বিপিএলে অভিষেকে নাসিমের আগুনে বোলিংয়ে কুমিল্লার জয়

প্রথম তিন ম্যাচে হারার পর টানা চার ম্যাচ জিতল গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2023, 04:46 PM
Updated : 23 Jan 2023, 04:46 PM

নাসিম শাহ এখন বলতেই পারেন- ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ অবশ্য না বললেও চলবে। তার পারফরম্যান্সেই তো মিশে আছে এই বার্তা! গতি, সুইং আর আগ্রাসন মিলিয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার রাঙালেন বিপিএল অভিষেক। ঢাকা ডমিনেটর্সকে মাড়িয়ে ছুটে চলল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয়রথ। 

৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান দিয়ে নাসিমের শিকার ৪ উইকেট। এই বোলিং ফিগারও বোঝাতে পারছে না, ঢাকার ব্যাটসম্যানদের জন্য কতটা ভীতি জাগানিয়া ছিল ১৯ বছর বয়সী পেসারের বোলিং। ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করেন তিনি বলের পর বলে। বিপিএলে সোমবার একপেশে ম্যাচটি কুমিল্লা জিতে নেয় ৬০ রানে। 

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এ দিন কুমিল্লার হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ। তবে পাঁচ ব্যাটসম্যান ২০ ছুঁলেও কেউ পারেননি ৩৫ পর্যন্ত যেতে। তবে সম্মিলিত সেই অবদানে কুমিল্লা ২০ ওভারে তোলে ১৬৪ রান। ঢাকা ২০ ওভার ধুঁকে ধুঁকে যেতে পারে ১০৪ পর্যন্ত। 

হ্যাটট্রিক হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা কুমিল্লা জিতল টানা চার ম্যাচ। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর ঢাকার হার টানা ছয় ম্যাচে। 

কোনোভাবে টুর্নামেন্টে সুবিধে করতে না পারা ঢাকা এ দিন একাদশ সাজায় স্রেফ দুজন বিদেশি নিয়ে। নতুন কম্বিনেশনেও তারা পারেনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে। 

১৭ বলে ৩০ রানের ইনিংসের সঙ্গে ২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ যদিও কুমিল্লার পাকিস্তানি অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ। তবে দাপুটে পেস বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে ম্যাচের মূল আকর্ষণ ছিলেন নাসিমই। 

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই নাসিম কাঁপিয়ে দেন ঢাকার দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও মিজানুর রহমানকে। দুই বলে গতিতে পরাস্ত হয়ে মিজানুর পরের বলে চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে শট খেলতে। নাসিমের ফুল লেংথ বলে ডিগবাজি খায় তার অফ স্টাম্প। 

পরের ওভারে আবু হায়দার রনিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। দুঃসময়ের চক্রে থাকা ব্যাটসম্যান এবারের বিপিএলে ৭ ম্যাচ খেলে করতে পারলেন মোটে ৪৫ রান। 

নাসিমের পরের ওভারে বল এক দফায় স্টাম্প ছুঁলেও পড়েনি বেলস। তখন বেঁচে গিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন আউট হয়ে যান তিন বল পরই। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দল তখনই বলা যায় ছিটকে পড়ে রান তাড়া থেকে। 

আগের ম্যাচগুলোয় বিপর্যয়ের মধ্যে লড়াই করে তবু দলকে ভদ্রস্থ অবস্থায় নিয়ে গেছেন নাসির হোসেন। এ দিন ব্যর্থ তিনিও (১৫ বলে ১৭)। 

এরপর স্রেফ তাদের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলা। নাসিম ষোড়শ ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে টানা দুই বলে নেন দুটি উইকেট। তার পাঁচ উইকেট তখন মনে হচ্ছিল অবশ্যম্ভাবী। শেষ পর্যন্ত কয়েক দফায় উইকেটের কাছাকাছি গিয়েও আর পাননি। 

তিনে নেমে অনেকক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রাখেন উসমান ঘানি। শেষ ওভারে আউট হন তিনি ৩৪ বলে ৩৩ রান করে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেলতে পারাটাই ঢাকার প্রাপ্তি, যদি এটিকে তারা প্রাপ্তি মনে করে আর কী! 

