অনুশীলনে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করায় নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন পাকিস্তানের তরুণ এই ফাস্ট বোলার।
Published : 08 Sep 2022, 10:54 AM
তরুণ এক গতিময় ফাস্ট বোলার, সম্ভাবনা অপার। এই পরিচয়েই নাসিম শাহকে চিনত ক্রিকেট বিশ্ব। তার ব্যাটিং সামর্থ্য জানার সুযোগই সেভাবে হয়নি আগে। সেই নাসিম শাহ এখন ব্যাটিং দিয়েই হয়ে উঠেছেন আলোড়নের প্রতিশব্দ! পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী এই তারকার অবশ্য দাবি, গোটা দুনিয়া তার ব্যাটিংয়ের কথা না জানলেও নিজের ব্যাটিংয়ে তার ছিল প্রবল আস্থা। তাক লাগানো ছক্কা দুটির জন্ম সেই বিশ্বাস থেকেই।
দুর্দান্ত বোলিং দিয়ে এমনিতেই আলোচনায় ছিলেন নাসিম। কিন্তু এশিয়া কাপে বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক তিনি ব্যাট হাতে। শেষ ওভারে বিস্ময় জাগানিয়া দুই ছক্কায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন তিনি ক্রিকেট বিশ্বেই। নাসিম নিজেই ম্যাচ শেষে হাসতে হাসতে বলছেন, “সবাই ভুলেই গেছে যে আমি বোলার…।”
জয়ের জন্য শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। উইকেটে তখন ১০ নম্বরে নামা নাসিম শাহর সঙ্গী শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাসনাইন। আফগানিস্তানের জয় মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। শেষ ওভারে বোলার ফজলহক ফারুকি, তখনও পর্যন্ত যিনি অসাধারণ বোলিং করে আফগানদের নায়ক।
কিন্তু দুটি বলেই ফারুকি হয়ে উঠলেন অনেকটা খলনায়ক। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলই ইয়র্কার করার চেষ্টায় তিনি করে বসলেন ফুল টস। দুটিকেই ছক্কায় উড়িয়ে পাকিস্তানকে ফাইনালে তুললেন নাসিম শাহ।
নাসিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ টি-টোয়েন্টি এটি। আগে একবারই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বিদায় নিয়েছিলেন প্রথম বলেই। টেস্ট খেলেছেন তিনি ১৩টি। মোট রান ৫৬। সব মিলিয়ে, ব্যাটিংয়ের খুব ভালো কোনো বিজ্ঞাপন তিনি মেলে ধরতে পারেননি আগে।
এবার কীভাবে পারলেন, ম্যাচ শেষে সেই গল্প শোনালেন তিনি।
“কাজটা কঠিন ছিল। তবে আমি বিশ্বাস করেছিলাম, ছক্কা মারতে পারি। ব্যাটিং অনুশীলন তো করি অনেক। ছক্কা মারার অনুশীলনও করি। ওদের ফিল্ড পজিশন দেখছিলাম, ফিল্ডার ওপরে ছিল। কাজেই জানতাম, ইয়র্কার করার চেষ্টা করবে। সেটা করতে গিয়ে ফুল টস হয়েছে। অনুশীলনে তো অনেক হিট করি। এখানেও চেষ্টা করেছি, লেগে গেছে।”
শেষ ওভারের আগে নাসিমকে দেখা যায় উইকেটে সঙ্গী মোহাম্মদ হাসনাইনের সঙ্গে ব্যাট বদল করতে। সেটির কারণও জানালেন তিনি।
“নিজের ব্যাট খুব ভালো লাগছিল না আমার। এজন্য মনে হলো, ব্যাট বদলাই। হাসনাইনকে এটাই বলেছিলাম যে, ‘আমাকে ব্যাট দিন, বাকি সব কিছু আল্লাহর ওপর আর আমার ওপর ছেড়ে দিন।’ চেষ্টা করেছি, বিশ্বাস ছিল, হয়ে গেছে।”
নাসিম যখন উইকেটে যান, তখনও টিকে আছেন আসিফ আলি। যিনি মূলত পাকিস্তানের ‘ফিনিশার’, এই সব পরিস্থিতিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে দল। আসিফ ততক্ষণে একটি ছক্কা মেরেছেন, নাসিম উইকেটে যাওয়ার পর আরেকটি ছক্কাও মারেন। তবে শেষের আগের ওভারে তিনি আউট হয়ে যান। পাকিস্তানের সম্ভাবনার মৃত্যুও তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু নাসিম জানালেন, তিনি বিশ্বাস হারাননি।
“শুরুতে আমি আসিফ ভাইকে সিঙ্গেল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি আউট হওয়ার পর নিজের ওপর দায়িত্ব নিয়েছি। বিশ্বাসটা আমার ছিল। ৯ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর আসলে কারও আশা থাকে না। তবে আমি ঠিক করেছিলাম মারব। অনুশীলন তো করি অনেক। আজ কাজে লেগে গেল।”