বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা আঁচড় কেটেছে রেকর্ডে বইয়ে।
Published : 23 Nov 2024, 09:13 PM
কী অদ্ভুত বৈপরীত্য পার্থ টেস্টের প্রথম দুই দিনের খেলায়। প্রথম দিন দুই দল মিলিয়ে পড়েছিল ১৭ উইকেট, পরের দিন সেখানে উইকেট পড়ল স্রেফ ৩টি! ব্যক্তিগত রেকর্ড-অর্জন যেমন ধরা দিল, তেমনি আঁচড় ফেলল দলীয় রেকর্ডেও।
সেসবের কিছু তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্দশা
পার্থের অপ্টাস স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে ১০৪ রানে। ভারতের বিপক্ষে দেশের মাঠে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটি। ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে তারা অল আউট হয়েছিল ৮৩ রানে।
১৯৮৫ সালের পর দেশের মাঠে যেকোনো দলের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বনিম্ন এবং ভারতের বিপক্ষে দেশে-বাইরে মিলিয়ে তাদের চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর এটি।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৬ ব্যাটসম্যান মিলে করেন ৩৭ রান। গত ৪৬ বছরের মধ্যে দেশের মাঠে এক ইনিংসে তাদের প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের সর্বনিম্ন রান এটি। ১৯৭৮ সালে ব্রিজবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তাদের প্রথম ৬ জন মিলে করেছিল ২২ রান।
ভারতের গৌরব
প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অল আউট হয়েও ৪৬ রানের লিড পায় ভারত। আগে ব্যাট করে ১৫০ বা এর কম রান করে কোনো দলের পঞ্চম সর্বোচ্চ লিড এটি। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ লিড ইংল্যান্ডের ৭১ রানের, ১৮৮৮ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১১৩ রানে অল আউট হওয়ার পর ওই লিড পেয়েছিল ইংলিশরা।
আগে ব্যাট করে ১৫০ বা এর কম রান করে প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড পাওয়ার ঘটনা ছিল এতদিন দুটি। ২০০২ সালে হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানে অল আউট হওয়ার পরও ৫ রানের লিড পেয়েছিল তারা। ১৯৩৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর তারা লিড পেয়েছিল ১৩ রানের। ওই দুই ম্যাচেই অবশ্য হেরেছিল ভারত।
বুমরাহর অর্জন
প্রথম ইনিংসে ১৮ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ। এশিয়ার বাইরে এই নিয়ে ৯ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি, ভারতের বোলারদের মধ্যে যৌথভাবে যা সর্বোচ্চ।
৭৭ ইনিংসে ৯ বার এই স্বাদ পান সাবেক অলরাউন্ডার কাপিল দেব। তাকে বুমরাহ ছুঁয়ে ফেললেন ৫৫ ইনিংসেই। ৮ বার করে এই স্বাদ পেয়েছেন ভগবত চান্দ্রাশেখার, অনিল কুম্বলে ও ইশান্ত শার্মা।
বুমরাহর ৩০ রানে ৫ উইকেট ১৯৮৫ সালের পর ভারতীয় কোনো অধিনায়কের সেরা বোলিং। ওই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই অ্যাডিলেইডে ১০৬ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিল কাপিল।
এছাড়া ২০০৭ সালে মেলবোর্ন টেস্টে কুম্বলের পর ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া প্রথম ভারতীয় অধিনায়কও বুমরাহ।
জয়সওয়ালের বিশ্বরেকর্ড
প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের পর, পরের ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে ৯০ রানে অপরাজিত আছেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। এই ইনিংসের পথে ২টি ছক্কা মেরে একটি রেকর্ড গড়েছেন ভারতের তরুণ ওপেনার। টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ছক্কা এখন তারই। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে।
এই বছরে ২৩ ইনিংসে জয়সওয়ালের ছক্কা এখন ৩৪টি। ২০১৪ সালে ১৬ ইনিংসেই ৩৩ ছক্কা মেরে রেকর্ড গড়েছিলেন ম্যাককালাম।
এই দুজন ছাড়া এক বছরে ৩০ ছক্কাও নেই কারও। ২০২২ সালে ২৬ ইনিংসে ২৬ ছক্কা মেরে তিনে আছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস।
যৌথভাবে চারে আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ভিরেন্দার শেবাগ। ২০০৫ সালে গিলক্রিস্ট ২২ ইনিংসে ও ২০০৮ সালে শেবাগ ২৭ ইনিংসে মেরেছিলেন ২২টি করে ছক্কা।
গাভাস্কার-শ্রীকান্তের পরই জয়সওয়াল-রাহুল
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এটি।
১৯৮৬ সালে সিডনিতে প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন সুনিল গাভাস্কার ও কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত। তৃতীয় দিন পূর্বসূরিদের ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি জয়সওয়াল-রাহুল যুগলের সামনে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের দেড়শ রানের উদ্বোধনী জুটি আছে আর কেবল একটি। ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে দ্বিতীয় ইনিংসে চেতান চৌহানকে নিয়ে ১৬৫ রানের জুটি গড়েছিলেন গাভাস্কার।