Published : 13 Dec 2023, 06:16 PM
ফুল টস বলটিকে অনায়াসেই ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে পাঠালেন আশিকুর রহমান। এগিয়ে গিয়ে আলিঙ্গনে জড়ালেন উইকেটে তার সঙ্গীকে। উদযাপনে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখা গেল না খুব একটা। তবে তার মুখে খেলে গেল চওড়া হাসি। সেখানে মিশে থাকল কাজ দারুণভাবে শেষ করার তৃপ্তি। শুধু সেঞ্চুরিই তো করেননি বাংলাদেশ যুব দলের এই ওপেনার, দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের ঠিকানায়ও।
আগের দুই ম্যাচে ৭১ ও অপরাজিত ৫৫ রানের দুটি কার্যকর ইনিংস খেলেছিলেন আশিকুর। তবে সেরাটা জমা রেখেছিলেন বুঝি গ্রুপের সবচেয়ে বড় ম্যাচের জন্যই। অপরাজিত এক সেঞ্চুরিতে জয় এনে দিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে।
এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ‘বি’ গ্রুপের তিন ম্যাচের সবকটি জিতে গ্রুপ সেরা হয়েই সেমি-ফাইনাল খেলবে তারা।
দুবাইয়ে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বাংলাদেশের পেস-স্পিনের যৌথ আক্রমণে লঙ্কানরা ৫০ ওভারে আটকে যায় ১৯৯ রানে। আশিকুরের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জিতে যায় ৫৫ বল বাকি রেখে।
১১ চার ও ২ ছক্কায় ১৩০ বলে ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন আশিকুর।
বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ থেকেই ছিটকে গেল লঙ্কানরা। এর আগে তারা হেরেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছেও।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার ৭ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করে ২০ রান, আরেক জন করেন ১৯। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে তাদের কাউকে ৩০ রানও করতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা।
৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটির পর বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধার বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন লঙ্কান ওপেনার পুলিন্দু পেরেরা (২৯ বলে ২৮)।
দ্বিতীয় উইকেটেও রাভিশান ডি সিলভা ও সিনেথ জায়াওয়ার্দেনা যোগ করেন ঠিক ৩৭ রানই। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি বল হাতে নিয়েই প্রথম বলে রাভিশানকে (২১) বোল্ড করে ভাঙেন এই জুটি। মাহফুজুরের পরের ওভারে স্লগ করে সীমানায় ধরা পড়েন লঙ্কান অধিনায়ক জায়াওয়ার্দেনে (২৫)।
এরপর আর কোনো জুটিই ছাড়াতে পারেনি শুরুর দুই জুটিকে। একের এক ব্যাটসম্যান থিতু হতে না হতেই তাদেরকে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের বোলাররা।
এক পর্যায়ে ১৩৩ রানে ৬ উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে লোয়ার অর্ডারদের দৃঢ়তায় রান যায় দুইশর কাছাকাছি।
৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার ওয়াসি সিদ্দিক। ভারতে গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনুশীলনে সহায়তা করার জন্য মুম্বাই থেকে শেষ পর্যন্ত দলের সঙ্গে ছিলেন এই লেগ স্পিনার।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই হারায় জিসান আলমকে। অনেক বাইরের বল দৃষ্টিকটূভাবে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে শূন্য রানে ফেরেন আগ্রাসী এই ওপেনার।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আশিকুর সেই ধাক্কা সামাল দেন চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েন দুজন। বাঁহাতি স্পিনার বিশ্ব লাহিরুকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে রিজওয়ান থামেন ৩২ রানে।
তৃতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন আশিকুর ও আরিফুল ইসলাম। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকা আরিফুল হঠাৎ লেগ স্পিনার মালশা থিরুপাথিকে স্লগ করতে গিয়ে আউট হন ক্যাচ দিয়ে। ১৮ রান করতে তিনি বল খেলেন ৪৪টি।
তবে বাংলাদেশ ততক্ষণে জয়ের পথে উঠে গেছে। ৬৪ বলে ফিফটি করেন আশিকুর। সেখানেই না থেমে দারুণ নির্ভরতায় এগিয়ে নেন দলকে। আহরার আমিন ক্রিজে গিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। এই দুজনের ৬০ রানের জুটিতেই প্রায় জয়ের কাছে পৌঁছে যায় দল। ১১৯ বলে শতরানে পা রাখেন আশিকুর।
২৩ বলে ২৩ রান করে আহরান আউট হয়ে যান শেষ দিকে স্লগ করতে গিয়ে। তবে আশিকুর দারুণ খেলে দলের জয় সঙ্গে নিয়েই ফেরেন।
সেমি-ফাইনালে শুক্রবার ‘এ’ গ্রুপের রানার্স আপ ভারতের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। একই দিনে আরেক সেমিতে ‘এ’ গ্রুপের সেরা পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের রানার্স আপ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯: ৫০ ওভারে ১৯৯/৯ (পুলিন্দু ২৮, জায়াওয়ারর্দেনা ২৫, লাহিরু ২৫, গামাগে ২৪, শানমুগানাথান ২১, রাভিশান ২১, কালুপাহানা ২০, রুভিশান ১৯*; মারুফ ৮-২-৩৪-২, বর্ষণ ৯-০-৪০-১, জীবন ১০-১-৩২-১, রিজওয়ান ২-০-১৫-০, ওয়াসি ১০-১-৩২-৩, মাহফুজুর ১০-০-৪০-২, আরিফুল ১-০-৩-০)
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ৪০.৫ ওভারে ২০৩/৪ (আশিকুর ১১৬*, জিসান ০, রিজওয়ান ৩২, আরিফুল ১৮, আহরার ২৩, জেমস ২*; সানকেথ ২/৫৬, থারপাথি ১/২২, লাহিরু ১/২৪)
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা মাচ: আশিকুর রহমান