আরও একবার পঞ্চাশ পেরিয়ে সেঞ্চুরির আগে থেমেছেন তামিম ইকবাল, এবারের আসরে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট নিয়েছেন রুয়েল।
Published : 03 Apr 2024, 06:50 PM
জাতীয় দল থেকে দূরে থাকা তামিম ইকবাল ধারাবাহিকভাবে রান করে চলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনি খেলেছেন চারটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। তবে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারছেন না অভিজ্ঞ ওপেনার। ম্যাচ জিততে অবশ্য সমস্যা হচ্ছে না প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের।
তামিমের আরেকটি ফিফটির দিনে শতরানের খুব কাছে গিয়ে থমকে গেছেন সৈকত আলি। তবে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। অন্য ম্যাচে রুয়েল মিয়ার বোলিং তোপে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিকে গুঁড়িয়ে অনায়াস জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
তামিম-মিঠুনের ফিফটি
রুবেল হোসেন ও শেখ মেহেদি হাসানের বোলিংয়ে বেশি দূর যেতে পারেনি পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। পরে রান তাড়ায় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলে প্রাইম ব্যাংককে জয়ে এনে দিলেন তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ মিঠুন।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে পারটেক্সকে ৪ উইকেটে হারায় প্রাইম ব্যাংক। ২০৯ রানের লক্ষ্য ৮ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে শিরোপাপ্রত্যাশী ক্লাবটি।
চলতি লিগের চতুর্থ ও লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ৭০তম ফিফটির ইনিংসে ৭৪ রান করেন তামিম। ১০০ বলের ইনিংসে এবারের আসরে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
তুলনামূলক সহজ লক্ষ্যে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন তামিম। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পারভেজ হোসেন এ দিন ফিরে যান ১৮ রানেই। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অভিজ্ঞ সাব্বির রহমান ও নাঈম ইসলামও।
চতুর্থ উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম ও মিঠুন। দুজনের কেউ অবশ্য শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। আসাদুজ্জামান পায়েলের বলে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আরও একবার ইনিংস তিন অঙ্কে নিতে ব্যর্থ হন তামিম।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে মিঠুনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ বলে ৫১ রান করে আউট হন তিনি। তবে দল তখন জয়ের কাছে। বাকি কাজ শেষ করেন অলক কাপালি, শেখ মেহেদি হাসান, আশিকুর জামানরা।
এর আগে পারটেক্সকে দুইশ পার করান দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মিজানুর রহমান ও তানবীর হায়দার। দলের সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন মিজানুর। ৪৪ বলে ৬ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন পারটেক্স অধিনায়ক। তানবীরের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান।
প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন রুবেল ও মেহেদি।
টানা চার জয়ে আসর শুরুর পর জোড়া পরাজয়ের ধাক্কা খেয়েছিল তামিমের দল। এরপর আবার টানা দুই ম্যাচ জিতল তারা। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বরে তারা। আট ম্যাচে পারটেক্সের জয় একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২০৮/৯ (মুনিম ২৯, জাহিদুজ্জামান ৩, মিজানুর ৪৭, শামসুল ০, তানবীর ৪০, সুশান্ত ১১, তোফায়েল ২৪, মুক্তার ১৩, গাফফার ২৪*, রাকিবুল ৪, আসাদুজ্জামান ২*; আশিকুর ৯-১-৪০-০, নাজমুল ১০-০-৩৫-১, সাকলাইন ১০-০-৬১-০, মেহেদি ১০-১-৩৬-৩, রুবেল ৯-০-৩২-৩, অলক ২-০-৪-১)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৮.৪ ওভারে ২১১/৬ (তামিম ৭৪, পারভেজ ১৮, সাব্বির ১৩, নাঈম ১০, মিঠুন ৫১, মেহেদি ১৪, অলক ১৫*, আশিকুর ১০*; গাফফার ১০-০-৪৯-১, তোফায়েল ৫.৪-০-৩৬-১, তানবীর ৭-০-৪১-১, রাকিবুল ১০-১-২৮-২, আসাদুজ্জামান ১০-১-৩১-১, মুক্তার ৬-০-২৫-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
সৈকতের ৯৩ রানের পর টিপু-সাইফের স্পিন-বিষ
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৬০ রানে জিতেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ২৪৮ রানের লক্ষ্যে ৩২ বল বাকি থাকতে ১৮৭ রানে গুটিয়ে গেছে রূপগঞ্জ।
আট ম্যাচে ষষ্ঠ জয়ে শ্রেয়তর নেট রান রেটের সৌজন্যে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে উঠে গেছে শেখ জামাল। সমান ম্যাচে একটি কম জয়ে রূপগঞ্জের অবস্থান পঞ্চম।
লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৫৬ রানের পর ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন সৈকত আলি। পাঁচ ম্যাচ হাসল তার ব্যাট। ৮ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি করলেন ১০৬ বলে ৯৩ রান।
সৈকতের ইনিংসের পর রূপগঞ্জকে আটকে রাখার কাজটি দারুণভাবে করেন দুই স্পিনার টিপু সুলতান ও সাইফ হাসান। দুজনই নেন ৩টি করে উইকেট। তাদের ২০ ওভার থেকে স্রেফ ৭০ রান করতে পারে রূপগঞ্জ।
রান তাড়ায় রূপগঞ্জের শুরুটা অবশ্য মন্দ ছিল না। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট পড়তে দেননি তৌফিক খান ও ফারদিন হাসান। এরপর সাইফের অফ স্পিনে নামে ধস। স্রেফ ১০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা।