অথচ ম্যাচের শুরুটা ছিল অন্যরকম। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কুমিল্লা হোঁচট খায় শুরুতে। ম্যাচের প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নাড়িয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। পরে লিটন দাসকেও তিনি আটকে রাখেন উইকেটে। দ্বিতীয় ওভারে আরাফাত সানির বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান রিজওয়ান। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছাড়েন উসমান ঘানি। 

ঢাকা সাফল্য পায় তৃতীয় ওভারে। শুরু থেকেই নড়বড়ে থাকা রিজওয়ান (৭ বলে ৩) স্টাম্পে টেনে আনেন আল আমিন হোসেনের বাইরের বল। তিন ওভার শেষে কুমিল্লার রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪। 

প্রথম বাউন্ডারি পায় তারা চতুর্থ ওভারে ইমরুল কায়েসের ব্যাটে। পঞ্চম ওভারে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আল আমিনকে দুটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। পরের ওভারে দুই ব্যাটসম্যানের আরও দুটি বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লেতে শেষ পর্যন্ত তারা ৩৫ রান তুলতে পারে। 

এরপরই আবার ছন্দপতন। নাসির হোসেনের যে শর্ট বলের প্রাপ্য চার বা ছক্কা, সেটিই সীমানায় ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন লিটন (২০ বলে ২০)। ইমরুলও ব্যর্থ হন ভালো শুরুটাকে পরিণতি দিতে (২২ বলে ২৮)। কুমিল্লার রানের গতিও ক্রমে কমে আসে একটু। 

মুক্তার আলির এক ওভারে দুই ছক্কা এক চারে আবার রানের গতিতে দম দেন জনসন চার্লস। কিন্তু তার সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ হয় রান আউটে কাটা পড়ে (২৫ বলে ৩২)। 

কুমিল্লার ইনিংস নতুন দিশা পায় ইনিংসের পরের ভাগে। খুশদিল শাহ ক্রিজে গিয়ে প্রথম দুই বলেই বাউন্ডারি মারেন আল আমিনকে। মোসাদ্দেক যদিও ব্যর্থ হন। তবে শেষ দিকে কার্যকর এক ক্যামিও খেলেন জাকের আলি। 

দুটি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ৩০ করে ফেরেন খুশদিল। শেষ ওভারে তাসকিনকে চার-ছক্কায় দলের রান ১৬০ পার করান জাকের (১০ বলে ২০*)। 

প্রথম তিন ওভারে স্রেফ ১২ রান দিলেও শেষ ওভারে তাসকিন হজম করেন ১৬ রান। 

লক্ষ্য তার পরও খুব বড় ছিল না। ব্যাটিং উইকেটে ১৬৫ তো করাই যায়। কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিল নাসিমের দুর্দান্ত বোলিং। ঢাকার ব্যাটিংয়ে সামর্থ্যের ঘাটতি তো ছিলই। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৬৪ (রিজওয়ান ৩, লিটন ২০, ইমরুল ২৮, চার্লস ৩২, মোসাদ্দেক ৯, খুশদিল ৩০, জাকের ২০*, আবু হায়দার ১১*; তাসকিন ৪-০-২৮-১, সানি ৩-০-২৪-০, আল আমিন ৪-১-৩৩-১, নাসির ৩-০-১৯-২, মুক্তার ৩-০-৩৬-০, হামজা ৩-০-১৯-১)

ঢাকা ডমিনেটর্স : ২০ ওভারে ১০৪/৯ (মিজানুর ৫, সৌম্য ৩, ঘানি ৩৩, মিঠুন ৩, নাসির ১৭, আরিফুল ১১, মুক্তার ৯, হামজা ০, তাসকিন ২, আল আমিন ১৪*, সানি ১*; আবু হায়দার ৩-০-১৩-১, নাসিম ৪-০-১২-৪, তানভির ৪-০-১৩-০, মুকিদুল ৪-০-৩০-১, খুশদিল ৪-০-২৪-২, চার্লস ১-০-১২-১)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: খুশদিল শাহ