বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন, বাদ পড়া ক্রিকেটারদের জন্য ফেরার দরজা সবসময়ই খোলা।
Published : 15 Jul 2023, 05:57 PM
ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে দলে নেই জাহানারা আলম, রুমানা আহমেদ। স্কোয়াডে থেকেও একাদশে সুযোগ মিলছে না সালমা খাতুনের। তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়া পথ চলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জানিয়েছেন, তাদের অভাব তেমন অনুভব করছে না দল।
গত মে মাসে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয় সালমা ও রুমানাকে। সামনে অনেক খেলা ও ফিটনেসের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে। বিশ্রাম শেষে ভারতের বিপক্ষে দলে ফেরেন সালমা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটিও খেলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
কিন্তু ভারত সিরিজে সুযোগ মেলেনি রুমানার। একইসঙ্গে লঙ্কান সিরিজের দলে থাকলেও এবার বাদ পড়েছেন জাহানারা। এই দুজনের দলে না থাকার ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দিতে চাননি নির্বাচকরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটাও নিম্নমুখী। তাই নতুনদের সুযোগ দেওয়ার ভাবনা থেকেই হয়তো সুযোগ মেলেনি রুমানা-জাহানারার।
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তাদের বাদ পড়া নিয়ে কোনো কথা বলেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি জানালেন, বাদ পড়া ক্রিকেটারদের জন্য সবসময়ই ফেরার দরজা খোলা।
“এখন পর্যন্ত কি অনুভব হচ্ছে এমন (সালমা-জাহানারা-রুমানাদের অভিজ্ঞতার অভাব) কিছু? তা কিন্তু নয়। বিষয়টা হচ্ছে, যারা নেই, তাদের আবার আসার অনেক সুযোগ আছে। যারা খেলছেন, তারাও কিন্তু ভালো করছেন।”
গত বছর ৮ ওয়ানডে খেলে রুমানার উইকেট কেবল ৫টি, রান করেছেন ৮ ইনিংস মিলিয়ে ৭০। টি-টোয়েন্টিতে ২০১৯ সালে একটি ফিফটির পর টানা ২০ ইনিংসে আর পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি।
সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তার পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালো হলেও দুর্দান্ত কিছু ছিল না। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে সাত ইনিংসে দুই ফিফটিসহ ৩৬.৪০ গড়ে করেন ১৮২ রান। লেগ স্পিনে ওভারপ্রতি স্রেফ ২.৭০ রান খরচায় তিনি ধরেন ১১ শিকার।
জাহানারার পারফরম্যান্সের গ্রাফও নিম্নমুখী বেশ কিছু দিন ধরেই। তিনি সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে উইকেট নিতে পেরেছেন কেবল ৮টি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন পাঁচের বেশি। সবশেষ ১৫ ওয়ানডেতে তাকে দিয়ে ১০ ওভার বোলিং করাতে পারেননি অধিনায়ক।
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজেকে ফিরে পাননি জাহানারা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের অধিনায়কত্ব করা ৩০ বছর বয়সী পেসার ৭ ইনিংসে উইকেট নেন ৭টি। ওভারপ্রতি খরচ করেন ৪.৩১ রান, এই টুর্নামেন্টের বাস্তবতায় যা বেশ খরুচেই বলা চলে।
তাদের দুজনকেই তাই নামতে হবে দলে জায়গা ফিরে পাওয়ার অভিযানে। সালমার ক্ষেত্রে অবশ্য তা নয়। বিশ্রাম শেষে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই দলে ফিরেছেন সবশেষ প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট পাওয়া অফ স্পিনার। তবে তার লড়াইটা একাদশে জায়গা পাওয়ার।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩.২ ওভারে ৩২ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকেন ৩২ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। পরের দুই ম্যাচে তাকে আর একাদশে রাখেনি দল। সুযোগ দেওয়া হয় লেগ স্পিন অলরাউন্ডার ফাহিমা খাতুনকে।
ওয়ানডে সিরিজের আগে এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করলেন নিগার।
“সালমা আপু নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা অফ স্পিনার। টিম কম্বিনেশনের কারণে তিনি বাইরে আছেন। এটা তিনিও জানেন। সবাই এটি ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছে।”
“আমরা দেখছি, ভারত হচ্ছে লেগ স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল। তাই আমি একটা বাড়তি লেগ স্পিনার ব্যবহার করছি। এতে দলও সুবিধা পাচ্ছে। তো দলের জন্য যেটা ভালো হচ্ছে, ম্যানেজমেন্ট সেটাই করছে।”
সালমা ছাড়াও প্রথম ম্যাচের দলে অফ স্পিনার ছিলেন আরও একজন- সুলতানা খাতুন। ২৫ রানে ২ উইকেট পেয়ে তিনি ঠিকই জায়গা ধরে রাখেন একাদশে। পরের দুই ম্যাচেও দারুণ বোলিংয়ে আরও ৫ উইকেট নেন ২৭ বছর বয়সী স্পিনার।
শ্রীলঙ্কা সফরে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকেই দলে নিজের জায়গা প্রায় পোক্ত করে ফেলেছেন সুলতানা। লঙ্কানদের বিপক্ষে বৃষ্টিময় দুই ওয়ানডেতে তার শিকার ২ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলে ধরেছেন ৮ শিকার।
ভবিষ্যতে তার কাছে আরও বড় আশা বাংলাদেশ অধিনায়কের।
“সুলতানা নতুন বলে অনেক বেশি ধারাবাহিক। দলে ওর দায়িত্ব যেটা, ও নতুন বলে বল করছে, আক্রমণাত্মক বোলিং করছে। পরে এসে ফিনিশিংও করছে। ও অনেক বেশি পরিশ্রম করে। আমাদের নতুন যে স্পিন কোচ (দিনুকা হেতিয়ারাচ্চি) এসেছেন, ওর সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। বোলিং অ্যাকশনের জন্য ও অনেক বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। কারণ এজন্য অনেক বেশি ড্রিফট পায়, টার্ন পায়।”
“সবচেয়ে বড় কথা, ও উইকেটটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে এবং কোন ব্যাটারের বিপক্ষে কীভাবে বল করলে সাফল্য পাবে, বোলার হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি এটা বুঝতে পেরেছে। যে কারণে ও সাফল্য পেয়েছে। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে অনেক ভালো করেছে। আমার চাওয়া থাকবে, ওয়ানডেতেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখুক। ওর জন্যও অনেক সুযোগ থাকবে নিজেকে মেলে ধরার।”