টানা ৮ জয়ের পর হারের তেতো স্বাদ পেল আবাহনী লিমিটেড।
Published : 10 Apr 2023, 07:15 PM
আসরের শুরু থেকে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া এনামুল হক ব্যর্থ হলেন পরপর দুই ম্যাচে। নাঈম শেখ ও জাকের আলি অনিক দলের হাল ধরলেও হতাশ করলেন পরের ব্যাটসম্যানরা। ফলে বড় হলো না আবাহনী লিমিটেডের স্কোর। তাওহিদ হৃদয় ও তাইবুর রহমানের দারুণ ফিফটিতে যা সহজেই টপকে গেল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শুরু থেকে টানা ৮ জয়ে রীতিমতো উড়ছিল আবাহনী। শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার নবম রাউন্ডের ম্যাচে তাদেরকে ৪ উইকেটে হারাল শেখ জামাল। ২৫১ রানের লক্ষ্য ৫ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
৯ ম্যাচে দুই দলেরই জয় সমান ৮টি করে। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে আবাহনী।
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ২৮ রান করা এনামুল এদিন ফিরে যান ১৫ রানে। তবে দারুণ ফর্মের ধারা ধরে রাখেন আরেক ওপেনার নাঈম। চলতি লিগে সপ্তম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে স্রেফ ৪৬ বলে ৫৮ রান করেন তিনি।
লিগে ৯ ম্যাচে নাঈমের সংগ্রহ এখন ৬৪০ রান। সতীর্থ ওপেনার এনামুলকে (৬১৫) টপকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এক নম্বরে উঠে গেছেন তিনি।
নাঈম দ্রুত গতিতে রান তুললেও প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে নামা জাকের খেলেন প্রায় টেস্ট মেজাজে। ৭০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়ানোর বদলে আরও ধীর হয় তার ব্যাট। সব মিলিয়ে ১১৯ বলে ৬ চারে করেন তিনি ৭৯ রান।
চার নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুটা ভালো করলেও ২১ রানের বেশি করতে পারেননি। আগের ম্যাচগুলোয় তিন নম্বরে দারুণ ব্যাটিং করা আফিফ হোসেনকে নামানো হয় পাঁচে। খালি হাতে ফিরে যান তিনি।
হয়তো দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ার কারণেও এক প্রান্ত ধরে রাখায় একটু বেশিই মনোযোগী ছিলেন জাকের। অন্য প্রান্তে মোসাদ্দেক হোসেন, দানিশ আজিজরা বড় কিছু করতে না পারায় আড়াইশ রানে থামে আবাহনীর ইনিংস।
সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন আরিফ আহমেদ। আয়ারল্যান্ড সিরিজের দলে ডাক পাওয়া মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৯ ওভারে ৬৯ রান। জাতীয় দলের আরেক পেসার ইবাদত হোসেন নেন ৫৩ রানে ২ উইকেট।
রান তাড়ায় শেখ জামালকে ভালো শুরু এনে দেন সাইফ হাসান। সৈকত আলি শুরুতেই ফিরে গেলে ফজলে রাব্বির সঙ্গে জুটি বাঁধেন ডানহাতি ওপেনার।
দলীয় ৬৩ রানের মাথায় ৩৯ রান করে আউট হন সাইফ। দলকে একশ পার করিয়ে ফজলে রাব্বি থামেন ৩৮ রানে।
চতুর্থ উইকেটে ৯৮ রানের জুটিতে দলের জয় এক রকম নিশ্চিত করে দেন হৃদয় ও তাইবুর। রাকিবুল হাসানের বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৭২ রান করেন চার নম্বরে নামা হৃদয়।
মৃত্যুঞ্জয় একটি করে চার-ছক্কায় ১০ রান করে ওই ওভারেই এলবিডব্লিউ হন। জয়ের জন্য ৯ রান বাকি থাকতে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ১০০ বলে ৬৩ রান করা তাইবুর।