৫৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন আমিনুল ইসলাম। একশর আগে ড্রেসিং রুমে ফেরেন আরও তিন ব্যাটসম্যান।
নবম উইকেট জুটিতে লড়াই করেন আমিনুল ও মেহেদি হাসান রানা। দুজন মিলে ৯৩ বলে যোগ করেন ৮৮ রান। তাতে পরাজয়ের ব্যবধান কমে কিছু।
চলতি লিগে তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৮৫ বলে ৬৪ রান করে এলবিডব্লিউ হন আমিনুল। মেহেদি করেন ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫০ বলে ৪৯ রান।
ম্যাচের শুরুতে সাইফ অবশ্য ব্যর্থ হন আসল কাজ ব্যাটিংয়ে। তিনে নামা রবিউল ইসলামও ফেরেন দ্রুত। তৃতীয় উইকেট ফজলে মাহমুদের সঙ্গে ৬০ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন সৈকত।
চতুর্থ উইকেটে নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটি গড়েন ৩০ বছর বয়সী ওপেনার। ৬৭ বলে পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন তিনি। দ্রুত রান তোলার তাগিদে মেরে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন ২৬ রান করা সোহান।
সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আল আমিন হোসেনের দারুণ ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হন সৈকত।
পরে দলকে এগিয়ে নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও জিয়াউর। অষ্টম উইকেটে দুজন মিলে ৬৪ বলে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। ৩২ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪০ রান করেন জিয়া। ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ বলে ৪০ রান।
তাদের পুঁজিটা দাঁড়ায় মাঝারি। কিন্তু সেই রানেই ধরা দেয় বড় জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪৭/৯ (সাইফ ০, সৈকত ৯৩, রবিউল ২, ফজলে মাহমুদ ১৮, সোহান ২৬, ইয়াসির ৪০, তাইবুর ১, জিয়াউর ৪০, টিপু ০, শফিকুল ২* রিপন ১*; আল আমিন ১০-২-৪৪-৪, মেহেদি ৮.৩-০-৫০-০, শহিদুল ১০-০৫৩-১, শুভাগত ১০-১-২৯-১, মাশরাফি ৮-১-৪২-১, রিজওয়ান ১-০-৫-০, আমিনুল ২.৩-০-২০-২)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৪.৪ ওভারে ১৮৭ (ফারদিন ১৬, তৌফিক ২৯, রিজওয়ান ১, সাদমান ৪, আমিনুল ৬৪, শামিম ০, শুভাগত ১২, শহিদুল ২, মাশরাফি ৪, মেহেদি ৪৯, আল আমিন ২*; টিপু ১০-০-২৬-৩, শফিকুল ৫.৪-০-২৬-১, সাইফ ১০-০-৪৪-৩, রিপন ৪-০-২৩-১, তাইবুল ৮-২-৩৬-১, রবিউল ৬-০-২৫-১, ফজলে মাহমুদ ১-০-৫-০)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৬০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৈকত আলি
রুয়েলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে রুয়েল ইসলামের বাঁহাতি পেসের জবাব দিতে পারেনি গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি। অনায়াস জিতে যায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
গাজী টায়ার্সকে স্রেফ ৮৪ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটের জায় পায় গাজী গ্রুপ। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ১৯.৩ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় তারা।
লিগের তৃতীয় রাউন্ডে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রুয়েল। সেটি ছাপিয়ে তিনি এবার ৬ ওভারে ১৮ রান খরচায় ধরেন ৫ শিকার।
১৭ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে ২৩ বছর বয়সী পেসারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট এটি। চলতি লিগের ৮ ম্যাচে এখন পর্যন্ত তার শিকার ১৮ উইকেট।
প্রথম ওভারে আশিকুর রহমানকে ফেরান রুয়েল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে তাকে করানো আর এক ওভার। ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে তিন ওভারের স্পেলে আশরাফুল আলম ও মহব্বত হোসেনের উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার।
২৫তম ওভারে ফের বোলিংয়ে এসে শামিম মিয়া ও ইকবাল হোসেনকে ক্যাচ আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
আগের রাউন্ডে অভিষেক ম্যাচে ৭ ছক্কার ঝড় তোলা মহব্বত এই ম্যাচেও গাজী টায়ার্সের হয়ে করেন সর্বোচ্চ ৪১ রান। এদিন ৫৫ বলের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা।
রান তাড়ায় ষষ্ঠ ওভারে আনিসুল ইসলামের উইকেট হারায় গাজী গ্রুপ। এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি পিনাক ঘোষ ও মেহেদি মারুফ। ৭৩ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষ করেন তারা।
৮ ম্যাচে গাজী গ্রুপের পঞ্চম জয় এটি। পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে উঠেছে তারা। সমান ম্যাচে গাজী টায়ার্সের জয় দুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি: ২৫.৪ ওভারে ৮৪ (আশিকুর ৪, মহব্বত ৪১, ইফতেখার ৩, আশরাফুল ০, শামিম ১৬, তাহজিবুল ০, সাঈদ ০, আরিদুল ৬, লিওন ৩*, ইকবাল ০, মারুফ ০; রুয়েল ৬-১-১৮-৫, মাহফুজুর ৮.৪-২-১৮-২, পারভেজ ৬-১-২৭-২, গাফফার ১-০-১০-০, মইন ৪-১-১০-১)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ১৯.৩ ওভারে ৮৬/১ (পিনাক ৪২*, আনিসুল ১১, মেহেদি ৩০*; লিওন ৬-২-১৯-০, শামিম ৩-০-১০-০, আরিদুল ৪-১-১৫-১, ইকবাল ৩-০-২১-০, মারুফ ৩-০-১৫-০, সাঈদ ০.৩-০-৬-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রুয়েল মিয়া