শেখ জামালকেই হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার আবাহনীর

সুপার লিগের শেষ ম‍্যাচে ৪ উইকেটে জিতেছে মোসাদ্দেক হোসেনের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 11:05 AM
Updated : 13 May 2023, 11:05 AM

৫ বলে দরকার ২ রান। শফিকুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরের বল মিড অফের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলেন তানজিম হাসান। বল সীমানা পার হওয়ার আগেই এক ছুটে ক্রিজের কাছাকাছি চলে এলেন আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেটাররা! তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের কারণও আছে যথেষ্ট। যাদের কাছে শিরোপা খুইয়েছিলেন, সেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকেই হারিয়ে যে চ্যাম্পিয়ন হলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার লিগের শেষ রাউন্ডের ম‍্যাচে ৪ উইকেটে জিতেছে আবাহনী। ২৮৩ রানের লক্ষ্য ৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।

প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হতাশায় ডুবিয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপা জিতেছিল শেখ জামাল। পরের আসরেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করল মোসাদ্দেক হোসেনের দল।

সব মিলিয়ে ঢাকার শীর্ষ ক্লাব টুর্নামেন্টে ২২তম শিরোপা জিতল আবাহনী। ২০১৩-১৪ মৌসুমে লিস্ট 'এ' মর্যাদা পাওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগে তাদের পঞ্চম শিরোপা এটি। একাধিকবার জেতেনি আর কোনো দল।

পুরো আসরে দারুণ পারফর্ম করা নাঈম শেখ জ্বলে উঠেছেন কার্যত ফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচটিতেও। চলতি লিগে একাদশতম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে খেলেছেন ৬৮ রানের ইনিংস। আরেক ওপেনার এনামুল হক করেছেন ৭২ রান।

পাঁচ নম্বরে নেমে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলের জয় নিশ্চিত করায় তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া লিগে ১৬ ম্যাচে ১০ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে ৯৩২ রান করেছেন নাঈম। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৮০৭ রান করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। গত আসরে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে এনামুল করেছিলেন ১ হাজার ১৩৮ রান।

রান তাড়ায় শফিকুলের করা প্রথম বলেই দারুণ পুল শটে ছক্কা মারেন এনামুল। সেটিই যেন ঠিক করে দেয় আবাহনীর ইনিংসের গতিপথ। নাঈমের সঙ্গে এনামুলের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১৪৫ রান।

২৭তম ওভারে তাইবুর রহমানের বলে আরিফ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাঈম। ৭৯ বলের ইনিংসে ৩টি করে চার-ছয় মারেন তিনি।

পরের ওভারে বল হাতে নিয়ে এনামুলকে থামান আরিফ। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন সুপার লিগে প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা এনামুল। ৮১ বলের ইনিংসটি গড়া ৪টি করে চার-ছক্কায়।

গত লিগে বিশ্ব রেকর্ড গড়া এনামুল এবারও কম যাননি। ১৬ ম্যাচে তিনটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৮৩৪ রান। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সতীর্থ ওপেনারের ঠিক পরেই এনামুলের অবস্থান।

দুই ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আবাহনীর চাপ আরও বাড়ে মাহমুদুল হাসান জয় ৯ রান করে বোল্ড হলে। তবে এরপর পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন আফিফ।

প্রথমে জাকের আলিকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আফিফ। দলীয় দুইশ হওয়ার আগে সাঈফ হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ২১ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান।

তখনও জয়ের জন্য ৭৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৯২ রান। পঞ্চম উইকেটে দারুণ জুটিতে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন মোসাদ্দেক ও আফিফ। স্রেফ ৪৯ বলে ৬৮ রান যোগ করেন দুজন।

৪৬তম ওভারে পারভেজ রসুলকে দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার মেরে চলতি লিগে নিজের পঞ্চম পঞ্চাশ পূর্ণ করেন আফিফ। এক বল পর উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন মোসাদ্দেক। ২২ বলে ২২ রান করেন আবাহনী অধিনায়ক।

পরে খুশদিল শাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে আর বিপদ ঘটতে দেননি আফিফ।

তাকে দারুণ সঙ্গ দেন তানজিম। ৪৯তম ওভারে শহিদুল ইসলামের বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা মারেন তরুণ পেসার। শেষ ওভারে চার মেরে তিনিই শেষ করেন ম্যাচ।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৫৩ বলের ইনিংসে ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন আফিফ।

পুরো লিগের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এদিনও ২ উইকেট নেন ভারতীয় অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রসুল। সব মিলিয়ে ১৬ ম্যাচে ৩৩ উইকেট নিয়ে তিনি এবারের লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

দিনের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ ওভারের মধ্যে টপ-অর্ডারের তিন উইকেট হারায় শেখ জামাল। রানের খাতাই খুলতে পারেননি সাইফ। এক অঙ্কে থামেন সৈকত আলি (৮) ও রবিউল ইসলাম রবি (৫)।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন ফজলে মাহমুদ ও তাইবুর পারভেজ। তবে রানের গতি বাড়াতে পারেননি তারা। দুজনের জুটিতে ৮১ রান আসে ১২৩ বল থেকে।

দলের একশ ছুঁইছুঁই অবস্থায় তানজিমের বলে ক্যাচ আউট হন ফজলে রাব্বি। ২ চারে ৪০ রান করতে ৭০ বল খেলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

এরপর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে জুটি বাধেন তাইবুর। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। ফিফটি ছুঁয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি। ৩ চার ও ১ ছয়ে ৮৫ বলে করেন ৫৩ রান।

তাইবুরের বিদায়ের পর শেখ জামালের রানের পালে হাওয়া দেন সোহান ও রসুল। দুজন মিলে স্রেফ ৬৩ বলে যোগ করেন ৮৩ রান। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪২ রানে থামেন রসুল। ৩৭ বলের ইনিংসে মারেন ৪ চার ও ১ ছয়।

শেষ দিকে আবাহনীর বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন সোহান ও জিয়াউর রহমান। তাণ্ডব চালিয়ে স্রেফ ২২ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। শেষ ৫ ওভার থেকে শেখ জামাল করে ৭৯ রান!

টানা চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকেন সোহান। ৭০ বলের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছক্কা। ১ চার ও ৩ ছয়ে ১৪ বলে ২৯ রান করেন জিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮২/৭ (সাইফ ০, সৈকত ৮, রবিউল ৫, ফজলে ৪০, তাইবুর ৫৩, সোহান ৮৯*, রসুল ৪২, জিয়াউর ২৯*; তানভির ১০-১-৬৮-২, তানজিম ১০-০-৭৮-২, খুশদিল ৯-১-৩১-১, নাহিদুল ১০-০-৪০-০, মোসাদ্দেক ৫-১-১৮-০, সাইফ উদ্দিন ৫-০-২৫-১, এনামুল ১-০-১৯-০)

আবাহনী লিমিটেড: ৪৯.২ ওভারে ২৮৫/৬ (এনামুল ৭২, নাঈম ৬৮, জয় ৯, জাকের ২১, আফিফ ৬০*, মোসাদ্দেক ২২, খুশদিল ৫, তানজিম ১২*; শফিকুল ৬.২-০-৫৩-০, রসুল ১০-০-৫১-২, আরিফ ১০-০-৩৮-১, শহিফুল ৩-০-২৪-০, সাইফ ১০-০-৫৪-১, তাইবুর ৮-০-৩৭-২, জিয়াউর ১-০-১০-০, রবিউল ১-০-১০-০)

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী

রোল অব অনার (২০০০ সাল থেকে):

* ২০০৩-০৪ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে লিগ হয়নি

ঢাকা লিগের সফল ক্লাব: