৪৩ বছর বয়সী মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে মাত্র ৪ কোটি রুপিতেই ধরে রাখার সুযোগ পেল চেন্নাই সুপার কিংস।
Published : 29 Sep 2024, 10:56 AM
আইপিএলের মেগা নিলামের আগে চেন্নাই সুপার কিংসের মূল দুর্ভাবনা ছিল মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত পুরোনো নিয়ম ফিরে আসায় কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারকে ধরে রাখার পথ সুগম হলো দলটির জন্য। মাত্র ৪ কোটি রুপিতেই অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে ধরে রাখতে পারবে তারা।
আইপিএলের এবারের মেগা নিলামের আগে ক্রিকেটারদের ‘রিটেনশন’ বা ধরে রাখার নিয়ম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ধোনিকে ‘আনক্যাপড’ বা অভিষেক না হওয়া ক্রিকেটার হিসেবে ধরে রাখতে পারবে চেন্নাই।
৫৩৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ধোনিকে ‘আনক্যাপড’ ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা হয় নিয়মের একটি ধারায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচ খেলার বা ভারতীয় বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সবশেষ থাকার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে সেই ক্রিকেটারকে ‘অ্যানক্যাপড’ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। নিয়মটি প্রযোজ্য হবে শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য।
২০১৯ বিশ্বকাপের পর ভারতের হয়ে আর খেলেননি ধোনি।
২০০৮ সালে আইপিএলের শুরু থেকেই এই নিয়ম ছিল। ২০২১ সালে এটি বাতিল করা হয়। মূলত ধোনিকে ধরে রাখার ভাবনা মাথায় রেখেই আইপিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সভায় এই নিয়মটি ফিরিয়ে আনার জোর দাবি তুলেছিল চেন্নাই সুপার কিংস।
এখনও অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এটা ঘোষণা করা হয়নি। তবে শনিবার রাতে ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে ধরে রাখা ক্রিকেটারদের নিয়মাবলি পাঠানো হয়েছে। সেটি দেখেই খবর প্রকাশ করেছে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো।
প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বোচ্চ ছয় ক্রিকেটারকে ধরে রাখতে পারবে। এর মধ্যে ‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটার রাখা যাবে সর্বোচ্চ দুই জন। ভারতীয় ও বিদেশী মিলিয়ে ‘ক্যাপড’ বা অভিষেক হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে ধরে রাখা যাবে সর্বোচ্চ পাঁচ জন। যেটির মানে, অন্তত একজন ‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটার ধরে রাখতে হবেই।
এবারের মেগা নিলামে প্রতিটি দল ১২০ কোটি রুপি খরচ করতে পারবে। গতবারের চেয়ে যা ২০ কোটি রুপি বেশি।
ধরে রাখা ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে প্রথম তিনজন ‘ক্যাপড’ ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক ধরে নেওয়া হবে যথাক্রমে ১৮ কোটি, ১৪ কোটি ও ১১ কোটি রুপি। পরের দুইজনের ক্ষেত্রে হবে ১৮ কোটি ও ১৪ কোটি রুপি।
‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক হবে ৪ কোটি রুপি।
২০২২ আইপিএলের মেগা নিলামে ধোনিকে ১২ কোটি রুপিতে ধরে রেখেছিল চেন্নাই। এবার তারা ধরে রাখতে পারবে ৪ কোটি রুপিতে।
ধোনিকে নিয়ে চেন্নাইয়ের মূল ভাবনা ছিল এখানেই। আগামী আইপিএলে ধোনির বয়স হবে ৪৪ ছুঁইছুঁই। আগের মতো তিনি আর দলের মূল ব্যাটসম্যানদের একজন নন। শেষ দিকে ‘ফিনিশার’ হিসেবে গত আইপিএলেও তিনি ছিলেন কার্যকর। এছাড়া কিপার, ছায়া অধিনায়ক, ‘মেন্টর’ হিসেবে ও দলে সামগ্রিক প্রভাবে তার জুড়ি এখনও নেই ভারতীয় ক্রিকেটে।
তাকে ৪ কোটি রুপিতে রাখতে পারা তাই চেন্নাইয়ের জন্য বড় স্বস্তির। পুরোনো নিয়মটি ফিরে না এলে হয়তো তাকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে কঠিনভাবেই ভাবতে হতো চেন্নাইকে।
ধরে রাখা ক্রিকেটারদের যে পারিশ্রমিকের হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি পাঁচজন ‘ক্যাপড’ ও একজন ‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটার ধরে রাখলে নিলামের আগেই তাদের ১২০ কোটি রুপির ৭৯ কোটি খরচ হয়ে যাবে।
নিলামের আগে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ থেকে যাবে আগামী আইপিএলেও। যদিও এটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বেশ। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শার্মা থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, অলরাউন্ডার গড়ে বা বেড়ে ওঠার পথে অন্তরায় হচ্ছে এই ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার।’ তবে এটি বাতিল হচ্ছে না।
নিলামে ‘রাইট টু ম্যাচ’ (আরটিএম) নিয়মও ফিরে আসছে এবারের নিলামে। এই নিয়মে কোনো ক্রিকেটারের নিলাম যখন শেষ হবে, তখন চাইল ওই দামে তাকে নিয়ে নিতে পারবে তার পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০১৭ মেগা নিলামে এই নিয়ম রাখা হয়েছিল। পরে ২০২২ মেগা নিলামে তা বাতিল করা হয়।
এবার কলকাতা নাইট রাইডার্স, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দাবি ছিল এটি ফিরিয়ে আনার। ক্রিকেটাররা যদিও এই নিয়মটির বিরোধী। কারণ তাদের ধারণা, এতে প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক তারা পান না। তবে শেষ পর্যন্ত নিয়মে একটু পরিবর্তন এনে এটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
চোট পাওয়া ক্রিকেটারদের বদলি নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে আগামী আসর থেকে। এতদিন নিয়ম ছিল, কোনো চোটাক্রান্ত ক্রিকেটারের বদলি চাওয়া যাবে আসরে দলটির সপ্তম ম্যাচের আগ পর্যন্ত। এবার থেকে তা বাড়িয়ে দ্বাদশ ম্যাচ পর্যন্ত করা হয়েছে।