Published : 22 Dec 2022, 07:56 PM
ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম সাতজনের সবাই খেলেছেন ২৫ বলের বেশি, ছুঁয়েছেন ১৫ রান। দলে ফেরা মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৪ রান। তবু দলীয় সংগ্রহ স্পর্শ করেনি ২৫০। কারণ একটিই; ভালো শুরুর পরও আলগা শট খেলে উইকেট দিয়ে আসার মিছিলে নেমেছেন সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২২৭ রানে। টপ ও মিডল অর্ডারে বড় জুটি গড়ে ওঠেনি। পরে স্রেফ ১৪ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ছাই চাপা পড়েছে ভালো সংগ্রহের আশা।
তিন নম্বরে নেমে একপ্রান্ত আগলে রাখেন মুমিনুল। অন্য প্রান্তে তিনি দেখেন একের পর এক আত্মঘাতী শটের মহড়া। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে কোনো শট না খেলে এলবিডব্লিউ হন ২৪ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম বলেই আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ১৬ রানে আউট হন সাকিব।
দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শট খেলে দারুণ কিছুর আশা জাগালেও আচমকা আলগা শটে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন লিটন। তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ২৫ রান। ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ফর্মে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ শরীরের খুব কাছের বল কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।
তারা সবাই ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ কিছুক্ষণ কাটালেও উইকেটে লম্বা সময় থাকার চাহিদা মেটাতে পারেননি। জেমি সিডন্স এখানে টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা দেখছেন না। প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ বললেন, ব্যাটসম্যানদের মূল সমস্যা মানসিকতায়।
“এটি (সেট হয়ে উইকেট দিয়ে আসা) হতাশাজনক। আমরা তো কাজ করছিই। ওদেরকে বলি, ‘উইকেটে গেলে টিকে থাকতে হবে, ভালো শুরু পাওয়ার পর বড় স্কোর করতে হবে।’ কিন্তু অনেকটা চট্টগ্রামের মতোই হলো। তিন-চারজন বিশের আউট গিয়েছে, বাকিরা ১৫-১৬ রানে আউট এবং একজন শুধু বড় স্কোর পেয়েছে।”
“এভাবে ম্যাচ জেতার মতো স্কোর গড়া যায় না। উইকেটে থিতু হওয়ার পরেও তারা মনস্ত্বাত্তিক ভুল করেছে। স্পিনারদের বল কিছুটা ঘুরছিল, পেসারদের জন্য সহায়তা তেমন কিছুই ছিল না। উমেশকে (যাদব) ৫ উইকেট (৪ উইকেট) দেওয়া খুবই হতাশাজনক ছিল।”
মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কথা এর আগেও বলেছেন সিডন্স। তিনি ছাড়াও বিদেশি কোচদের মুখ থেকে প্রায়ই শোনা যায় এই কথা। তবে এটি থেকে উত্তরণের পথ ঠিক জানা নেই সিডন্সেরও। তার মতে, ব্যাটসম্যানদের নিজেদেরই নিতে হবে দায়, বের করতে হবে পথ।
“প্রায় ৬-৭ মাস (আসলে প্রায় ১১ মাস) ধরে বাংলাদেশে আছি। এসব নিয়ে অনেক কথা বলি আমরা, অনেক অনুশীলন করি। কিন্তু ব্যাটসম্যান যখন উইকেটে থাকে, তখন কাজটা শুধু তার নিজের। তাদের হয়ে আমি খেলতে পারব না।”
“সাকিব ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে চায়, লিটন একটু বেশিই জোরে মারার চেষ্টা করে, মিরাজ ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে। এরপর তারা মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বেরিয়ে যায় এবং চিন্তা করে ‘আমি কেন এমন শট খেললাম’… কিন্তু দায় তাদেরই নিতে হবে। একইভাবে ছয় ঘণ্টা খেলতে হবে। আমরা সবসময় কথা বলি, দিন শেষ করে সতীর্থের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। চটকদার ২৮-৩০ রান করলে চলবে না। কিন্তু বারবার একইরকম হয়ে আসছে।”
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বা ভুল কাটিয়ে ওঠা রাতারাতি সম্ভব নয় বলে একরকম অসহায় আত্মসমর্পনই করেন অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ।
“আমি টেকনিক্যাল ও মানসিক দিক নিয়ে কাজ করি। এক-দুইটির বাইরে আমার মনে হয় না কোনো আউটে টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল। তারা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বা বল তুলে মারতে চেয়েছে। রাতারাতি এগুলো ঠিক করে দেওয়া আমার জন্য কঠিন।”