১২ বলে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৫০/৯ (এনামুল ১৫, নাঈম ৫৮, জাকের ৭৯, শান্ত ২১, আফিফ ০, মোসাদ্দেক ২০, দানিশ ১৩, সাইফ উদ্দিন ১৬*, তানজিম ১২, রাকিবুল ৫; ইবাদত ৯-১-৫৩-২, পারভেজ ১০-০-৪১-০, মৃত্যুঞ্জয় ৯-০-৬৯-২, জিয়াউর ৩-০-১৬-০, আরিফ ১০-১-৩৯-৩, সাইফ হাসান ২-০-৯-০, তাইবুল ৭-০-২৩-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৯.১ ওভারে ২৫১/৬ (সাইফ হাসান ৩৯, সৈকত ২, ফজলে রাব্বি ৩৮, হৃদয় ৭২, তাইবুর ৬৩, মৃত্যুঞ্জয় ১০, সোহান ২০*, পারভেজ ২*; রাকিবুল ১০-২-৪৮-২, তানভির ১০-০-৪১-০, সাইফ উদ্দিন ৩-০-২৪-০, দানিশ ৯.১-০-৬৩-২, তানজিম ৬-০-৩২-০, মোসাদ্দেক ১০-০-৪০-১, আফিফ ১-০-২-১)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইবুর রহমান
মুশফিকদের অপেক্ষায় রেখে সুপার লিগে মাশরাফিরা
জিতলেই নিশ্চিত হবে সুপার লিগের টিকেট- এমন সমীকরণের ম্যাচে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে পাত্তাই পেল না প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। অনায়াস জয়ে আবাহনী ও শেখ জামালের পর শিরোপার লড়াইয়ে নাম লেখাল মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন রূপগঞ্জ।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে প্রাইম ব্যাংককে ৫ উইকেটে হারিয়েছে রূপগঞ্জ। ১২৯ রানের ছোট লক্ষ্য ১৫২ বল আগেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
৯ ম্যাচে রূপগঞ্জের এটি সপ্তম জয়। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে রয়েছে তারা। সমান ম্যাচে ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের অবস্থান চতুর্থ।
প্রাইম ব্যাংককে অল্পে গুটিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর আব্দুল হালিম। ১০ ওভারের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুনসহ ৩ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন ২৪ বছর বয়সী পেসার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় প্রাইম ব্যাংক। পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারায় দলটি।
তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন নাসির হোসেন। ইয়াসির আলি চৌধুরির ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান।
আগের রাউন্ডের মতো এই ম্যাচেও দেখা যায় আম্পায়ারিংয়ে নাটকীয়তা। মাশরাফির করা ২১তম ওভারে আল-আমিন জুনিয়রকে কট বিহাইন্ড দেন আম্পায়ার। কিন্তু পরক্ষণেই ব্যাটসম্যানের আপত্তির মুখে ক্ষমা চেয়ে নট আউট দেন তিনি।
রূপগঞ্জের ফিল্ডাররা প্রতিবাদ করলে স্কয়ার লেগ আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে নট আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন তিনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় ইরফান শুক্কুর, মুনিম শাহরিয়ারদের।
এরপর অবশ্য মাশরাফির বলে কট বিহাইন্ডই হন আল-আমিন। ২ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
হালিমের ৩ উইকেট ছাড়া মাশরাফি ও সোহাগ গাজী ধরেন ২টি করে শিকার।
রান তাড়ায় মুনিম, পারভেজ হোসেন, সাব্বির রহমানরা দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। তবে ইরফান ও ফারদিন হাসানের ব্যাটে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় রূপগঞ্জ।
