দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৫ রানে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Published : 26 Jan 2024, 05:55 PM
ব্রিজবেনে গোলাপী বলে দিনভর লড়াই হলো তুমুল। কেমার রোচ ও আলজারি জোসেফের ছোবলে নড়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার, বড় লিডের আশা জাগাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কঠিন সেই সময়টা পার করে দিয়ে তিন ফিফটিতে ঘুরে দাঁড়াল স্বাগতিকরা। তারা লিড নিতে পারত কী না, সেটি জানা সম্ভব হলো না বিস্ময় জাগিয়ে অস্ট্রেলিয়া আগেভাগেই ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায়।
তবে শেষ ওভারে উইকেট নিয়ে অনেকটা সমতায় থেকেই দিন শেষ করল প্যাট কামিন্সের দল।
দিবা-রাত্রি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১ উইকেটে ১৩। প্রথম ইনিংসে ২২ রানের লিড পাওয়া সফরকারীরা ৩৫ রানে এগিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ২৮৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার পর দিনের শেষ বেলা কাটিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল ক্যারিবিয়ান ওপেনারদের সামনে। মনে হচ্ছিল, সফল হয়ে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু অন্তিম সময়ে কটবিহাইন্ডের সফল রিভিউয়ে তেজনারাইন চন্দরপলকে বিদায় করে দেন জশ হেইজেলউড।
২০ বলে ৩ রানে খেলছেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। সতীর্থদের নিয়ে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ার চ্যালেঞ্জ অধিনায়কের সামনে।
কামিন্স হুট করে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার সময় লিড নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল অস্ট্রেলিয়ারও। তবে তাদের ইনিংসের শুরুতে এই পরিস্থিতি কল্পনা করাও খুব কঠিন ছিল।
নতুন বলে রোচ ও আলজারি জোসেফের ছোবলে ভীষণ চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম ওভারে স্রেফ ২৪ রানের মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলেছিল চার উইকেট।
ওপেনিংয়ে নেমে ফের ব্যর্থ স্টিভেন স্মিথ। একটি চার মেরে রোচের প্রথম ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। পরের ওভারে মার্নাস লাবুশেনকে বিদায় করেন আলজারি জোসেফ। পঞ্চম ওভারে পরপর দুই বলে ক্যামেরন গ্রিন ও ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন রোচ।
দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা মিচেল মার্শ যেতে পারেননি বেশিদূর। ৫৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা স্বাগতিকরা প্রতিরোধ গড়ে উসমান খাওয়াজা ও অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যাটে। এক প্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন খাওয়াজা, আরেক প্রান্তে পাল্টা আক্রমণে চাপ কিছুটা আলগা করেন কেয়ারি।
দুই ঘরানার ব্যাটিংয়ে তারা ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৯৬ রানের জুটি। টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে এক ছক্কা ও ৯ চারে কেয়ারি করেন ৬৫ রান। এরপর মিচেল স্টার্ক দ্রুত ফিরে গেলে বড় লিডের স্বপ্ন বেঁচে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
সেটা ধীরে ধীরে উবে যায় খাওয়াজা ও কামিন্সের দারুণ ব্যাটিংয়ে। সফরকারীদের হতাশায় ডুবিয়ে দুই জনে গড়েন ৮১ রানের জুটি। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বড় রানের পথে থাকা খাওয়াজার প্রতিরোধ ভাঙেন কেভিন সিনক্লেয়ার। ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারই তার প্রথম টেস্ট উইকেট।
কামিন্স ও ন্যাথান লায়নের নবম উইকেট জুটিতে তিনশ রানের কাছে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। জোসেফের বলে লায়ন কট বিহাইন্ড হলে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। সে সময় ৭৩ বলে আট চার ও এক ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৬৪ রান করে অন্য প্রান্তে অপরাজিত ছিলেন কামিন্স।
হেইজেলউকে নিয়ে লিডের জন্য না ছুটে শেষ বেলায় দ্রুত কয়েকটি উইকেটের আশায় সেখানেই ইনিংস ঘোষণা করেন কামিন্স। ক্যারিয়ান ওপেনারদের দৃঢ়তায় মনে হচ্ছিল পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে এই পরিকল্পনা। তবে দিনের শেষ ওভারে একটি উইকেট নিতে পারেন হেইজেলউড।
৮৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার আলজারি জোসেফ। অভিজ্ঞ রোচ ৩ উইকেট নেন ৪৭ রানে।
এর আগে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোচকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান সিনক্লেয়ার। স্বাগতিকদের বিরক্ত করা এই জুটি ভাঙে রোচের রান আউটে। ৩১ রানের জুটিতে তার অবদান ৮।
আলজারি জোসেফকে নিয়ে দলকে তিনশ রানে নিয়ে যান সিনক্লেয়ার। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর লায়নকে অফে খেলার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি স্টাম্পড হলে ৩১১ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৬৬/৮) ১০৮ ওভারে ৩১১ (সিনক্লেয়ার ৫০, রোচ ৮, জোসেফ ৩*; স্টার্ক ২৪-৩-৮২-৪, হেইজেলউড ২০-৬-৩৮-২, কামিন্স ২৩-১-৭৬-১, লায়ন ২৮-৩-৮১-২, মার্শ ২-০-৩-০, গ্রিন ৭-২-১২-০, লাবুশেন ১-০-১-০, হেড ৩-০-১৪-০)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৩ ওভারে ২৮৯/৯ ডিক্লেয়ার (স্মিথ ৬, খাওয়াজা ৭৫, লাবুশেন ৩, গ্রিন ৮, হেড ০, মার্শ ২১, কেয়ারি ৬৫, স্টার্ক ২, কামিন্স ৬৪*, লায়ন ১৯; রোচ ১১-০-৪৭-৩, আলজারি জোসেফ ১৪-০-৮৪-৪, শামার জোসেফ ১১-১-৫৬-১, গ্রিভস ৯-৩-৩১-০, সিনক্লেয়ার ৮-১-৫৩-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৭.৩ ওভারে ১৩/১ (ব্র্যাথওয়েট ৩*; চন্দরপল ৪; স্টার্ক ৪-১-৬-০, হেইজেলউড ৩.৩-২-২-১)