মিরপুরে ব্রাদার্স ইউনিউনের বিপক্ষে তাণ্ডব চালিয়েছেন আলাউদ্দিন বাবু।
Published : 17 Apr 2023, 06:04 PM
সুপার লিগের একটি টিকেটের লড়াইয়ে তিন দল। সবচেয়ে সহজ সমীকরণ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের, নিজেদের ম্যাচ জিতলেই অন্য কোনো দিকে তাকাতে হবে না তাদের। সেই অভিযানে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে আকবর আলির নেতৃত্বাধীন দলটি।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে হাবিবুর রহমানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ১৫৬ রানের বড় জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ। ৩৩৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শাইনপুকুর থেমেছে ১৭৭ রানে।
প্রথম পর্বের ১১ ম্যাচ শেষে ৫ জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচের সৌজন্যে গাজী গ্রুপের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। ছয় নম্বরে থেকে সুপার লিগ শুরু করবে তারা। স্রেফ ৪ পয়েন্ট পাওয়া শাইনপুকুর এখন লড়বে অবনমন এড়ানোর জন্য।
সবশেষ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের শেষ ম্যাচে ৯ বলে ৩০ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে দলকে জিতিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন হাবিবুর। প্রিমিয়ার লিগেও বেশ কিছু ম্যাচে ঝড় তোলেন তিনি। কিন্তু ইনিংস বড় হচ্ছিল না।
অবশেষে এবার পেলেন তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া।
স্রেফ ৬৪ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ডানহাতি এই ওপেনার। ৬৬ বলে ১৪ চার ও ৬ ছক্কায় ১০১ রান করেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বাউন্ডারি থেকেই আসে ৯২ রান! তার হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও।
লিগের ১১ ম্যাচে একটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ২৯০ রান। গড় (২৬.৩৬) খুব একটা ভালো না হলেও লিস্ট 'এ' ক্রিকেট বিবেচনায় স্ট্রাইক রেট অসাধারণ, ১৩১.২২!
হাবিবুরের তাণ্ডবের দিন সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান চার নম্বরে নামা রবি তেজাও। নব্বইয়ে পা রেখে নাবিল সামাদকে ফিরতি ক্যাচ দেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। ৬ চার ও ৪ ছয়ে সাজান ৮৫ বলের ইনিংস।
শেষ দিকে এসএম মেহেরব হাসান ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৯ বলে ৪৮ এবং এনামুল হক একটি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে সাড়ে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যান।
বল হাতে মাসুম খান টুটুল নেন ৩ উইকেট। হাসান মুরাদের শিকার ২টি।
রান তাড়ায় এনামুলের তোপে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে শাইনপুকুর। শুরুর এই ধাক্কা সামলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি।
পঞ্চম উইকেটে ৭১ রানের জুটিতে কিছুটা লড়াইয়ের সম্ভাবনা জাগান অমিত হাসান ও গাজী মোহাম্মদ তাহজিবুল হাসান। কিন্তু দুজনের কেউই ইনিংসকে বড় করতে পারেননি।
অমিত খেলেন ৩ চারে ৫৬ বলে ৪০ রানের ইনিংস। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরা তাহজিবুলের ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৮২ বলে ৬৯ রান।