ইরফান ৩১ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন। ফারদিন করেন ৪৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩৬.২ ওভারে ১২৮ (শাহাদাত ৭, শেখ মেহেদি ০, মিঠুন ১৭, মুশফিক ৫, তাইজুল ১৩, নাসির ৩১, আল-আমিন ২, ইয়াসির ২৮, জানাত ১৭, শরিফুল ২, রাজা ২*; চিরাগ ৬-১-১২-১, হালিম ৮-১-৩৪-৩, মাশরাফি ৮-১-২৫-২, নাঈম ৭-০-২৩-১, রাজিবুল ৫-০-২৫-১, সোহাগ ২.২-০-৭-২)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ২৪.৪ ওভারে ১২৯/৫ (মুনিম ৭, পারভেজ ২১, ফারদিন ৪৭, সাব্বির ৮, ইরফান ৩৪, চিরাগ ৭*, রাজিবুল ১*; শরিফুল ৫-০-৩২-০, শেখ মেহেদি ৭.৪-১-৩২-২, রাজা ৫-১-২১-২, নাসির ২-০-১০-১, তাইজুল ২-০-১৫-০, জানাত ৩-০-১৬-০)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আব্দুল হালিম
মার্শালের ৫, সাদমানের ৭ রানের আক্ষেপ
জয়ের জন্য বাকি ৮ রান, সেঞ্চুরি ছুঁতে মার্শাল আইয়ুবের দরকার ৫। শামিম হোসেনের ওয়াইড বল খেলতে গিয়ে মার্শাল ভারসাম্য হারালে দ্রুত স্টাম্প ভেঙে দেন ইমরানুজ্জামান। আউটের সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেননি স্কয়ার লেগের আম্পায়ার। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয় মার্শালের। এর আগে তার সঙ্গেই ভুল বোঝাবুঝিতে ৯৩ রানে রান আউট হন সাদমান ইসলাম।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আক্ষেপে পুড়লেও জয় পেতে সমস্যা হয়নি তাদের দল অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের। রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে তারা। ২৪৯ রানের সংগ্রহ ২৩ বল আগেই ছুঁয়ে ফেলেছে দলটি।
৯ ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের তৃতীয় জয় এটি। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান দশম। সমান ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্সও জিতেছে তিনটি। তবে একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের সৌজন্যে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তারা রয়েছে ছয় নম্বরে।
রান তাড়া করতে নেমে তৃতীয় উইকেটে ১৫৪ রানের জুটি গড়েন সাদমান ও মার্শাল। মনে হচ্ছিল, এই জুটিতেই ম্যাচ জিতে যাবে অগ্রণী ব্যাংক।
৪০তম ওভারে সানজামুল ইসলামের বলে কাট করেন মার্শাল। শুরুতে রানের কথা ভাবলেও থেমে যান তিনি। কিন্তু নন স্ট্রাইক থেকে সাদমান ততক্ষণে পৌঁছে যান প্রায় মাঝ পিচে। আর ফিরতে পারেননি তিনি।
৭ চার ও ১ ছক্কায় ১০৮ বলে ৯৩ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
পরে দলের জয় যখন হাতের মুঠোয়, তখন স্টাম্পিং হন মার্শাল। ১০ চারে ৯১ বলে ৯৫ রান করেন অগ্রণী ব্যাংক অধিনায়ক।
এর আগে রূপগঞ্জ টাইগার্সকে আড়াইশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেন ইমরানুজ্জামান, নাঈম ইসলাম ও অঙ্কিত বাবনে। ওপেনিংয়ে নামা ইমরানুজ্জামান ৯৫ বলে খেলেন ৬৭ রানের ইনিংস।
নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৮৩ বলে ৬১ রান। অঙ্কিত ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ বলে করেন ৫৬ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪৮/৭ (ইমতিয়াজ ২৫, ইমরানুজ্জামান ৬৭, মুমিনুল ৩, নাঈম ইসলাম ৬১, অঙ্কিত ৫৬, শামিম ৫, আলাউদ্দিন ৫, নাসুম ৬*, সানজামুল ৬*; আবু হায়দার ১০-০-৫৪-২, আরাফাত ১০-০-৫৬-০, আজিম ৭.২-০-৩৮-০, এনামুল ১০-০-৪৮-৩, ইলিয়াস ৯.৪-১-৩৩-১, শরিফউল্লাহ ৩-০-১২-০)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.১ ওভারে ২৫০/৪ (আজমির ১৪, সাদমান ৯৩, জহুরুল ১৭, মার্শাল ৯৫, আজিম ১৯*, শামসুল ১*; নাসুম ১০-০-৬৭-১, নাঈম হাসান ১০-০-৪৩-১, হাসান ৬-১-২৪-০, আলাউদ্দিন ৪-০-২৬-০, নাঈম ইসলাম ৬-০-২৬-০, সানজামুল ৮-০-৩৬-০, মুমিনুল ১-০-১১-০, শামিম ১.১-০-১১-১)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মার্শাল আইয়্যুব