‘লিটনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে বোঝাই যায় না কখন রান হয়ে যাচ্ছে’

লিটনের সঙ্গে ক্রিজে থাকলে অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানের কাজ সহজ হয়ে যায়, বললেন রনি তালুকদার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 12:28 PM
Updated : 30 March 2023, 12:28 PM

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধানের আভাস মিলছে লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ব্যাটিংয়ে। অনেক সঙ্গীর সঙ্গে জুটি গড়ার অভিজ্ঞতার পর লিটন তো বলেই দিয়েছেন, রনির সঙ্গে ব্যাটিংয়ে মজা পাচ্ছেন তিনি। ক্যারিয়ারের নতুন শুরু করা রনিও এবার জানালেন, লিটনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে সহজ হয়ে ওঠে তার কাজ।

এই মাসের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জুটির পথচলা। প্রথম দুই ম্যাচে বড় জুটি না হলেও সম্ভাবনার ছাপ দেখা যায় উইকেটে তাদের স্বল্প উপস্থিতিতেই। তৃতীয় ম্যাচ থেকে সেই সম্ভাবনা রূপ নিতে থাকে বাস্তবে। দুজন মিলে যোগ করেন ৫৫ রান। 

আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আরও উজ্জ্বল লিটন-রনির উদ্বোধনী জুটি। প্রথম ম্যাচে ৪৩ বলে ৯১ রানের বিধ্বংসী জুটির পর বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে তারা গড়েন ৫৬ বলে ১২৪ রানের রেকর্ড জুটি, টি-টোয়েন্টিতে শুরুর জুটিতে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। এই সংস্করণে টানা তিন ম্যাচে অর্ধশত রানের শুরু এবারই প্রথম পেল বাংলাদেশ।

এই জুটি নিজেদের আলাদা করে মেলে ধরেছে রান করার ধরনেও। ৫৫ রানের জুটিতে তাদের রান রেট ছিল ৭.৩৩, পরের দুই জুটিতে রান রেট ১২.৬৯ ও ১৩.২৮। এমনকি দুজনের জুটির প্রথম ম্যাচেও ৩৩ রান এসেছিল ৯.৪২ রান রেটে।

পাঁচ ম্যাচেই দুটি পঞ্চাশের সঙ্গে একটি শতরানের জুটি গড়ে ফেলেছেন লিটন ও রনি। ২০২১ সালের শুরু থেকে ইংল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগ পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটিতে ৪৮ ম্যাচে স্রেফ দুইটি ফিফটি ও একটি একশ ছাড়ানো শুরু পায় বাংলাদেশ। লিটন ও রনি তা স্পর্শ করে ফেলেছেন পাঁচ ম্যাচের মধ্যেই।  

আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে লিটনের বিদায়ে ভাঙে জুটি। পরেরটিতে আগে আউট হন রনি। প্রথম ম্যাচে ২৩ বলে ৪৭ রান করেন লিটন। রনি তখন খেলছিলেন ২০ বলে ৪১ রানে। পরেরটিতে রনি ফেরেন ২৩ বলে ৪৪ রান করে। দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ে লিটন তখন অপরাজিত স্রেফ ৩৩ বলে ৭৮ রানে। 

দুই ম্যাচেই রীতিমতো পাল্লা দিয়েই রান তুলেছেন তারা দুজন। লিটনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের আনন্দে মজেছেন রনি। চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি শোনালেন লিটনের সঙ্গে জুটির রসায়নের গল্প।

“আমি মনে করি, ও (লিটন) এখন বাংলাদেশ দলের মূল ব্যাটসম্যান। ওর সঙ্গে ব্যাটিং করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের। আমরা চেষ্টা করি, সবসময় স্ট্রাইক রোটেট করার। ওর সঙ্গে ব্যাটিং করলে আপনি বুঝতেই পারবেন না, কীভাবে রান হয়ে যাচ্ছে। ওর ব্যাটিং দেখলে মনে হয়, শুধু দেখেই যাই। ওর ব্যাটিং দেখে অনেক কিছু শেখার আছে।”

“(উদ্বোধনী জুটিতে) আমরা বল বাই বল খেলার চেষ্টা করি। বলের মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি যে, প্রোপার শট খেলার চেষ্টা করব। আমরা যদি প্রতি বলে স্ট্রাইক রোটেট করতে পারি, ইনিংসটা লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

প্রথম ম্যাচে লিটন-রনির ঝড়ো শুরুতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে নিজেদের রেকর্ড ৮১ রান করে বাংলাদেশ। ১৭ ওভারে নেমে আসা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতে তারা দুজন নেন ৭৩ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের পাওয়ার প্লে স্কোর ছিল ৪৬ রান।

আয়ার‌ল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে তাদের জুটির বড় একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, প্রতি বলে রান নেওয়ার তাড়না। প্রথম ম্যাচে তাদের ৯১ রানের জুটিতে ডট বল ছিল মাত্র ৭টি। পরের ম্যাচে ১২৪ রানের জুটিতে ডট ছিল স্রেফ ৬টি!

রনি বললেন, তাদের পরিকল্পনার অংশই হলো যত বেশি সম্ভব বলকে কাজে লাগানো।

“(পাওয়ার প্লেতে) আমাদের কোনো লক্ষ্য ঠিক করা ছিল না। আমরা বল বাই বল খেলার চেষ্টা করেছি যে, আমরা বলের মেরিট অনুযায়ী খেলব। এটাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল।”

“টি-টোয়েন্টি হোক বা ওয়ানডে, আপনি যদি স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে পারেন, ব্যাটসম্যানের জন্য চাপটা সরে যায়। আমরা ওটাই চেষ্টা করছিলাম যে, আমরা প্রতি বলেই রান নেওয়ার চেষ্টা করব। ইন্টেন্ট যদি ইতিবাচক থাকে, তাহলে সে জিনিসটা করে ফেলা যায়। আমরাও সে জিনিসটা চেষ্টা করছিলাম।”

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর সংবাদ সম্মেলনে উদ্বোধনী জুটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের পেছনে নতুন সঙ্গী পাওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন লিটন দাস। এবার লিটনের সেই কথার ব্যাখ্যা যেন ফুটে উঠল রনির কণ্ঠে।  

“এই জিনিসটা (সঙ্গী বদলে পারফরম্যান্সে প্রভাব) প্রতিটা ব্যাটসম্যানের একই উত্তর থাকবে। কারণ আমিও চাই, আমি যখন আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করি, আমার সঙ্গীও যেন ওই ধরনের খেলা খেলতে পারে। দুজনের জন্যই সহজ হয়ে যায়। এটা লম্বা ইনিংস খেলার জন্য খুবই জরুরি। এজন্য লিটনের সঙ্গে ব্যাটিং করতে পারা যেটা বললাম, বোঝাই যায় না স্কোরবোর্ডে কখন রান হয়ে যাচ্ছে।”