৩০০ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম সাকিব

বাঁহাতি স্পিনে তার চেয়ে কম ম্যাচ খেলে এই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি বিশ্ব ক্রিকেটে আর কেউ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 01:53 PM
Updated : 6 March 2023, 01:53 PM

অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারি সজোরে পুল করলেন রেহান আহমেদ। কিন্তু বল চলে গেল শর্ট মিড উইকেটে, অনেকটা নিচু হয়ে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঠের আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত পাঠালেন টিভি আম্পায়ারের কাছে। তার আগেই উল্লাসে মাতোয়ারা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসরা তো কাঁধেই তুলে নিলেন সাকিবকে। 

ইংল্যান্ডের সেটি নবম উইকেট। চট্টগ্রামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে তাতে আরেকধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সাকিব পা রাখলেন বড় এই মাইলফলকে। ওই উইকেটেই পূর্ণ হলো ওয়ানডেতে তার ৩০০ উইকেট। শান্ত-লিটনদের বাঁধনহারা উদযাপন সেজন্যই, যেখানে মধ্যমণি তর্কাতীতভাবে দলের সেরা ক্রিকেটার। 

২৯৬ উইকেট নিয়ে শেষ ওয়ানডেটি খেলতে নেমেছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে লড়ার মতো রান এনে দেন তিনি। এরপর বল হাতেও দলকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে। ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তার শিকার ৪ উইকেট।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ থেকে ৩০০ উইকেটেন উচ্চতায় প্রথম পা রাখলেন তিনিই। বাঁহাতি স্পিনে এই অর্জন আছে আর কেবল দুজনের-সনাৎ জয়াসুরিয়া ও ড্যানিয়েল ভেটোরি। তবে এই তিনজনের মধ্যে দ্রুততম সাকিবই।

সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে তিনশ উইকেট ছোঁয়া চতুর্দশ বোলার বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবার ইনিংসের নবম ওভারে ফিল সল্টকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেটটি নেন সাকিব। তার পরের ওভারে জোরের ওপর করা আন্ডার কাটারে বোল্ড হয়ে যান আহের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়।

পরে ২৭তম ওভারে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া জেমস ভিন্সকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বিদায় করে তিনশর কাছে পৌঁছান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের একজন। 

তিনশতম উইকেটের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় সাকিবকে। ৪১তম ওভারে শেষ স্পেলে ফিরে দ্বিতীয় বলে রেহানকে ফিরিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবের প্রথম শিকার ছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা। ২০০৬ সালে নিজের অভিষেক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডারকে সরাসরি বোল্ড করেছিলেন সাকিব। প্রায় ১৭ বছর পর ২২৭তম ওয়ানডেতে ৩০০তম উইকেটের দেখা পেলেন তিনি।

২২৭ ম্যাচে এই মাইলফলক অর্জন করলেন তিনি। ২৯১ ম্যাচে ৩০০ ছুঁয়ে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে আগের দ্রুততম ছিলেন ভেটোরি।

৬ হাজার রান পেরিয়ে গেছেন সাকিব বেশ আগে থেকেই। এবার তার পূর্ণ হলো দুর্দান্ত এক ডাবল। ওয়ানডে ক্রিকেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসে ৬ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের কীর্তি আছে আর কেবল দুজন অলরাউন্ডারের-সনাৎ জয়াসুরিয়া ও শহিদ আফ্রিদি।

তাদের দুজনের চেয়ে অনেক কম ম্যাচ খেলেই এ কীর্তি গড়লেন সাকিব। অনেক আগেই ৬ হাজার রান করে ফেলা জয়াসুরিয়ার ৩০০ উইকেট নিতে লেগেছিল ৩৯৭ ম্যাচ। আফ্রিদি এই ক্লাবে জয়াসুরিয়ার সঙ্গী হন ৩১৪ ম্যাচ খেলে।

একই ম্যাচে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস ও ৪ উইকেটের অলরাউন্ড কীর্তিতেও এখন ওয়ানডে ইতিহাসের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব। ৪ বার এমন নৈপুণ্য দেখিয়ে পেরিয়ে গেলেন তিনি আফ্রিদি ও ক্রিস গেইলকে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৫০ রানের এই জয় পুরোই যেন সাকিবময়।