দুইশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় ৫২ বলে ৮৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, টি-টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 09 Feb 2024, 04:47 PM
ক্যারিয়ারের শততম টি-টোয়েন্টিতে বিস্ফোরক ফিফটি উপহার দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। সঙ্গে জশ ইংলিস ও টিম ডেভিডের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বড় পুঁজি পেল অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ায় ভালো শুরুর পর পথ হারিয়ে ফেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অ্যাডাম জ্যাম্পার দারুণ বোলিংয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ১১ রানে।
স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে করে ২১৩ রান। এই মাঠের যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দুইশ ছাড়ানো স্কোর।
জবাবে ৫২ বলে ৮৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর একটা পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৬৩। জেসন হোল্ডারের শেষের ঝড়ে ২০২ পর্যন্ত যেতে পারে সফরকারীরা।
এই জয়ে ব্যাট হাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ওয়ার্নার। মাত্র ৩৬ বলে ১২ চার ও এক ছক্কায় ৭০ রান করে ম্যাচের সেরা বাঁহাতি ওপেনার। তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গে ইংলিস ৫ চার ও এক ছক্কায় ২৫ বলে করেন ৩৯ রান। দুজনের জুটিতে আসে ৪৮ বলে ৯৩ রান।
ডেভিড ১৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস।
দুই দলের পার্থক্যটা গড়ে দেন অবশ্য জ্যাম্পা। এই লেগ স্পিনার ৪ ওভারে ২৬ রানে নেন ৩ উইকেট। তার শিকার যথাক্রমে জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান ও আন্দ্রে রাসেল।
ম্যাচ শুরুর আগেই দারুণ এক কীর্তি গড়ে ফেলেন ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ও বিশ্বের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণেই ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি করেন তিনি। প্রথম দুজন নিউ জিল্যান্ডের রস টেইলর ও ভারতের ভিরাট কোহলি।
মাইলফলকের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হন ওয়ার্নার। ম্যাচের তৃতীয় বলে আকিল হোসেনকে বাউন্ডারিতে প্রথম রানের দেখা পান তিনি। পরের ওভারে হোল্ডারকে চার মারেন চারটি। বাঁহাতি স্পিনার আকিলের পরের ওভারে দুটি চারের পাশাপাশি ছক্কা হাঁকান একটি।
ওই ওভারেই বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তিনি। ৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৪০, এর মধ্যে ওয়ার্নারের একারই ৩৩!
এক পাশে দর্শক হয়ে থাকা ইংলিসও পরে হাত খোলেন। রাসেলকে রিভার্স স্কুপে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান তিনি হুক করে।
বিস্ফোরক জুটি ভাঙে ইংলিসের বিদায়েই। তার আগেই ওয়ার্নার ফিফটি তুলে নেন স্রেফ ২২ বলে। এর আগে ক্যারিয়ারের শততম ওয়ানডেতে শতক ও শততম টেস্টে দ্বিশতক করেছিলেন তিনি।
তিনে নামা মিচেল মার্শ ছক্কায় ওড়ান রাসেলকে। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। একই ওভারে মার্শ (১৩ বলে ১৬) ও ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেন আলজারি জোসেফ। দুজনই ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে।
মার্কাস স্টয়নিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি। সেই দাবি ভালোভাবেই মেটান ডেভিড। তার ও ম্যাথু ওয়েডের (১৪ বলে ২১) ২৩ বলে ৫০ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুইশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৮৯।
শেষ ওভারে টানা দুই বলে দুটিসহ ৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার রাসেল।
লক্ষ্য তাড়ায় ব্র্যান্ডন কিং ও চার্লসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের রান পঞ্চাশ স্পর্শ চার ওভারেই। পাওয়ার প্লেতে আসে ৭২ রান।
চার্লসকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে স্বস্তি ফেরান জ্যাম্পা। অনেকটা পেছনে সরে গিয়ে শট খেলে অফ সাইড বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন চার্লস। ২৫ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪২ রান করেন তিনি।
এক ওভার পর বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কিংও। ৩৭ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় গড়া তার ৫৩ রানের ইনিংস।
ম্যাক্সওয়েলকে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে একই ওভারেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রভম্যান পাওয়েল। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে ব্যর্থ হন শেই হোপ, পুরান, রাসেলও। নিজের কোটার শেষ ওভারে পুরান ও রাসেলকে বিদায় করেন জ্যাম্পা।
শেরফান রাদারফোর্ড ও রোমারিও শেফার্ড টিকতেই পারেননি। ১৪ বলে দরকার যখন ৫২ রান, জেসন বেহরেনডর্ফকে পরপর চার ও ছক্কা মেরে ম্যাচে খানিকটা উত্তেজনা ফেরান হোল্ডার। পরের ওভারে তিনি দুটি চার মারেন জশ হেইজেলউডকে।
শেষ ওভারে ২৭ রানের প্রয়োজনে শন অ্যাবটের প্রথম তিন বলে ছক্কা ও চার মেরে নাটকীয় কিছুর আভাস দেন হোল্ডার। তবে শেষ তিন বলে আসে কেবল ৫ রান। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৫ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন হোল্ডার।
আগামী রোববার দ্বিতীয় ম্যাচ হবে অ্যাডিলেইডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২১৩/৭ (ডেভিড ৭০, ইংলিস ৩৯, মার্শ ১৬, ম্যাক্সওয়েল ১০, স্টয়নিস ৯, ডেভিড ৩৭*, ওয়েড ২১, অ্যাবট ০, জ্যাম্পা ৪*, আকিল ৪-০-৪২-০, হোল্ডার ৩-০-৩৭-১, জোসেফ ৪-০-৪৬-২, রাসেল ৪-০-৪২-৩, শেফার্ড ৪-০-৩৮-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২০২/৮ (কিং ৫৩, চার্লস ৪২, পুরান ১৮, পাওয়েল ১৪, হোপ ১৬, রাসেল ১, রাদারফোর্ড ৭, শেফার্ড ২, হোল্ডার ৩৪*, আকিল ৭*, বেহরেনডর্ফ ৩-০-৩৮-১, হেইজেলউড ৪-০-৪৪-০, ম্যাক্সওয়েল ২-০-৩১-১, অ্যাবট ৪-০-৪১-১, জ্যাম্পা ৪-০-২৬-৩, স্টয়নিস ৩-০-২০-২)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১১ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার