জাতীয় ক্রিকেট লিগ
জয় দিয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগের এবারের আসর শেষ করল ঢাকা মেট্রো।
Published : 02 Dec 2024, 09:17 PM
আগের দিনের ইনিংসকে আরেকটু টেনে নিলেই মোহাম্মদ মিঠুন পেতেন তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। কিন্তু দৃষ্টি সীমানায় যখন কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি, বোল্ড হয়ে গেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার আক্ষেপের দিনে চমৎকার পারফরম্যান্সে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিলেন খুলনার সতীর্থ মেহেদি হাসান রানা।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের সপ্তম ও শেষ রাউন্ডে সোমবার খুলনার প্রথম ইনিংস থামে ২৪৪ রানে। পরে মেহেদি রানার আগুনে বোলিংয়ে রংপুরকে ১৩৩ রানে গুটিয়ে ১১১ রানের লিড নেয় তারা। দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা দিন শেষ করেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ রান নিয়ে।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ম্যাচের তৃতীয় দিন ৭ উইকেট ২৪০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা আর কেবল ৪ রান করতেই গুটিয়ে যায়। দিনের প্রথম ওভারে মেহেদি রানাকে ফিরিয়ে দেন মুকিদুল ইসলাম।
কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন আরিদুল ইসলামও। এতে শঙ্কায় পড়ে যায় ৮৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা মিঠুনের সেঞ্চুরি। পরে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিই বিদায় নেন ২ ছক্কা ও ১০ চারে ৯২ রান করে।
খুলনার বোলারদের সামনে তেমন কোনো জবাবই দিতে পারেননি রংপুরের ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের সৌজন্যে একশ ছাড়ায় দলটির রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৪ রান করেন ১০ নম্বরে নামা মুকিদুল।
অভিজ্ঞ নাঈম ইসলামকে এলবিডব্লিউ করে শিকার ধরা শুরু করেন মেহেদি রানা। পরে রিজওয়ান চৌধুরি, তানবীর হায়দার, আরিফুল হক, মোসাদ্দেককে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। বাঁহাতি এই পেসারের ষষ্ট ও সপ্তম শিকার নবিন ইসলাম ও মেহেদি হাসান।
৪০ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এনিয়ে তৃতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন মেহেদি রানা। তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৩০ রানে ৫ উইকেট। আসরে আগের রাউন্ডে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ইনিংসে পাঁচটিসহ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
খুলনা ১ম ইনিংস: ৭২.৪ ওভারে ২৪৪ (আগের দিন ২৪০/৭) (মিঠুন ৯২, মেহেদি রানা ৭, আরিদুল ০, আল আমিন ০*; মুকিদুল ২২-৫-৬৬-৪, মেহেদি ১৫.৪-৩-৪১-১, আরিফুল ১২-৪-৩২-২, নবিন ৫-০-১৭-২, মামুন ২-০-২২-০, নজরুল ৬-০-২২-০, রিজওয়ান ৯-২-৩০-১, নাঈম ১-০-৩-০)
রংপুর ১ম ইনিংস: ৪৯.৪ ওভারে ১৩৩ (রিজওয়ান ১০, খালিদ ০, মামুন ০, নাঈম ৩, মোসাদ্দেক ১৭, তানবির ০, আরিফুল ৬, নবীন ২২, নজরুল ১৯, মুকিদুল ২৪*, মেহেদি ০; আল আমিন ১৪-৫-২১-১, মাসুম ১২-৫-২১-১, মেহেদি রানা ১৩.৪-৩-৩১-৭, আরিদুল ৭-২-২১-০, পারভেজ ৩-০-৮-১)
খুলনা ২য় ইনিংস: ২ ওভারে ৬/০ (এনামুল ২*, অমিত ৪*; মুকিদুল ১-০-৫-০, মেহেদি ১-০-১-০)
জয় দিয়ে আসর শেষ ঢাকা মেট্রোর
প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয়ভাগেও বল হাতে আলো ছড়ালেন আরিফ আহমেদ। চমৎকার বোলিংয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে লক্ষ্যটা দেড়শর নিচে রাখতে বড় অবদান রাখলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। পরে ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে জয় দিয়ে এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগ শেষ করল ঢাকা মেট্রো।
চট্টগ্রাম বিভাগকে সোমবার ৫ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা মেট্রো। আসরে এটি তাদের তৃতীয় জয়।
৫ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে খেলতে নামা চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ইনিংস ২৪৬ রানে থামিয়ে দেয় ঢাকা মেট্রো। ১৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাদের।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ রানে ৫ উইকেট নেন আরিফ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এনিয়ে চতুর্থবার পেলেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ। প্রথম ইনিংসে ৪ শিকার ধরা এই স্পিনারই জেতেন ম্যাচ-সেরার পুরস্কার।
রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে এদিন ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ইনিংস টেকেনি এক সেশনও। আগের দিন ২ উইকেট নেওয়া আরিফ আরও তিনটি নিয়ে আড়াইশর আগে গুটিয়ে দেন প্রতিপক্ষকে।
চট্টগ্রামের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬ চারে ৬২ রান করেন নাঈম হাসান।
রান তাড়ায় আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন ঢাকা মেট্রো ওপেনার নাঈম শেখ। ৬ চারে ৪২ রান করেন আইচ মোল্লা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ১৬০
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ২৬৮
চট্টগ্রাম ২য় ইনিংস: ৬৯.২ ওভারে ২৪৬ (আগের দিন ১৭৩/৬) (নাঈম ৬২, শরিফ ১৫, আশরাফুল ২৮*, ইফরান ৪, এনামুল ৪; আবু হায়দার ১৮-৩-৪৮-৪, মেহেদি ৮-১-২৩-০, রকিবুল ১১-০-৪৭-০, আরিফ ২১.২-১-৮০-৪, আল আমিন ৩-০-১৪-০, আনিসুল ২-০-৮-০, আইচ ৬-১-১৮-০)
ঢাকা মেট্রো ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩৯) ২৯.৫ ওভারে ১৪১/৫ (আনিসুল ১৯, নাঈম স্খে ৩৫, আইচ ৪২, আইয়ুব ৭, শামসুর ২১, তাহজিবুল ৪*, আল আমিন ৫*; নাঈম ১৫-১-৫৬-৩, আশরাফুল ৫.৫-০-৩৯-১, ইফরান ৪-০-২৫-০, এনামুল ৫-১-১৪-১)
ফল: ঢাকা মেট্রো ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আরিফ আহেমদ
নিহাদ-শফিকুলের দ্যুতিতে জয়ের সুবাস পাচ্ছে রাজশাহী
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ৩ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা রাজশাহীর দ্বিতীয় ইনিংসে থামে ১৮৬ রানে। প্রথম ইনিংসের ১৪ রানের লিড মিলিয়ে সিলেটকে তারা ছুঁড়ে দেয় ২০১ রানের লক্ষ্য। নিহাদ উজ জামান ও শফিকুল ইসলামের চমৎকার বোলিংয়ে এখন জয়ের সুবাস পাচ্ছে দলটি।
৮ উইকেটে ১৪২ নিয়ে সোমবার দিন শেষ করেছে সিলেট। জয়ের পাল্লা ভারি রাজশাহীর দিকে। ম্যাচটি জিততে শেষ দিনে তাদের প্রয়োজন কেবল দুই উইকেট। এরই মধ্যে শিরোপা নিশ্চিত করা সিলেটের চাই ৫৯ রান।