১০ ওভারে ৪১ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন এনামুল। এক মেডেনসহ ১০ ওভারে স্রেফ ৩৪ রান দিয়ে মাহমুদুল ধরেন ৩ শিকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ৩৩৩/৮ (মেহেদি ০, হাবিবুর ১০১, ফরহাদ ৫, রবি ৯০, মাহমুদুল ১৮, আকবর ২৬, মেহেরব ৪৭, এনামুল ২৭, হুসনা হাবি ২*, জয়নুল ০*; মাসুম ১০-১-৫৮-৩, মুরাদ ১০-০-৫৮-২, মেহেদি ৯-০-৬৫-১, নাবিল ১০-০-৬৫-১, জিসান ৬-০-৪০-০, শুভাম ৫-০-৪২-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৩৭.১ ওভারে ১৭৭ (অভিষেক ৯, খালিদ ১৫, শুভাম ১২, জিসান ১৮, অমিত ৪০, তাহজিবুল ৬৯, সাজ্জাদুল ০, মাসুম ১, মেহেদি ০, মুরাদ ৬, নাবিল ০*; এনামুল ১০-০-৪১-৪, টিপু ৬.১-০-৪৪-২, মাহমুদুল ১০-১-৩৪-৩, মেহেরব ৩-০-২১-০, জয়নুল ৫-০-২৫-০, হুসনা হাবিব ৩-১-১০-১)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৫৬ রানে জয়ী
ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ: হাবিবুর রহমান
আলাউদ্দিন বাবুর ঝড়ে জিতল রূপগঞ্জ টাইগার্স
৮ নম্বরে নেমে ঝড় তুললেন আলাউদ্দিন বাবু। এর আগে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন অঙ্কিত বাওনে ও শামিম হোসেন। তিনজনের ফিফটিতে রূপগঞ্জ টাইগার্স পেল তিনশ ছাড়ানো স্কোর। যা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম পর্বের শেষ রাউন্ডে ব্রাদার্সকে ৫৬ রানে হারিয়েছে রূপগঞ্জ টাইগার্স। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ৪৪ বল আগেই ২৫১ রানে গুটিয়ে গেছে ব্রাদার্স।
জয় পেলেও অবশ্য বিশেষ কোনো লাভ হয়নি রূপগঞ্জ টাইগার্সের। ১১ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল তারা। ৮ পয়েন্ট পেয়ে তাদের ঠিক পরেই ব্রাদার্স। সেরা ছয়ে জায়গা না পাওয়ায় প্রথম পর্বেই শেষ হলো এই দুই দলের প্রিমিয়ার লিগ।
রূপগঞ্জকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর আলাউদ্দিন। দুইশর আগে ষষ্ঠ উইকেটের পতনে ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। শেষ ওভারে রান আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে খেলেন স্রেফ ৪৫ বলে ৮১ রানের ইনিংস। ৪ চারের সঙ্গে মারেন ৭টি ছক্কা।
এছাড়া ভারতীয় অঙ্কিত ৬৫ বলে ৬৪ ও শামিম ৬০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেললে তিনশ ছাড়ায় রূপগঞ্জ টাইগার্সের দলীয় স্কোর।
ব্রাদার্সের ডানহাতি পেসার মানিক খান ৫০ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছিল ব্রাদার্স। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেটও হারাচ্ছিল তারা। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে আনিসুল ইসলাম ছাড়া কেউই ফিফটি করতে পারেননি।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পঞ্চাশ ছোঁয়া আনিসুল ৬ চার ও ২ ছক্কায় খেলেন ৫৫ বলে ৫২ রানের ইনিংস। এছাড়া সাব্বির হোসেন ২৪ ও মাইশুকুর রহমান ফেরেন ২০ রান করে।
১৪৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ৮৩ রানের জুটি গড়েন মিনহাজুল আবেদিন ও আরাফাত সানি। অল্পের জন্য পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি মিনহাজুল। একটি করে চার-ছক্কায় ৬০ বলে তিনি করেন ৪৩ রান।
আরাফাতের ব্যাট থেকে আসে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪১ বলে ৫১ রান।
সানজামুল ইসলাম, নাঈম হাসান ও নাসুম আহমেদ নেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩০৭ (ইমরানুজ্জামান ৯, সানজামুল ২১, মুমিনুল ২৯, নাইম ইসলাম ৬, অঙ্কিত ৬৪, শামিম ৫৩, সালমান ১৫, আলাউদ্দিন ৮১, নাসুম ১৭, নাঈম হাসান ০*, ইয়াসিন ০; মানিক ১০-১-৫০-৫, আনিসুল ৯-১-৭৪-০, আরাফাত ৬-০-৩২-১, মনিরুজ্জামান ১০-০-৫৮-২, সাব্বির ৬-০-৪৫-০, রাহাতুল ৯-০-৪৬-১)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪২.৪ ওভারে ২৫১ (মিজানুর ১৯, তানজিদ ৫, সাব্বির ২৪, আনিসুল ৫২, জাহিদুজ্জামান ১০, মাইশুকুর ২০, মিনহাজুল ৪৩, আরাফাত ৫১, রাহাতুল ১০* মনিরুজ্জামান ২, মানিক ৭; ইয়াসিন ৪-০-৪৩-১, নাঈম হাসান ৯-০-৫৬-২, নাসুম ৭.৪-০-৪২-২, সানজামুল ৯-০-৫১-২, মুমিনুল ৩-০-২০-১, নাঈম ইসলাম ৬-০-২১-২, আলাউদ্দিন ৪-০-১৬-০)
