বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে উড়িয়ে ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল ফরচুন বরিশাল।
Published : 26 Feb 2024, 03:40 PM
ম্যাচ শুরুর আড়াই ঘণ্টা আগে থেকেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আশেপাশে লোকে লোকারণ্য। সময়ের সঙ্গে সেই জনস্রাতে জোয়ার এলো আরও। ম্যাচ যত গড়াল, গ্যালারি ভরে উঠল ক্রমেই। সরকারী ছুটির দিনে সব মিলিয়ে দেখা গেল উৎসবের আবহ। কিন্তু ক্রিকেটীয় আবহে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে ঝাঁজ ছিল, সেই ছোঁয়া পাওয়া গেল না মাঠের লড়াইয়ে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে চট্টগ্রামকে পাত্তাই দিল না বরিশাল।
বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে ফাইনালের লড়াইয়ে টিকে রইল ফরচুন বরিশাল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার বরিশালকে জয়ের মঞ্চ গড়ে দেন বোলাররা। ৫ বোলারের সবাই দারুণ বোলিংয়ে চট্টগ্রামকে আটকে রাখেন ১৩৫ রানে। তাদের চারটি জুটি স্পর্শ করে ২০ রান, কিন্তু কোনোটিই ৩০ ছুঁতে পারেনি।
তামিম ইকবাল ও কাইল মেয়ার্সের ব্যাটে এরকম তুড়ি বাজিয়েই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বরিশাল ৩১ বল বাকি রেখে।
৪ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে বরিশালের সেরা বোলান মেয়ার্স। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার পরে ব্যাট হাতে উপহার দেন ৫ ছক্কায় ২৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস। ম্যাচের সেরা যে তিনিই, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
৪৩ বলে ৫২ রানে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। টুর্নামেন্টের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চারশ ছুঁয়ে বরিশাল অধিনায়কের রান ম্যাচ শেষে ৪৪৩।
বরিশালের রান তাড়ার শুরুটা যদিও ছিল অস্বস্তিময়। মৌসুমে প্রথমবার ওপেন করার সুযোগ পেয়ে সৌম্য সরকার প্রথম ওভারেই উইকেট বিলিয়ে দেন শুভাগত হোমকে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায়।
পরের ওভারের প্রথম বলে সুযোগ দেন তামিমও। কিন্তু আল আমিন হোসেনের বলে থার্ডম্যান সীমানায় ক্যাচ নিতে পারেননি সৈকত আলি। উল্টো চার হয়ে যায় তা। জীবন পেয়ে ওই ওভারে আরও দুটি চার মারেন তামিম।
এরপর দুই প্রান্ত থেকেই রানের যে ফোয়ারা ছুটতে থাকে, তাতে বাঁধ দিতে পারেনি চট্টগ্রাম। শুভাগতকে ছক্কায় ওড়ান মেয়ার্স, দুটি চার মারেন তামিম।
চার ওভার শেষে তামিমের রান ছিল ১১ বলে ২১, মেয়ার্সের ১১ বলে ১৫। পরে শুভাগতর এক ওভারে তিন ছক্কা দুই চারে ২৬ রান নিয়ে চট্টগ্রামকে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে দেন মেয়ার্স।
পাওয়ার প্লেতে বরিশাল তোলে ৭৩ রান।
আগের তিন ম্যাচে ৪৬, ৪৮ ও ২৫ রানের ইনিংসের পর মেয়ার্স এবার ফিফটির দেখা পান ২৫ বলে। এরপরই অবশ্য বিলাল খানের বলে আউট হয়ে যান তিনি। তবে ততক্ষণে ম্যাচের উত্তেজনা একরকম শেষই। দশম ওভারেই শতরান পেরিয়ে যায় বরিশাল। তামিম-মেয়ার্সের জুটিতে আসে ৫৪ বলে ৯৮ রান।
বাকি সময়টায় ধীরেসুস্থে খেলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন তামিম ইকবাল। ১১ বছর পর বিপিএলে ফিরে ডেভিড মিলার কিছুটা ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নেন কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগে। ‘ফিনিশার’ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান অবশ্য ম্যাচ শেষ করতে পারেনি। ১৩ বলে ১৭ করে বিদায় নেন তিনি। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে কাজ শেষ করেন তামিম।