১ রান নিয়ে খেলতে নামা নিহাদ করেন ৭ চারে ৪৩ রান। ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৪ রান করেন প্রিতম কুমার।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের বিদায়ী ম্যাচে শেষবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে ফেরেন ফরহাদ রেজা।
৬ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় রাজশাহী।
সিলেটের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন সফর আলি, নাবিল সামাদ ও তোফায়েল আহমেদ।
রান তাড়ায় নামা সিলেটের টপ অর্ডার এলেমেলো করে দেন পেসার শফিকুল। প্রতিপক্ষের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জনই তার শিকার। পরে মিডল অর্ডারে ছোবল হানেন ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো নিহাদ। ৪ উইকেট নিয়ে দিন শেষ করেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
সিলেটের হয়ে প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা অমিত হাসান এবার করেন ৮ চারে ৭১ রান। এবারের জাতীয় লিগে ১২ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭৮৪ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ২২৬
সিলেট ১ম ইনিংস: ২১২
রাজশাহী ২য় ইনিংস: ৫৫.৩ ওভারে ১৮৬ (আগের দিন ৭০/৩) (নিহাদউজ্জামান ৪৩, শাকির ০, প্রিতম ৪৪, সাব্বির ১২, ফরহাদ ০, কামরান ০, শফিকুল ০, আসাদুজ্জাম্ন ০*; সফর ১২-১-৩৭-৩, নাবিল ১৮.৩-৩-৪৫-৩, তোফায়েল ১৫-১-৫০-৩, নাঈম আহমেদ ১০-৩-৩০-১)
সিলেট ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০১) ৪১ ওভারে ১৪২/৮ (পিনাক ৩০, তৌহিদ ১, মুবিন ০, অমিত ৭১, তৌফিক ৩০, আসাদউল্লাহ ০, তোফায়েল ৩, নাঈম ২, সফর ৩*, নাবিল ২*; শফিকুল ১২-০-৪৭-৩, নিহাদ ১৩-৩-২৪-৪, আসাদুজ্জামান ৪-০-১৯-০, ওয়াসি ২-০-১৪-০, মেহেরব ৮-৪-২৩-১, সাব্বির ২-০-১৫-০)
ফজলে মাহমুদ ও মইনুলের ফিফটি
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে সোমবার ৯ উইকেট ৩১০ রান করে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ঢাকা। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ফজলে মাহমুদ ও মইনুল ইসলামের ফিফটিতে ৫ উইকেটে ২০৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বরিশাল। এগিয়ে আছে তারা ১৮৬ রানে।
৮ উইকেটে ৩০৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা ঢাকা দিনের চতুর্থ ওভারে ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। ২১ রানের লিড পায় তারা।
পরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের দুই ওপেনার বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন ফজলে মাহমুদ ও মইনুল। তাদের জুটিতে আসে ৫১ রান।
৬ চারে ৫০ রান করেন ফজলে মাহমুদ। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৬ রান আসে মইনুলের ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
বরিশাল ১ম ইনিংস: ২৮৯
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৮৯.৩ ওভারে ৩১০/৯ ডিক্লে. (আগের দিন ৩০৩/৮) (সুমন ৪২, এনামুল ২২*; তানভির ১৮-৩-৫৯-১, মোজাম্মেল ১৬-২-৬৮-২, রুয়েল ১৭.৩-২-৭২-২, সালমান ২-০-১২-০, মইনুল ৮-১-১৮-১, সোহাগ ১৫-৪-৪৭-১, মইন ১১-৩-২২-১, ফজলে মাহমুদ ১-০-৪-০, ইফতেখার ১-১-০-০)
বরিশাল ২য় ইনিংস: ৮৪ ওভারে ২০৭/৫ (মজিদ ১৪, ইফতিখার ২৩, ফজলে মাহমুদ ৫০, মইনুল ৫৬, সালমান ১৬, মইন ৩০*, রুয়েল ০*; সুমন ৯-৩-২৩-০, সাকিল ১১-৪-২৭-১, এনামুল ৯-৩-৩৭-২, মোসাদ্দেক ২০-৮-২৭-০, মাহফুজুর ২০-৪-৪৪-১, আরিফুল ৬-৩-১৩-০, তাইবুর ৯-২-২১-১)