শেই হোপের সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বড় স্কোর গড়লেও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিয়াম লিভিংস্টোনের প্রথম সেঞ্চুরিতে দারুণ জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড।
Published : 03 Nov 2024, 12:09 PM
‘আমি এখন ক্রিকেট উপভোগ করছি। আর আমি যদি উপভোগ করি, সাধারণত খুব ভালো খেলি’-ম্যাচ শেষে মুখে হাসি নিয়ে বললেন লিয়াম লিভিংস্টোন। এটুকু অবশ্য না বললেও চলত। তার ব্যাটেই তো বার্তা ফুটে উঠেছে, কতটা উপভোগ তিনি করছেন! প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির স্বাদ তো পেয়েছেনই, দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে সমতায়ও ফিরিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। বিফলে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপের ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয়ে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয়ের আশা জাগিয়েছিল হোপের সেঞ্চুরিতে। কিন্তু সেখানেই বিজয় পতাকা উড়িয়ে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে জেতালেন লিভিংস্টোন।
অ্যান্টিগায় শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেট তোলে ৩২৮ রান। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হোপের ব্যাট থেকে আসে ১২৭ বলে ১১৭ রান।
রান তাড়ায় এক পর্যায়ে ইংল্যান্ড বেশ চাপে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ১৫ বল বাকি থাকতেই। ৫ চার ও ৯ ছক্কায় ৮৫ বলে ১২৪ রানে অপরাজিত থাকেন লিভিংস্টোন। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের শতরানের পাশে ফিফটি করেন ফিল সল্ট, জ্যাকব বেথেলে ও স্যাম কারান।
দুই দলের রান দেখে বোঝা কঠিন, উইকেটে কিছুটা অসম বাউন্স ছিল। আউটফিল্ড ছিল ভারী। এজন্যই হোপ ও লিভিংস্টোনের শতরানের ওজন আরও বেশি।
সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডকে ভালো শুরু এনে দেন সল্ট। তার সঙ্গী ওপেনার উইল জ্যাকস ফিরে যান ১১ বলে ১২ রান করে। তিনে নামা জর্ডান কক্স করেন স্রেফ চার। সল্টের সৌজন্যেই তবু রান ততক্ষণে উঠে যায় ৬৩।
তৃতীয় উইকেটে সল্ট ও বেথেল ইংল্যান্ডকে টেনে নেন কিছু দূর। ৮ চারে ৫৯ বলে ৫৯ করে শেষ হয় সল্টের ইনিংস।
তরুণ বেথেলের ব্যাটে তবু জিইয়ে থাকে ইংল্যান্ডের আশা। সপ্তম ওয়ানডে খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৫৭ বলে করেন ৫৫ রান।
বেথেল যখন বিদায় নেন, ২৮ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ১৬০। সেখান থেকে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেয় লিভিংস্টোন ও কারানের জুটি। দুজনের জুটিতে আসে ১০৭ বলে ১৪০ রান।
লিভিংস্টোনের ফিফটি আসে ৬০ বলে। এরপরই নিজের সেরা বিধ্বংসী চেহারায় আবির্ভুত হন তিনি। ফিফটি থেকে শতরানে পৌঁছ যান কেবল ১৭ বল খেলেই!
তার ফিফটিতে ছক্কা ছিল একটি। শতরানে যেতে ছক্কা মারেন আরও পাঁচটি, সেঞ্চুরির পর আরও তিনটি।
শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। লিভিংস্টোনের ব্যাটে তা চলে আসে নাগালে।
৭৫ রান থেকে জেডেন সিলসের এক ওভারে দুটি ছক্কা দুটি চারে শতরানের কাছে পৌঁছে যান লিভিংস্টোন। পরের ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ৭৭ বলে।
পরের বলেই কারান আউট হয়ে যান ৫২ বলে ৫২ করে। তবে লিভিংস্টোনকে ফেরানোর পথ পায়নি ক্যারিবিয়ানরা। শতরানের পর শামার জোসেফের এক ওভারে তিন ছক্কা এক চারে ম্যাচের সব উত্তেজনা শেষ করে দেন ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
ম্যাচের প্রথম ভাগে বল হাতেও ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল ভালো। আগের ম্যাচে শতরানের জুটি গড়া দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে এবার তারা ফেরাতে পারে দ্রুতই। ব্র্যান্ডন কিং দ্বিতীয় ওভারে আউট হন সাত রান করে। আগের দেই ইনিংসে ৬১ বলে সেঞ্চুরি ও ৬৯ বলে ৯৪ রান করা এভিন লুইস এবার বিদায় নেন চার রান করেই।
তৃতীয় উইকেটে কেসি কার্টিকে নিয়ে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন হোপ। ৭৭ বলে ৭১ রান করে কার্টির বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
পরের জুটিতে আরও গতিময় হয় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। ৫৭ বলে ৭৯ রান যোগ করেন হোপ ও শেরফেন রাদারফোর্ড।
৩৬ বলে ৫৪ রান করা রাদারফোর্ডকে ফিরিয়ে এই জুটি শেষ করেন লিভিংস্টোন।
এই নিয়ে টানা চার ওয়ানডে ইনিংসে ফিফটি করলেন রাদারফোর্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সাত ইনিংসে তার ফিফটি হলো পাঁচটি।
৬৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখা হোপ শতরান স্পর্শ করেন ১১৮ বলে। তার ৮ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস শেষ হয় ৪৭তম ওভারে।
শেষ দিকে শিমরন হেটমায়ার তিন ছক্কায় ১১ বলে করেন ২৪। শেষ ওভারে সাকিব মাহমুদকে তিন ছক্কাসহ ম্যাথু ফোর্ড অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ২৩ রান করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পৌঁছে যায় ৩২৮ রানে।
তখন সেটিকে জেতার মতো রান বলেই মনে হচ্ছিল। ম্যাচ শেষে শেই হোপ সেটিই বললেন। কিন্তু লিভিংস্টোনের মনে ছিল অন্য ভাবনা।
সিরিজের ফয়সালা হবে এখন শেষ ওয়ানডেতে, বুধবার ব্রিজটাউনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩২৮/৬ (কিং ৭, লুইস ৪, কার্টি ৭১, হোপ ১১৭, রাদারফোর্ড ৫৪, হেটমায়ার ২৪, চেইস ২০*, ফোর্ড ২৩*; আর্চার ৯-১-৪০-১, টার্নার ৬-০-৪২-২, সাকিব ৮-০-৫৬-০, রাশিদ ১০-০-৬২-২, লিভিংস্টোন ৭-০-৫৬-১, বেথেল ৩-০-২০-০, জ্যাকস ২-০-১৬-০, কারান ৩-০-১৭-০, মুজলি ২-০-১৭-০)।
ইংল্যান্ড: ৪৭.৩ ওভারে ৩২৯/৫ (সল্ট ৫৯, জ্যাকস ১২, কক্স ৪, বেথেল ৫৫, লিভিংস্টোন ১২৪*, কারান ৫২, মুজলি ৪*; ফোর্ড ৮.৩-০-৪৮-৩, সিলস ৮-০-৬৬-০, শামার জোসেফ ১০-০-৭২-১, মোটি ৯-০-৭১-০, রাদারফোর্ড ২-০-৯-০, চেইস ১০-০-৫৩-১)।
ফল: ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে দুটি শেষে ১-১ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিয়াম লিভিংস্টোন।