জয়ের ফিফটি ও হাবিবুরের তাণ্ডবে সাকিবদের হারাল খুলনা

আক্ষরিক অর্থেই নিয়মরক্ষার ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করল খুলনা টাইগার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদক
Published : 10 Feb 2023, 05:15 PM
Updated : 10 Feb 2023, 05:15 PM

আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে শেষ চারের লাইন-আপ। সেরা দুইয়ের হিসেব নিকেশও চুকে গেছে দিনের প্রথম ম্যাচে। তবু ছুটির দিন হওয়ায় ফরচুন বরিশাল ও খুলনা টাইগার্সের ম্যাচের প্রথম ইনিংসে প্রায় ভরা ছিল শের-ই বাংলার গ্যালারি। বরিশালের ইনিংস শেষ হতেই তা কমতে শুরু করে। তবে যারা ছিলেন মাঠে তারা দেখলেন খুলনার দুই তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় ও হাবিবুর রহমানের তাণ্ডব। দুজনের মুগ্ধতা ছড়ানো ব্যাটিংয়ে দারুণ এক জয় পেয়েছে খুলনা। 

আক্ষরিক অর্থেই নিয়মরক্ষায় পরিণত হওয়া ম্যাচে বরিশালকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা। ১৭০ রান তাড়ায় ৩ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে তারা।  

টানা ছয় হারের পর সান্ত্বনার জয় পেল খুলনা। ১২ ম্যাচে পঞ্চম পরাজয়ের স্বাদ পেল বরিশাল। এলিমিনেটর ম্যাচে রোববার রংপুর রাইডার্সের মুখোমুখি হবেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজরা।  

এবারের বিপিএল দিয়েই স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া হাবিবুর আগে সুযোগ পাওয়া ম্যাচগুলিতে তেমন কিছু করতে পারেননি। আসরে দলের শেষ ম্যাচে রাখলেন সামর্থ্যের ছাপ। 

ছয় নম্বরে নেমে শেষ দিকে রানের চাপ সামলে স্রেফ ৯ বলে ৩০ রানের টর্নেডো ইনিংসে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। ২ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি দারুণ ছক্কা।  

শেষ ওভারে ৯ রানের সমীকরণে এই ম্যাচে বরিশালের অধিনায়কত্ব করা মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় বলে আউট হতে পারতেন হাবিবুর। ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন সালমান হোসেন। সেই বলে বোনাস ৪ পেয়ে যায় খুলনা। 

পরে ৪ রান বাকি থাকতে একই জায়গা দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে শেষ করেন ম্যাচ। হাবিবুরের ঝড়ের আগে খুলনার ইনিংস এগিয়ে নেন জয়। দারুণ ফিফটিতে ৪৩ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।  

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই চমক দেয় বরিশাল। এনামুল হকের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করতে নামেন মাহমুদউল্লাহ। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি মারেন এনামুল। 

শফিকুল ইসলামের করা দ্বিতীয় ওভারের মাঝে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে প্রায় ১০ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। পুনরায় খেলা শুরুর পর নিজের প্রথম চার মারেন মাহমুদউল্লাহ।  

তবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেনিংয়ে বড় কিছু করতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তৃতীয় ওভারে নাসুম আহমেদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ২ চারে ৯ বলে করেন ৯ রান। 

ওই ওভারে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন চতুরাঙ্গা ডি সিলভা। এই লঙ্কানকেও বেশি দূর যেতে দেননি নাসুম। অষ্টম ওভারে দ্বিতীয়বার আক্রমণে এসে ১৩ বলে ১৪ রান করা চতুরাঙ্গাকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার। 

চার নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন সাকিব। নাহিদুল ইসলামের করা দশম ওভারে পরপর দুই ছয়ের পর চার মারেন তারকা অলরাউন্ডার। কিন্তু ইনিংস টেনে নিতে পারেননি।  

একাদশ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন হাসান মুরাদ। চতুর্থ বলে লং অফে নাসুমের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। ১ চার ও ২ ছয়ে করেন ১৪ বলে ২২ রান। এক বল পর লং অনে একই ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন এনামুল। ২৮ রান করতে ২৯ বল খেলেন তিনি।  

সাকিবের বিদায়ের পাঁচ নম্বরে নামানো হয় ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। ২০১২ সালের মার্চের পর প্রথমবার এত ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান তিনি। পঞ্চম উইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে মিলে দলকে চাপমুক্ত করেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার।  