ম্যাচের প্রথম ভাগে চট্টগ্রামে ভোগান্তির শুরু ম্যাচের প্রায় শুরু থেকেই। দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন দারুণ ফর্মে থাকা তানজিদ হাসান। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের শর্ট বলে পুল করার চেষ্টায় সহজ ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ফেরেন এই ওপেনার।
একাদশে ফেরা ইমরানউজ্জামান তিনে নেমে ১৩ বল খেলে করতে পারেন কেবল ৭ রান।
আরেকপ্রান্তে জশ ব্রাউনের ব্যাটিং ছিল অনেকটা ‘হট অ্যান্ড কোল্ড।’ বেশ কিছ ডট বল খেলেন অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটসম্যান, এর ফাঁকে খেলেন বড় শটও। তাইজুল ইসলামকে দুটি ছক্কা মারেন তিনি, মেয়ার্সকে একটি। দুটি চারও আসে তার ব্যাট থেকে।
২০ রানে মেয়ার্সের বলে একটি সুযোগ দেন ব্রাউন। কিন্তু অনেক উঁচুতে ওঠা বল মিড অফে হাতে জমাতে ব্যর্থ হন তামিম। নতুন জীবনে খুব বেশি দূর তিনি এগোতে পারেননি। ওবেড ম্যাককয়ের বলে বিদায় নেন ২৪ বলে ৩৪ রান করে।
চট্টগ্রাম আরেকটি বড় ধাক্কা খায় একটু পরই। মিডল অর্ডারের বড় ভরসা টম ব্রুস ফিরে যান ১১ বলে ১৭ রান করে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান মেয়ার্স।
এরপর দায়িত্ব ছিল দেশের সৈকত আলি ও অধিনায়ক শুভাগত হোমের ওপর। কিন্তু দেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার পারেননি সময়ের দাবি মেটাতে। জেমস ফুলারকে দারুণ একটি ফ্লিক শটে ছক্কা মারার পর সৈকত (১১) ফিরতি ক্যাচ দেন তাইজুলকে।
শুভাগত প্রথম বলেই জীবন পান ক্যাচ নেওয়ার সময় ম্যাককয় পিছলে পড়ায়। এরপর ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু থেমে যান ১৬ বলে ২৪ রান করে। মেয়ার্সের লেগ কাটারে উপড়ে যায় তার স্টাম্প।
চট্টগ্রামের শেষ ভরসা ছিল রোমারিও শেফার্ড। ক্রিজে যাওয়ার পরপর দুটি চার আসে তার ব্যাট থেকে। তবে চাপের মধ্যে নিজের সহজাত ব্যাটিং তিনি করতে পারেননি। বিপিএল অভিষিক্ত ইংলিশ পেসার জেমস ফুলারের নিচু হওয়া বলে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার বিদায় নেন ১৬ বলে ১১ রান করে।
এরপর লোয়ার অর্ডাররা কিছুটা লড়াই করে ১৩৫ রানে নিয়ে যান দলকে।
বরিশালের মতো দলের বিপক্ষে এই পুঁজি নিয়ে লড়াই করা কঠিন। চট্টগ্রাম তা পারেওনি। ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জে তাই আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন তামিমরা।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের বিপক্ষে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে বরিশাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৩৫/৯ (ব্রাউন ৩৪, তানজিদ ২, ইমরানউজ্জামান ৭, ব্রুস ১৭, সৈকত ১১, শুভাগত ২৪, শেফার্ড ১১, নিহাদ ১০, সাকিল ৮*, আল আমিন ১, বিলাল ১*; মেয়ার্স ৪-০-২৮-২, সাইফ ৪-০-২৮-২, তাইজুল ৪-০-২২-১, ম্যাককয় ৪-০-২৯-২, বিলাল ৪-০-২৬-১)।
ফরচুন বরিশাল: ১৪.৫ ওভারে ১৩৬/৫ (তামিম ৫২*, সৌম্য ০, মেয়ার্স ৫০, মিলার ১৭, মুশফিক ৬*; শুভাগত ৩-০-৪৫-০, আল আমিন ২-০-২০-০, বিলাল ৪-০-৩০-১, শেফার্ড ৩-০-১৭-১, সাকিল ২-০-১৭-০, নিহাদ ০.৫-০-৫-০ )।
ফল: ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কাইল মেয়ার্স।