একই সংস্কৃতি ধরে রেখে একই স্রোতের ধারায় বয়ে যেতে চান বলে জানালেন চেন্নাই সুপার কিংসের এবারের অধিনায়ক।
Published : 09 Apr 2024, 01:19 PM
অধিনায়ক বদলেছে, তবে অধিনায়কত্ব নয়! রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ভাবনা বা দর্শন এমনই। মাহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে এবার চেন্নাই সুপার কিংসের নেতৃত্ব এসেছে তার কাঁধে। তবে নেতৃত্বের ধরন বা ঘরানায় কোনো বদল তিনি চান না। যে সংস্কৃতির ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে চেন্নাইয়ের সাফল্যের সৌধ, যে পথ ধরে ছুটে দলটি হয়ে উঠেছে আইপিএলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ও সফলতম দল, সেসবের সবটুকুই আগের মতো রাখতে চান চেন্নাইয়ের নতুন অধিনায়ক।
চেন্নাই অধিনায়ক হিসেবে ধোনির বিশেষত্ব ছিল ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সংযোগ ও সম্পর্ক, যোগাযোগের স্বচ্ছ্বতা এবং পারস্পরিক সমীহ ও সহায়তা। দল হিসেবেও চেন্নাই আইপিএলের শুরু থেকে এগিয়েছে চেনা একটি পথ ধরে। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে দলের মূল ক্রিকেটারদের সবাইকে তারা ধরে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। সব মিলিয়ে দারুণ এক সংস্কৃতি তারা গড়ে তুলতে পেরেছে, যেটি হয়ে উঠেছে আইপিএল সাফল্যের সেরা রেসিপি।
এখনও পর্যন্ত ১৪ আইপিএল অংশ নিয়ে রেকর্ড ১০ বার ফাইনালে খেলেছে তারা। শিরোপা জিতেছে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৫ বার। আরও ২ বার জায়গা করে নিয়েছে শীর্ষ চারে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতেও যৌথভাবে সর্বোচ্চ ২ বার চ্যাম্পিয়ন তারা।
এই সব সাফল্যে তাদের নেতৃত্বে ছিলেন একজনই-মাহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে এই কিংবদন্তির আইপিএল ক্যারিয়ার এখন শেষের কাছে। তিনি মাঠে থাকতে থাকতেই নতুন নেতা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। গত কয়েক মৌসুমের সফল ব্যাটসম্যান রুতুরাজকে এবার দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বের ভার।
রুতুরাজের নেতৃত্বে চলতি মৌসুমে পাঁচ ম্যাচে এখনও পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই। তার নেতৃত্বের ধরনে আলাদা বা বিশেষ কিছু সেভাবে চোখে পড়েনি এখনও। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে সোমবার জয়ের পর ২৭ বছর বয়সী ওপেনার বললেন, আলাদা কিছু করার চেষ্টায় চেন্নাইয়ের চেনা পথ বদলে দিতে চান না তিনি।
“আমি সুনির্দিষ্ট কোনো ধরনের চরিত্র হতে চাই না। যেভাবে সবকিছু প্রবাহিত হচ্ছে, সেই স্রোতের ধারায় বয়ে যেতে চাই। মূলত চেন্নাই সুপার কিংসের সংস্কৃতিকে ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে চাই। আমার এরকমই ভাবনা। যে সাফল্য আমরা পেয়েছি, যা আমরা করছে আসছি, তা একবিন্দুও বদলাতে চাই না আমি।”
“আমি স্রেফ মাঠে নেমে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চাই, যতটা সম্ভব স্বাধীনতা দিতে চাই, কারণ আমি এই দলে যোগ দেওয়ার পর থেকে এসবই দেখে আসছি। কোনো কিছুই সত্যিকার অর্থে বদলায়নি এবং আমি উপভোগ করছি নিজের কাজ।”
রুতুরাজ জানালেন, মৌসুম শুরুর আগে অনুশীলনে একদিন ধোনিই তাকে জানান নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা।
“সত্যি বলতে, গভীর কোনো আলোচনা হয়নি। আমি বেশ ফুরফুরে ছিলাম। একবারই আলোচনা হয়েছে। আমরা অনুশীলন করছিলাম, তিনি (ধোনি) এসে এসব কথা বললেন আমাকে। অবশ্যই বাইরের সবার কাছে এটা মনে হচ্ছে অনেক বড় শূন্যতা পূরণের ব্যাপার। তবে আমার কাছে আমি সবসময়ই নিজের মতোই থাকব এবং যে সংস্কৃতিটা দলে চলছে, তা চালিয়ে যেতে চাইব।”
ধোনির কাছ থেকে খবরটি শোনার পর খুব একটা চমকে যাননি তিনি। বছর দুয়েক ধরেই যে তার মানসিক প্রস্তুতি ছিল! তাকে অধিনায়ক হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা আগেই শুরু করে দিয়েছিল দল, চেন্নাইয়ের দলীয় সংস্কৃতিও ফুটে উঠল এতে।
“আমার মনে আছে, ২০২২ সালে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আগামী বছর না হলেও এর পরের বছর তুমি নেতৃত্বের সুযোগ পেতে পারো, প্রস্তুত থেকো।’ এরপর থেকে আমি সবসময়ই প্রস্তুত ছিলাম। আমার জন্য এটা নতুন বা বিস্ময় কিংবা চমক হয়ে আসেনি। খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করতে জানি আমি, খেলা কীভাবে এগোয়, কখন কোন বদলটা আনতে হবে, কখন কী করতে হবে, এসব আমার জানা, যেহেতু রাজ্য দলেও করছিলাম।”
“এমনকি গত বছরও স্টিভেন ফ্লেমিং ও আমি প্রতি ম্যাচ শেষেই অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা বলতাম, আমার কী মনে হয়েছে, কোন বদল বা বোলিং পরিবর্তনটি আমার প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, এটা-সেটা আরও অনেক কিছু। প্রতি ম্যাচ শেষেই তার সঙ্গে আলাদা করে এসব নিয়ে কথা হয়েছে আমার। এবার তা কাজে লাগছে।”