মেঘলা আকাশের নিচে ৪ ওভারের আগুনঝরা স্পেলে আয়ারল্যান্ডের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রিচার্ড এনগারাভা।
Published : 28 Jul 2024, 12:20 AM
‘চিভাঙ্গার সঙ্গে ম্যাককার্থির লড়াইটিই হয়তো এনভাগারাভাকে তাতিয়ে দিয়েছে’- বলছিলেন বেলফাস্ট টেস্টের ধারাভাষ্যকার। ব্যারি ম্যাককার্থির শর্ট বলে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার ফেরত আসেন তানাকা চিভাঙ্গা। তবু থামেনি ম্যাককার্থির বাউন্সার ঝড়। দশম ব্যাটসম্যানকে একের পর এক বাউন্সার দিতে থাকেন আইরিশ পেসার। যার একটি চিভাঙ্গার গায়েও আঘাত করে। তখন দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়।
এর কিছুক্ষণ পর বোলিংয়ে নামে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় বলেই শর্ট ডেলিভারিতে পিটার মুরকে ফেরান রিচার্ড এনগারাভা। এরপর আগুনঝরা স্পেলে তিনি ধস নামান আইরিশদের টপ অর্ডার। বাঁহাতি পেসারের তোপেই ঘরের মাঠে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় টালমাটাল আয়ারল্যান্ড।
বেলফাস্টের স্টরমন্টে তৃতীয় দিন শেষে পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছে স্বাগতিকদের। ১৫৮ রানের লক্ষ্যে মাত্র ৩৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা। বাকি ৫ উইকেট নিয়ে আরও ১২৫ রানের খোঁজে রোববার খেলতে নামবে অ্যান্ডি বালবার্নির দল।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে, প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে পিছিয়ে ছিল তারা। ডিয়ন মায়ার্স ৫৭ ও শন উইলিয়ামস ৪০ রান ছাড়া আর কেউ ত্রিশ রানও করতে পারেনি। পরে আইরিশ ব্যাটিংয়ে কাঁপন ধরিয়ে মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট নেন এনগারাভা।
প্রথম দুই দিনের মতো বৃষ্টির বাধা পড়েছে তৃতীয় দিনেও। শেষ সেশনের প্রকৃতির বাগড়ায় সব মিলিয়ে সারা দিনে খেলা হয়েছে ৭৫ ওভার। দিনের শেষভাগের ৮ ওভারেই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিজেদের পক্ষে টেনে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
দিনের শুরুতেই ভাগ্যের সহায়তা পায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে প্রিন্স মাসভাউরের ফিরতি ক্যাচ ছাড়েন ম্যাককার্থি। পরের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি মার্ক অ্যাডায়ার।
ইনিংসজুড়ে এমন ফিল্ডিং ব্যর্থতার মাশুল দিতে হয় আইরিশদের। অন্তত ছয়টি ক্যাচ তাদের হাত গলে বেরিয়ে যায়। এছাড়া বেশ কয়েকবার মিস ফিল্ডিংয়ে গুনতে হয় বাড়তি রান। তবু সুযোগ তেমন একটা কাজে লাগাতে পারেনি সফরকারীরা। হতাশাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দুইশর আগেই গুটিয়ে যায় তারা।
আম্পায়ারিং নিয়েও কিছুটা অসন্তোষ দেখা যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। ১৪তম ওভারে ম্যাককার্থির ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন মাসভাউরে। তবে রিপ্লে দেখে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, মাসভাউরের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বলটি হয়তো লেগেছিল তার প্যাডে। হতাশায় মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মাঠ ছাড়েন জিম্বাবুয়ে ওপেনার।
২৪তম ওভারে অ্যাডায়ারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে দেন ক্রেইগ আরভিন। বল আঘাত করে তার প্যাডে। জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ধারাভাষ্যকাররা বলতে থাকেন, হয়তো স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেত বল। মাসভাউরের মতোই কিছুটা ক্ষুদ্ধ অবস্থায় ফেরত যান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৮ রান যোগ করেন মায়ার্স ও উইলিয়ামস। এরপর আর গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো জুটি। টানা ২৩ ওভারের স্পেলে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নেন আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।
ইনিংসের ৬৬তম ওভারে ম্যাককার্থির বাউন্সারে মাঠ ছাড়েন চিভাঙ্গা। দুই ওভার পর নবম উইকেট পড়লে আবার মাঠে নামেন তিনি। পুনরায় বাউন্সার দিতে থাকেন ম্যাককার্থি। শেষ পর্যন্ত ম্যাকব্রাইনের বল ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে আউট হন চিভাঙ্গা।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের নায়ক মুর। এরপর নিয়মিত উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মুরের মতোই রানের খাতা খুলতে পারেননি কার্টিস ক্যাম্ফার ও হ্যারি টেক্টর।
পল স্টার্লিং পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করে টিকতে পারেননি। এনগারাভার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে কট বিহাইন্ড হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মাত্র ২১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড।
পরে বৃষ্টি নামলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগেই বন্ধ হয়ে যায় খেলা। আর বিপদ ঘটতে দেননি লরকান টাকার ও ম্যাকব্রাইন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২১০
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৫০
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১২/০) ৭১ ওভারে ১৯৭ (গুম্বি ২৪, মাসভাউরে ১২, মায়ার্স ৫৭, আরভিন ৭, উইলিয়ামস ৪০, বেনেট ১০, মাডান্ডে ১০, মুজারাবানি ০, এনগারাভা ১১, চিভাঙ্গা ৬, চাতারা ৪*; অ্যাডায়ার ১৫-১-৪২-২, ম্যাককার্থি ১৬-২-৩৩-১, ইয়াং ১০-২-৩৭-২, ক্যাম্ফার ২-০-১২-০, ম্যাকব্রাইন ২৩-৬-৩৮-৪, হামফ্রিজ ৫-০-২০-১)
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৫৮) ৮ ওভারে ৩৩/৫ (মুর ০, বালবার্নি ৪, ক্যাম্ফার ০, টেক্টর ০, স্টার্লিং ১০, টাকার ৯*, ম্যাকব্রাইন ৪*; মুজারাবানি ৪-০-১৬-১, এনগারাভা ৪-১-১২-৪)