রবীন্দ্রর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেমেছে ২৪০ রানে, অভিষেকে ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন নিল ব্রান্ড, ১২ উইকেটের দিন শেষে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 05 Feb 2024, 11:16 AM
বলটি ছিল বেশ খাটো লেংথের। কিন্তু পুল করার চেষ্টটায় গড়বড় করে ফেললেন রাচিন রবীন্দ্র। বল টার্ন করে তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয় পায়ে লেগে আলতো করে ছুঁয়ে দিল স্টাম্প। অসাধারণ এক ইনিংসের সমাপ্তি। প্রতিপক্ষ ক্রিকেটাররা মাঠের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসে হাত মেলালেন, পিঠ চাপড়ে দিলেন। দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন দর্শকদের প্রায় সবাই। তুমুল করতালিতে তাকে ড্রেসিং রুমে স্বাগত জানালেন সতীর্থরা।
মহাকাব্যিক এক ইনিংসর পর এমন কিছুই তো প্রাপ্য রবীন্দ্রর! টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকেই তিনি নিয়ে গেছেন ২৪০ রানে। তবে রেকর্ড যাত্রায় তাকে থামালেন যিনি, সেই নিল ব্রান্ডও পরে নিজের নাম তুলে ফেললেন ইতিহাসে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার বাঁহাতি স্পিনে শিকার করলেন ৬ উইকেট।
নিজের মূল কাজ ব্যাটিংয়ে অবশ্য শুরুটায় ব্যর্থ ব্রান্ড। ধুঁকছে তার দলও। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংস শেষ করেছে ৫১১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা সোমবার দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে।
প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন কেন উইলিয়ামসন ও রবীন্দ্র। উইলিয়ামসন আর বেশি দূর যেতে না পারলেও রবীন্দ্র পেরিয়ে যান ডাবল সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তার ৫৪৬ মিনিটের ইনিংস শেষ হয় ৩৬৬ বল খেলে। যেখানে ছিল ২৬ চার ও ৩ ছক্কা।
১১৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস প্রত্যাশার আগেই থামান ব্রান্ড। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আগের ৫১ ম্যাচে কখনোই ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পাননি তিনি। টেস্ট অভিষেকেই সেই স্বাদ পেয়ে গড়ে ফেললেন রেকর্ডও।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেকে ৬ উইকেট শিকার করা প্রথম স্পিনার তিনিই। সেই ১৮৮৯ সালে ৪৩ রান ৫ উইকেট নিয়ে আগের রেকর্ড গড়েছিলেন আলবার্ট রোজ-ইন্স। তিনিও ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার।
অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে এর আগে ৬ উইকেটের স্বাদ পেয়েছিলেন কেবল নাঈমুর রহমান। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৩২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক সেই কীর্তিতে এবার পেলেন একজন সঙ্গী।
ব্রান্ড রেকর্ড গড়ার আগে দাপট ছিল রবীন্দ্রর। ১১৮ রান নিয়ে তিনি শুরু করেন দিন। ১১২ রান নিয়ে দিন শুরু করা উইলিয়ামসন আর ৬ রান যোগ করেই বিদায় নেন। চরিত্রের সঙ্গে বেমানান এক শটে স্লগ করতে গিয়ে আউট হন তিনি। প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান রুয়ান দু সুয়াত।
দুজনের ৪৭২ বলের জুটি থামে ২৩২ রানে।
এরপর ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে আরেকটি শতরানের জুটি গড়ে তোলেন রবীন্দ্র। এই জুটি থামিয়েই প্রথম শিকার ধরেন ব্রান্ড। ৩৪ রানে থামা মিচেল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলেন বেশ জোরে। সেটিই দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে মুঠোয় জমিয়ে ফেলেন ব্রান্ড। জুটি শেষ হয় ১০৩ রানে।
এরপর টম ব্লান্ডেল ফেরেন দ্রুতই। গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে ঝড়ো এক জুটি গড়ে তোলেন রবীন্দ্র। তার ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় ২৪০ বলে।
৭১ বলে ৮২ রানের জুটি শেষ হয় ফিলিপসের বিদায়ে। দুটি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ করে আরেক ছক্কার চেষ্টায় আউট হন ফিলিপস। এরপর রবীন্দ্রও আর টেকেননি বেশিক্ষণ।
শেষ দিকে ৩ ছক্কায় ম্যাট হেনরির ৯ বলে ২৭ রানের ক্যামিওতে ৫০০ ছাড়িয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। তাকে বিদায় করার পর টিম সাউদিকেও ফিরিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে শেষ করেন ব্রান্ড।
ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটায় দুই অভিষিক্ত ওপেনারের ব্যাটে ছিল লড়াইয়ে ইঙ্গিত। প্রথম ওভারে দুই বাউন্ডারিতে শুরু করেন এডওয়ার্ড মুর। বেশ ইতিবাচক খেলে পরে আরও দুটি বাউন্ডারি তিনি আদায় করেন। আরেক পাশে ব্রান্ড আকড়ে ছিলেন উইকেট।
কিন্তু দশম ওভারে ব্রান্ডকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন কাইল জেমিসন। ওই ওভারেই তিনি শূন্য রানে বিদায় করে দেন আরেক অভিষিক্ত রেনার্ড ফন টন্ডারকে। ম্যাট হেনরি দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ এক বাউন্সারে বিদায় করে দেন ২৩ রান করা মুরকে।
এরপর লড়াইয়ের চেষ্টা করেন জুবাইর হামজা ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। দারুণ খেলতে থাকা হামজাকে ২২ রানে ফিরিয়ে ৪৪ রানের জুটি ভাঙেন মিচেল স্যান্টনার। বাকি সময়টা পার করে দেন দলের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় দুই ভরসা বেডিংহ্যাম ও কিগান পিটারসেন। তবে এখনও তাদের সামনে পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৪৪ ওভারে ৫১১ (আগের দিন ২৫৮/২) (উইলিয়ামসন ১১৮, রবীন্দ্র ২৪০, মিচেচল ৩৪, ব্লান্ডেল ১১, ফিলিপস ৩৯, স্যান্টনার ২, জেমিসন ৮*, হেনরি ২৭, সাউদি ০, ; অলিভিয়ের ৩০-৩-১১৯-০, মোরেকি ২৭-২-১১০-১, প্যাটারসন ৩২-৫-৯৮-১, দু সুয়াত ২৯-৭-৬১-২, ব্রান্ড ২৬-১-১১৯-৬)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৮ ওভারে ৮০/৪ (মুর ২৩, ব্রান্ড ৪, ফন টন্ডার ০, হামজা ২২, বেডিংহ্যাম ২৯*, পিটারসেন ২*; সাউদি ৮-২-৩১-০, হেনরি ৭-৩-১৫-১, জেমিসন ৮-২-২১-২, স্যান্টনার ৫-১-১৩-১)।