দ্বিতীয় বলে চার মারেন প্রিটোরিয়াস। চতুর্দশ ওভারে সাব্বির রহমান আক্রমণে এলে ছক্কায় ওড়ান তিনি। ওই ওভারে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।  

জীবন পেয়ে পরের ওভারেই খুলনার হতাশায় বাড়ান প্রিটোরিয়াস। মুরাদের বলে দুই ছয় ও এক চারে তোলেন ২০ রান। নাসুমের শেষ ওভারে মারেন আরও এক ছক্কা। জাদরানের সঙ্গে তার জুটিতে স্রেফ ৩৭ বলে বলে আসে ৭০ রান। 

১৮তম ওভারে শেষ স্পেলে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। প্রিটোরিয়াসকে সঙ্গ দেওয়া ইনিংসে ১৫ বলে ২১ রান করেন জাদরান। 

পরে শেষ ওভারে স্রেফ ৭ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন সাইফ। তার দ্বিতীয় বলে বোল্ড হন প্রিটোরিয়াস। স্রেফ ২ রানের জন্য ফিফটি করতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।  

খানিক নিচু হওয়া পরের ডেলিভারিতে বোল্ড মিরাজও। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি সাইফ। ১৮ রানের ক্যামিও খেলা করিম জানাতকে শেষ বলে আউট করে বিপিএলে নিজের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি।  

রান তাড়ায় বরিশালের মতোই চমক দেখায় খুলনা। অ্যান্ডি বালবার্নির সঙ্গে নামানো হয় সাব্বির রহমানকে। প্রথম বলেই চার মেরে ইনিংস শুরু করেন বালবার্নি। তবে আরেক প্রান্তে সাব্বির কিছু করতে পারেননি।  

তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে ব্রেক থ্রু দেন প্রিটোরিয়াস। ৬ বলে ২ রান করে এলবিডব্লিউ হন সাব্বির। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৫ রান যোগ করেন অধিনায়ক শাই হোপ ও বালবার্নি। তবে রানের গতি বাড়াতে পারেননি তারা।  

হোপ আউট হন ১৩ বলে ১৫ রান করে। এক প্রান্ত আগলে রাখা বালবার্নিকে আউট করেন খালেদ আহমেদ। ১ চার ও ২ ছয়ে ৩৩ বলে ৩৭ রান করেন আইরিশ ওপেনার।  

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৫ বলে ৫৫ রান যোগ করেন জয় ও ইয়াসির আলি। যেখানে ইয়াসিরের অবদান ১৩ বলে ১৩ রান। দারুণ ব্যাটিংয়ে স্রেফ ৩৫ বলে ফিফটি পূরণ করেন জয়।  

১৭তম ওভারে ওয়াইড বলে রান আউট হন ইয়াসির। তখনও জয়ের জন্য বাকি ছিল ১৯ বলে ৩৯ রান। সেটি দুই ওভারে নেমে আসে ২৬ রানে।  

ইবাদতের করা ১৯তম ওভারে জোড়া ছক্কা মারেন হাবিবুর। ওই ওভারে আসে ১৭ রান। পরে মিরাজের ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়ে ভাগ্যের সঙ্গ নিয়ে ম্যাচ শেষ করেই ফেরেন হাবিবুর।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (এনামুল ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৯, চতুরাঙ্গা ১৪, সাকিব ২২, প্রিটোরিয়াস ৪৮, জাদরান ২১, জানাত ১৮, মিরাজ ০, সালমান ১*; সাইফউদ্দিন ৪-০-২০-৪, শফিকুল ৪-০-২৫-০, নাসুম ৪-০-৪৪-২, নাহিদুল ৩-০-৩৮-০, মুরাদ ৪-০-৩০-২, সাব্বির ১-০-৮-০) 

খুলনা টাইগার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৭২/৪ (বালবার্নি ৩৭, সাব্বির ২, হোপ ১৫, জয় ৬৪*, ইয়াসির ১৩, হাবিবুর ৩০*; ইবাদত ২-০-২৪-০, খালেদ ৩-০-৩০-১, প্রিটোরিয়াস ৩-০-২৮-১, সাকিব ৪-০-২৭-০, জানাত ৩-০-৩০-০, চতুরাঙ্গা ৪-০-১৮-১, মিরাজ ০.৩-০-১১-০ ) 

ফল: খুলনা টাইগার্স ৩ উইকেটে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ:  মাহমুদুল হাসান জয়