ফল: রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ৫৬ রানে জয়ী
ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ: আলাউদ্দিন বাবু
মোহামেডানের টানা ষষ্ঠ জয়ে মাহিদুলের ৪ রানের আক্ষেপ
হৃদয় ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারলেন মাহিদুল ইসলাম। অল্পের জন্য পার হলো না সীমানা। ধরা পড়লেন সালাউদ্দিন শাকিলের হাতে। স্রেফ ৪ রানের জন্য মাহিদুল মিস করলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
মাহিদুল তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারলেও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব পেয়েছে ৫ উইকেটের সহজ জয়। ঢাকা লেপার্ডসের দেওয়া ২২৯ রানের লক্ষ্য ১৯ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
লিগের শুরুতে প্রথম পাঁচ ম্যাচে কোনো জয় ছিল না তাদের। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৬ ম্যাচ জিতে সুপার লিগ শুরু করতে যাচ্ছে তারা। প্রথম পর্ব শেষে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডানের অবস্থান পঞ্চম। নবাগত লেপার্ডস পেয়েছে স্রেফ এক জয়। রেলিগেশন লিগ খেলবে তারা।
আগের ম্যাচে ১২৫ রানের হার না মানা ইনিংসে দলকে জেতানো মাহিদুলের সামনে এই ম্যাচেও সুযোগ ছিল অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার। জয়ের জন্য স্রেফ ৮ রান বাকি থাকতে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি।
৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১২১ বলে ৯৬ রান করে মাহিদুল জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এছাড়া ফিফটি পেয়েছেন ইমরুল কায়েস। ১০ চারে ৫৮ রান করেন মোহামেডান অধিনায়ক। লিগে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেন ৪ চারে ৩৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস।
আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাট হাতে প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এদিন করেন অপরাজিত ৩৫ রান।
লেপার্ডসের পক্ষে চার ব্যাটসম্যান ত্রিশ ছুঁলেও কেউই তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন আশিকুর রহমান।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দি শুভ ৩৯, সাব্বির হোসেন ৩৫ ও শোভন মোড়ল করেন ৩০ রান।
মোহামেডানের পক্ষে দুইটি করে উইকেট নেন মিরাজ ও জেইক লিন্টট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা লেপার্ডস: ৫০ ওভারে ২২৮/৯ (শোভন ৩০, পিনাক ১৫, আশিকুর ৪৮, রিদয় ৯, সাব্বির ৩৫, মইন ১৪, সোহরাওয়ার্দি ৩৯, ইমরান ১১, আরিফুল ১২, সালাউদ্দিন ১*, সোহেল ৪*; মিরাজ ১০-০-৩৮-২, মাহমুদউল্লাহ ৮-০-৩৮-১, খালেদ ৭-০-২১-১, লিন্টট ১০-০-৪৫-২, নাজমুল ৬-১-২৩-০, এনামুল ৮-০-৪৫-১, আরিফুল ১-০-১৩-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৬.৫ ওভারে ২৩২/৫ (ইমরুল ৫৮, মজিদ ০, মাহিদুল ৯৬, আশরাফুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ৩, মিরাজ ৩৫*, আরিফুল ৮*; সালাউদ্দিন ৬-০-৩৭-১, সোহেল ৪-০-২৫-০, আরিফুল ১০-০-৪৬-২, মইন ৯.৫-০-৪১-০, সোহরাওয়ার্দি ১০-০-৪৮-১, ইমরান ২-০-১২-০, হৃদয় ৫-০-২৭-১)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম