বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বড় জয় পেল ইংলিশরা।
Published : 23 Jul 2022, 02:16 AM
ম্যাচের দৈর্ঘ্যে এটিকে ওয়ানডে বলা একটু কঠিনই, আবার টি-টোয়েন্টিও নয়। সেই ম্যাচে মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। ৬ রানে ৪ উইকেটের ধ্বংসস্তূপ থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না তারা। দারুণ জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড।
বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শুক্রবার ২০১ রান করেও ইংল্যান্ডের জয় ১১৮ রানে। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ২৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে পাঁচ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। এই সংস্করণে টানা পাঁচ ম্যাচে অলআউট হলো তারা।
প্রথম ম্যাচে ৩৩৩ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ২০.৪ ওভারে গুটিয়ে যায় স্রেফ ৮৩ রানে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি তাদের যৌথভাবে সর্বনিম্ন স্কোর। ২০০৮ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা।
একটা পর্যায়ে ৫ উইকেটে ৭২ রানের নড়বড়ে অবস্থানে থেকে ইংলিশরা লড়াইয়ের পুঁজি পায় মূলত লিয়াম লিভিংস্টোন ও স্যাম কারানের ঝড়ো ইনিংসে।
লিভিংস্টোন ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও একটি চারে করেন সর্বোচ্চ ৩৮ রান। ১৮ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৫ রান করেন কারান। পরে বল হাতে ৫ রানে একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা তিনিই।
বৃষ্টির কারণে দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হওয়া ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারে জেসন রয়কে হারায় ইংল্যান্ড। ৩ চারে এই ওপেনার করেন ১৪ রান।
তিনে নেমে ফিল স্লটও ফিরে যান তিনটি চার মেরে। তাকে ফেরানোর পর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস নিজের পরের ওভারে জো রুট (১) ও জনি বেয়ারস্টোকেও (২৮) বিদায় করে দেন। টিকতে পারেননি মইন আলিও।
দ্বাদশ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর পর লিভিংস্টোনের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের স্কোর একশ পার করেন জস বাটলার। এরপরই রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসির বলে ক্যাচ দিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক ফেরেন ১৯ রান করে।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ইনিংস সেরা ৪৩ রানের জুটি উপহার দেন লিভিংস্টোন ও কারান। দুই স্পিনার শামসি ও কেশব মহারাজকে ছক্কায় ওড়ান কারান। পেসার আনরিক নরকিয়াকে টানা তিনটি ছক্কার পর চার মারেন লিভিংস্টোন। পরের বলেই তিনি ক্যাচ দেন স্লোয়ার ডেলিভারিতে।
শামসিকে টানা দুই চার ও একটি ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে ক্যাচ দেন কারান। এরপর ডেভিড উইলির ২১ ও আদিল রশিদের ১২ রানের সুবাদে দুইশ ছাড়ায় সাগতিকদের সংগ্রহ।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৬ রানে ৪ উইকেট নেন প্রিটোরিয়াস।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের স্বস্তি উবে যায় ব্যাটিংয়ের শুরুতেই। রান তাড়ায় স্কোর ৬ রেখে ১০ বলের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় তারা।
রিস টপলি একই ওভারে ফিরিয়ে দেন ইয়ানেমান মালান ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রাসি ফন ডার ডাসেনকে। ডেভিড উইলির পরের ওভারে ক্যাচ দেন কুইন্টন ডি কক, আর এইডেন মারক্রাম কাটা পড়েন রান আউটে। ডি কক ছাড়া বাকিদের কেউ রানের খাতা খুলতে পারেননি।
ওয়ানডে ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার একই স্কোরে প্রথম ৪ উইকেট হারাল কোনো দল। ১৯৮১ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে, ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস ২৯ রানে প্রথম ৪ উইকেট হারিয়েছিল।
ওই ধাক্কা আর সামলে উঠে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেভিড মিলারকে দ্রুত কারান বোল্ড করে দিলে তাদের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ২৭।
ওয়ানডেতে দলটির সর্বনিম্ন ৬৯ রান নতুন করে লেখার শঙ্কাও উঁকি দিচ্ছিল তখন। সেটি পেরিয়ে যেতে পারলেও বড় হার এড়াতে পারল না তারা।
ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন হাইনরিখ ক্লাসেন। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল মিলার (১২) ও প্রিটোরিয়াস (১৭)।
২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার লেগ স্পিনার রশিদ। টপলি ও মইন নেন ২টি করে উইকেট।
আগামী রোববার লিডসে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২৮.১ ওভারে ২০১ (রয় ১৪, বেয়ারস্টো ২৮, সল্ট ১৭, রুট ১, মইন ৬, বাটলার ১৯, লিভিংস্টোন ৩৮, কারান ৩৫, উইলি ২১, রশিদ ১২, টপলি ১*; মহারাজ ৬-০-২৯-১, এনগিডি ৫-০-৩৯-০, নরকিয়া ৫.১-০-৫৩-২, প্রিটোরিয়াস ৬-০-৩৬-৪, শামসি ৬-০-৩৯-২)
দক্ষিণ আফ্রিকা: (২৯ ওভারে লক্ষ্য ২০২) ২০.৪ ওভারে ৮৩ (ডি কক ৫, মালান ০, ফন ডাসেন ০, মারক্রাম ০, ক্লাসেন ৩৩, মিলার ১২, প্রিটোরিয়াস ১৭, মহারাজ ১, নরকিয়া ৬, এনগিডি ০, শামসি ৫*; টপলি ৪-০-১৭-২, উইলি ৪-১-৯-১, কারান ২-০-৫-১, রশিদ ৬-১-২৯-৩, মইন ৪.৪-১-২২-২)
ফল: ইংল্যান্ড ১১৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্যাম কারান।