সল্টের ৯ ছক্কার সেঞ্চুরির পর শেষ ওভারে ব্রুকের ৩ ছক্কায় রোমাঞ্চকর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের পাহাড় টপকে গেল ইংলিশরা।
Published : 17 Dec 2023, 07:33 AM
বল তখনও বাতাসে। তবে শট দেখেই গন্তব্য বুঝে গেলেন ফিল সল্ট। নন-স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে তার গর্জনে ছাপিয়ে গেল চারপাশের আর সবকিছু। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে বিশাল রান তাড়ার নায়ক তিনিই। তবে শেষ সময়ের নায়ক তো হ্যারি ব্রুক! তার ছক্কাতেই নিশ্চিত হলো ইংল্যান্ডের জয়। আনন্দ চিৎকার করতে করতেই সল্ট ছুটে গিয়ে আলিঙ্গনে জড়ালেন তাকে। বোলার আন্দ্রে রাসেল কিংবা গ্যালারির দর্শকেরা যেন তখনও বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী হয়ে গেল!
ক্যারিবিয়ানদের হতভম্ব হওয়ার কারন আছে বটে। শুধু ওই ছক্কাই নয়, রাসেলের ওভারে ব্রুকের ব্যাট থেকে ছক্কা আসে আরও দুটি। সঙ্গে আরেকটি বাউন্ডারি। শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ব্রুকের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৫ বলেই উঠে যায় ২৪ রান- ৪, ৬, ৬, ২, ৬! দারুণ জয়ে ইংল্যান্ড টিকে যায় সিরিজে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজের উত্তেজনা জিইয়ে রাখল ইংল্যান্ড। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।
গ্রেনাডায় শনিবার নিকোলাস পুরানের ৮২ রানের ইনিংসে ক্যারিবিয়ানরা ২০ ওভারে তোলে ২২৬ রান। ইংল্যান্ড সেই রান টপকে যায় ১ বল বাকি রেখে।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরিতে ৯ ছক্কায় ৫৬ বলে ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন সল্ট। তবে তার এমন ইনিংসও হয়তো জয়ের জন্য যথেষ্ট হতো না ব্রুকের শেষের ক্যামিও না হলে। ম্যান অব দা ম্যাচ উপযুক্তভাবে সল্টই। তবে ৭ বলে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসে শেষের কাজ সারেন ব্রুক।
শেষ ৭ ওভারে ১০৪, ৫ ওভারে ৮৩, ৩ ওভারে ৫১ আর শেষ ওভারে ২১- এমন কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ম্যাচ জিতে যায় ইংল্যান্ড।
শেষ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ায় জয়ের যৌথ রেকর্ড এটি। গত মাসেই ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২১ রানের চ্যালেঞ্জে অস্ট্রেলিয়া জিতে যায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে।
দুই দল মিলিয়ে এই ম্যাচে মোট ছক্কা হয়েছে ৩৪টি। এর চেয়ে বেশি ছক্কা দেখেছে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আর কেবল একটি ম্যাচ। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ম্যাচে সেঞ্চুরিয়নে হয়েছিল ৩৫ ছক্কা।
সেন্ট জর্জেস পার্কে শনিবার রান তাড়ায় ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন ফিল সল্ট ও জস বাটলারের উদ্বোধনী জুটি। ৬৯ বলে ১১৫ রানের জুটিতেই বিশ্বাসটা ছড়িয়ে যায় ইংলিশদের ড্রেসিং রুমে।
সাম্প্রতিক সময়ে ছন্দে না থাকা বাটলার প্রথম ওভারেই আকিল হোসেনকে দুই ছক্কায় শুরু করেন। পরের ওভারে জেসন হোল্ডারকে চার ও ছক্কা মারেন সল্ট। ছুটতে থাকে রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আসে ৭৩ রান। আকিলের বলে সল্টের ছক্কায় দশম ওভারে আসে দলের শতরান।
এই জুটি ভাঙে বাটলারের বিদায়ে (৩৪ বলে ৫১)। রাসেলের বলে আকিল ও আলজারি জোসেফের দুর্দান্ত যৌথ প্রচেষ্টায় আউট হন ইংলিশ অধিনায়ক।
তিনে নামা উইল জ্যাকসকে পরের ওভারেই ফেরান গুডাকেশ মোটি। তবে সল্টের সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোনের জুটিতে চলতে থাকে ইংল্যান্ডের রান তাড়া। এই জুটিতে ৭০ রান উঠে যায় ৩৪ বলে।
