপ করা কঠিন হয়। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, ভালো ম্যাচ হয়েছে।”