স্পিনত্রয়ী আর লিটনের ডানায় ভেসে কুমিল্লার প্রথম জয়

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে অবশেষে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হয়ে এলো বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদক চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2023, 04:42 PM
Updated : 16 Jan 2023, 04:42 PM

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের স্কোর নাগালের মধ্যে আটকে রাখলেন স্পিনাররা। রান তাড়ায় উড়ন্ত সূচনা করলেন লিটন দাস। পরে দায়িত্ব নিয়ে বাকি কাজ সারলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দলীয় নৈপুণ্যে প্রথম জয়ের দেখা পেল বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।  

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবার ঘরের মাঠের দলকে ৭ উইকেটে হারায় কুমিল্লা। চট্টগ্রামের ১৩৫ রান ১৫ বল হাতে রেখে টপকে গেছে ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন দলটি।  

শুরু থেকে টানা তিন পরাজয়ের পর কুমিল্লার প্রথম জয় এটি। পাঁচ ম্যাচে চট্টগ্রাম হারল তিনটিতে।   

ছোট লক্ষ্যে শুরু থেকেই সাবলীল ছিল লিটনের ব্যাট। পাওয়ার প্লে মাতিয়ে ৪ চার ও ৩ ছয়ে স্রেফ ২২ বলে ৪০ রান করেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। রান রেটের চাপ না থাকায় এক প্রান্ত আগলে ৩৫ বলে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। 

ব্যাটসম্যানদের কাজটা অবশ্য সহজ করেন তানভীর ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন ও খুশদিল শাহ। তিন স্পিনার মিলে ১২ ওভারে স্রেফ ৬৯ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। 

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উসমান খানকে হারায় চট্টগ্রাম। শুরু থেকে ছটফট করতে থাকা ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির। 

তিন নম্বরে নেমে আফিফ হোসেন দারুণ সব শট খেলতে থাকেন। ক্রিজ ব্যবহার করে দারুণ পায়ের কাজ আর টাইমিংয়ে দ্রুত কয়েকটি বাউন্ডারি আদায় করেন তিনি। 

আগের ম্যাচে ৬৯ রানের ম্যাচে জেতানো ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে অবশ্য অমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। পাওয়ার প্লের শেষ বলে তাকে বোল্ড করে দেন মুকিদুল ইসলাম। তার ২১ বলে ২৯ রানের ইনিংসে ৬ চারটি।   

ডাচ ওপেনার ম্যাক্স ও'ডাউড ১১ ওভারের বেশি টিকে থেকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন ২৪ বলে ২৪ রান করে। 

চট্টগ্রামের মিডল অর্ডারেও ভালো করতে পারেননি কেউ। কুমিল্লার স্পিনত্রয়ীর আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি ইরফান শুক্কুর (১১ বলে ৫), ডানা মেলতে পারেননি দারভিশ রাসুলি (১৪ বলে ১১)। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা জিয়াউর রহমানও এ দিন নিষ্প্রভ। একশর আগে হারিয়ে ফেলে তারা ৭ উইকেট। 

ধুঁকতে থাকা দলকে কিছুটা উদ্ধার করেন শুভাগত হোম। সাতে নেমে শেষ দিকে ঝড় তোলেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। ১৮তম ওভারে হাসান আলির বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন ছক্কা। পরের বল বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সোজা বল পাঠান বাউন্ডারিতে। 

৪ চার ও ১ ছয়ে শুভাগত অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৩৭ রান করে। শেষ ৪ ওভারে ৪৬ রান তোলে চট্টগ্রাম। 

ব্যাটিংয়ের শেষটা দারুণ করলেও বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করতে পারেননি শুভাগত। প্রথম ওভারেই কয়েকটি আলগা ডেলিভারি করেন তিনি। তা কাজে লাগিয়ে দুটি বাউন্ডারিসহ ওভার থেকে ১২ রান তুলে ফেলেন লিটন। 

ছন্দ পেয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তিনি। পরের ওভারে মৃত্যুঞ্জয়ের খাটো লেংথের ডেলিভারিতে ছক্কা মারেন তিনি দারুণ টাইমিংয়ে। ২ ওভারেই ২৭ রান উঠে যায় কুমিল্লার স্কোরবোর্ডে। জিয়ার করা তৃতীয় ওভারে রিজওয়ান মারেন নিজের প্রথম বাউন্ডারি। 

মৃত্যুঞ্জয়কে সরিয়ে চতুর্থ ওভারে মেহেদি হাসান রানার হাতে বল দেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। ওই ওভারের শেষ দুই বল সোজা সীমানার ওপারে পাঠান লিটন।  

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে থামে লিটন ঝড়। মৃত্যুঞ্জয়ের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান তিনি লাইন মিস করে। 

তবে কুমিল্লার ইনিংস ততক্ষণে জয়ের পখেথ উঠে এসেছে। বাকিরা সেই পথ ধরে এগিয়ে যান আস্তে আস্তে করে।   

মালিন্দা পুস্পাকুমারার বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন ইমরুল কায়েস। দুই বল পর একই জায়গা দিয়ে বড় শটের চেষ্টায় মেহেদির হাতে ধরা পড়েন কুমিল্লার অধিনায়ক। ওই ওভারে জনসন চার্লসকেও ফেরান পুস্পাকুমারা। 

তবে জোড়া ধাক্কার পরও কুমিল্লা বিপদে পড়েনি। জয় তখন নাগালেই। রিজওয়ান ও জাকের আলি নিরাপদ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। 

কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের শুরু করেন রয়েসয়ে। ১৬তম ওভারে জিয়ার বলে জোড়া ছক্কা মারেন তিনি। কাজ অবশ্য শেস করতে পারেননি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ২৩ বলে ২২ রান করে। 

বাতি পথটুকু অনায়াসে পাড়ি দেন রিজওয়ান ও খুশদিল শাহ।   

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (উসমান ০, ও'ডাউড ২৪, আফিফ ২৯, ইরফান ৫, রাসুলি ১১, জিয়াউর ২, শুভাত ৩৭*, মৃত্যুঞ্জয় ৭, মেহেদি ১৩; তানভীর ৪-০-২৬-২, হাসান ৪-০-৩৮-২, মোসাদ্দেক ৪-০-২৩-২, মুকিদুল ৪-০-২৫-১, খুশদিল ৪-০-২০-২) 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৭.৩ ওভারে ১৩৭/৫ (লিটন ৪০, রিজওয়ান ৩৭*, ইমরুল ১৫, চার্লস ০, জাকের ২২, খুশদিল ১০* শুভাগত ২-০-১৮-০, মৃত্যুঞ্জয় ৩.৩-০-২৩-১, জিয়াউর ২-০-১৭-১, মেহেদি ৩-০-২৭-০, পুস্পাকুমারা ৩-০-২৩-২, নিহাদউজ্জামান ৪-০-১৯-২) 

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী  

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন দাস।