হোল্ডারকে টানা দুটি ছক্কার পর সিঙ্গেল নিয়ে সল্ট সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ৫১ বলে। তবে পরের বলেই লিভিংস্টোন আউট হয়ে যান ১৮ বলে ৩০ রান করে।
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন তখন ১৩ বলে ৩৭ রান। হ্যারি ব্রুক নেমে প্রথম বলটিই পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে।
১৯তম ওভারে সল্টের ছক্কার পরও রান আসে কেবল ১০। শেষ ওভারে তাই প্রয়োজন পড়ে ২১ রানের। সেখানেই ব্রুকের বীরত্ব।
রাসেলের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ফাইন লেগের পাশ দিয়ে চার মারেন ব্রুক। পরেরটিতে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো শটে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। তৃতীয় বলটি লেগ স্টাম্পে ফুল টস করে বসেন রাসেল। ব্রুক স্রেফ ব্যাট ঘুরিয়েই বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে।
পরের বলে পুল শটে দুই রান। এরপর থার্ডম্যানের ওপর দিয়ে ছক্কায় জয়ের ঠিকানায় এবং তাকে জড়িয়ে ধরে সল্টের সেই গগণবিদারী চিৎকারে উদযাপন।
ম্যাচের প্রথম ভাগে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২৩ রান তাড়ায় জয় তো আর প্রতিদিন দেখা যায় না!
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা যদিও খুব ভালো ছিল না। প্রথম ওভারে মইন আলির বলে দুটি বাউন্ডারি মারলেও ওই ওভারেই ফিরে যান আগের ম্যাচের নায়ক ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে কাইল মেয়ার্সকে শূন্যতেই ফেরান রিস টপলি।
তবে ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দমে যায়নি তারা। নিকোলাস পুরান ও শেই হোপ শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। তৃতীয় উইকেটে ৫৪ রান তোলেন তারা ৬.১ ওভারে।
১৯ বলে ২৬ করে হোপ বিদায় নিলেও রভম্যান পাওয়েলকে নিয়ে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন পুরান। এই জুটিতে আসে ৩২ বলে ৫৮ রান। পাওয়েল ফেরেন ২১ বলে ৩৯ রান করে।
পুরানের ফিফটি আসে ৩৭ বলে। তখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ১৮০ রানের পাশেপাশে কোনো স্কোরে যেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ১৪৩।
কিন্তু পরের ওভারগুলোতে টর্নেডো বইয়ে দেন পুরান ও শেরফেন রাদারফোর্ড। দুজনের জুটিতে আসে ২৯ বলে ৬৩ রান।
টাইমাল মিলসের এক ওভারে দুই ছক্কা ও তিন চারে ২৫ রান নেন দুজন। ৬টি করে চার ও ছক্কায় ৪৫ বলে ৮২ করে আউট হন পুরান। প্রায় চার বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে রাদারফোর্ড ১৭ বলে করেন ২৯।
বাকি ছিল তখনও। শেষ দিকে ঝড় তোলেন জেসন হোল্ডার। ইনিংসের শেষ তিন বলে ছক্কা, চার, ছক্কাসহ ৮ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ ৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৭৯ রান।
কিন্তু ইংলিশরা এ দিন ফিরিয়ে দেয় সবটুকুই। পুরানের জবাব হয়ে আসেন সল্ট, হোল্ডারের শেষের ঝড় যেমন ছাপিয়ে যান ব্রুক।
সিরিজের শেষে দুই ম্যাচ ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে, আগামী বুধ ও শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২২২/৬ (কিং ৮, মেয়ার্স ০, পুরান ৮২, হোপ ২৬, পাওয়েল ৩৯, রাদারফোর্ড ২৯, রাসেল ৮*, হোল্ডার ১৮*; মইন ৩-০-২৬-১, টপলি ৪-০-৩২-১, অ্যাটকিনসন ২-০-৩৩-০, লিভিংস্টোন ২-০-২৭-০, রাশিদ ৪-০-৩২-২, মিলস ২-০-৩২-০, কারান ৩-০-৩৪-২)।
ইংল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ২২৬/৩ (সল্ট ১০৯*, বাটলার ৫১, জ্যাকস ১, লিভিংস্টোন ৩০, ব্রুক ৩১*; আকিল ৪-০-৪৪-০, হোল্ডার ৪-০-৫২-১, রাসেল ৩.৫-০-৫০-১, মোটি ৪-০-৩০-১, জোসেফ ৪-০-৫০-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তিনটি শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফিল সল্ট।